Advertisment

করোনার কারণে লকডাউন উঠে গেলে কোন কোন কারখানা খোলা প্রয়োজন?

সবচেয়ে বেশি কারখানা রয়েছে গুজরাটে। কোভিড ১৯ নিশ্চিত সংক্রমণের তালিকায় এ রাজ্য ১১ নম্বরে। সংক্রমিতের তালিকায় ৩ নম্বরে থাকা দিল্লি কারখানার তালিকায় প্রথম কুড়িতেই নেই।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

মুম্বইয়ের ভিওয়ান্দি এলাকায় কারখানায় আটকে পড়া শ্রমিক (ছবি- দীপক জোশী)

করোনা অতিমারী আটকাতে দেশের ২১ দিনের লক ডাউন তৃতীয় সপ্তাহে পড়ল। দুটো বিষয় পরিষ্কার।

Advertisment

প্রথম, ১৪ এপ্রিলের পর উৎপাদন ও চলাচল ধীরে ধীরে শুরু হবে। প্রধানমন্ত্রী মোদীর কথাতেই সে ইঙ্গিত মিলেছে।

দ্বিতীয়ত, সরকারের লক্ষ্য থাকবে জোগানের দিকে, বিশেষত আবশ্যক পণ্যসামগ্রী পরিবহণ নিয়ে, কিন্তু এবার জোগান শৃঙ্খলের প্রারম্ভিক উৎস যে উৎপাদন- সে দিকটিতেও খেয়াল রাখতে হবে।

কোম্পানি ডিপোয়, ডিস্ট্রিবিউটর ও খুচরো ব্যবসায়ীদের কাছে যে মজুত পণ্য রয়েছে, তা ফুরিয়ে যাবে- ফলে উৎপাদন প্রক্রিয়া চালু রাখা জরুরি হয়ে পড়বে। প্রশ্ন হল, সংক্রমণের অনিয়ন্ত্রিত ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি আটকাতে কী ধরনের উৎপাদনের অনুমতি দেওয়া উচিত?

দু লক্ষ কারখানা

ন্যাশনাল স্যাম্পল সার্ভে দফতরের শিল্প সম্পর্কিত বার্ষিক সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে বিদ্যুৎ সম্পর্কিত রয়েছে এমন উৎপাদন সংস্থায় ১০ লক্ষ মানুষ কাজ করেন এবং বিদ্যুতের সহায়তায় কাজ করেন এমন শিল্পে কাজ করেন আরও প্রায় ২০ লক্ষ।

এগুলি সবই ১৯৪৮ সালের কারখানা আইনে নথিভুক্ত- তবে মুম্বইয়ের ধারাভির চামড়ার বেল্ট তৈরি বা দিল্লির গান্ধীনগরের পোশাক প্রস্তুতকারী সংস্থা এ তালিকায় নেই। এরা ছাড়া বাকিদের উপর সামাজিক দূরত্ব বিধি কার্যকর থাকতে পারে এবং তা মানা হচ্ছে কিনা তার দেখভাল করা যেতে পারে। ২০১৭-১৮ সালের হিসেব অনুসারে ভারতে মোট কারখানার সংখ্যা ১,৯৫,৫৮৪। এখানে কাজ করেন ১.৫৬ কোটি মানুষ এবং তাঁদের উৎপাদিত পণ্যের মোট মূল্য ৮০.৭২ লক্ষ কোটি।

উৎপাদিত পণ্য এবং রোগের প্রাদুর্ভাব সম্পর্কিত কিছু তথ্যের দিকে তাকানো যাক।

সবচেয়ে বেশি কারখানা রয়েছে গুজরাটে। কোভিড ১৯ নিশ্চিত সংক্রমণের তালিকায় এ রাজ্য ১১ নম্বরে। সংক্রমিতের তালিকায় ৩ নম্বরে থাকা দিল্লি কারখানার তালিকায় প্রথম কুড়িতেই নেই। করোনা সংক্রমিতের তালিকায় ৪ নম্বরে রয়েছে তেলেঙ্গানা, ৫ নম্বরে কেরালা। কারখানার হিসেবে এ দুই রাজ্য যথাক্রমে ১৩ ও ১৫ নম্বরে।

জেলাওয়ারি তালিকা থেকে আরও কিছু বিষয় স্পষ্ট হচ্ছে। স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রকের দেওয়া তথ্য অনুসারে ভারতের ৭০০-র বেশি জেলার মধ্যে ১৪৬টি জেলার পাঁচজনের বেশি মানুষের মধ্যে করোনা পজিটিভের লক্ষণ পাওয়া গিয়েছে। এই ১৪৬টি জেলায় ৩২৬৬ জন বা মোট করোনাক্রান্তের ৮০.৩ শতাংশের বাস। জেলা পর্যায় থেকে এই খবর পাওয়া গিয়েছে।

বেশ কিছু শিল্পকেন্দ্র, যেমন তামিল নাড়ুর তিরুপপুর এবং শ্রীপেরুমবুদুর-ওরগাদাম, গুজরাটের জামনগর, ভারুচ, এবং মেহসানা, মহারাষ্ট্রের রায়গড় ও ঔরঙ্গাবাদ, ছত্তিসগড়ের রায়গড় এবং কোরবা, উত্তরাখণ্ডের রুদ্রপুর, হিমাচল প্রদেশের বাড্ডি অথবা কেন্দ্রশাসিত সিলভাসা ও দমনে খুবই স্বল্প সংখ্যক সংক্রমণ নথিভুক্ত হয়েছে।

 অত্যাবশকীয় কি না

শিল্প সম্পর্কিত বার্ষিক সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে নথিভু্ক্ত উৎপাদন শিল্প থেকে আগত ৮০.৭২ লক্ষ কোটি এবং এর ১.৫৬ কোটি কর্মীর ৭২.৪১ শতাংশ সরকারি ও বেসরকারি কর্পোরেট সংস্থার। বাকিটুকু ব্যক্তিগত বা অংশীদারি সংস্থার। প্রথমোক্ত ক্ষেত্রগুলিতেও সামাজিক দূরত্বের নীতি লাগু করার পথ পরিষ্কার। বিশেষত কান্ডলা, মুন্দ্রা ও শ্রী সিটিতে অবস্থিত বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলি অপেক্ষাকৃত বিচ্ছিন্ন হবার ফলে সে রাস্তা আরও সুগম।

সামাজিক দূরত্ব নীতি যদি সংগঠিত উৎপাদনক্ষেত্রে কঠোরভাবে লাগু হয়, তাহলে কেবলমাত্র অত্যাবশকীয় পণ্যের উৎপাদনের জন্যই বিধিনিষেধ শিথিল করবার কথা উঠবে না। এ ধরনের পণ্যের সংকীর্ণ সংজ্ঞা হল খাদ্য ও ওষুধ, কিন্তু বস্ত্রপণ্য তার আওতায় পড়ে না। পূর্বোল্লিখিত উৎসের পরিসংখ্যানেই বলা হয়েছে, বস্ত্রপণ্যের ২৮.৬৮ লক্ষ মানুষ কর্মরত, খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন সংস্থায় কাজ করেন ১৭.৭২ লক্ষের কিছু বেশি এবং ওষুধ উৎপাদন ক্ষেত্রে কর্মরত ৭.৪০ লক্ষ।

অন্য কিছু বৃহৎ নিয়োগকারী সংস্থার পরিসংখ্যানের দিকে তাকানো যাক। এরা সকলে সে অর্থে আবশ্যকীয় পণ্য উৎপাদন করে না। বেসিক মেটাল (১০.৩৩ লক্ষ মানুষ কর্মরত), অন্যান্য অধাতব খনিজ দ্রব্য উৎপাদন (১০.৯১ লক্ষ), মোটরগাড়ি ও ট্রেলার (১০.১৮ লক্ষ), প্লাস্টিক ও রাবারজাত দ্রব্য (৭.১৩ লক্ষ), এবং বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম (৫.৯৮ লক্ষ)।

 আগামী চ্যালেঞ্জ

বর্তমানে কয়লাখনি, তৈল সংশোধনাগার, সার, ওষুধ এবং এসব তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় ব্লাস্ট ফার্নেস বা অ্যালুমিনিয়াম গলানোর ক্ষেত্র ছাড়া বাকি সবই বন্ধ। লকডাউন বিধিনিষেধ তুলে নিলেও ফের শুরু করা সহজ হবে না। সবচেয়ে বড় সমস্যা হবে শ্রমিক ও ট্রাক।

উৎপাদনের জন্যই শুধু শ্রমিক প্রয়োজন নয়, পণ্য লোড করা, পাঠানো এবং আনলোড করবার জন্যও শ্রমিক প্রয়োজন। রেলওয়ের মাধ্যমে পণ্য পাঠানো যেতে পারে, কিন্তু উৎপাদনস্থল থেকে রেলের রেক পর্যন্ত মাল নিয়ে যাবার জন্যও ট্রাক লাগবে। ১৪ এপ্রিলের পর অপেক্ষাকৃত বৃহৎ উৎপাদন সংস্থাগুলি পের খোলবার ইহ্গিত পাওয়া গেলে শ্রমিকরা ফের জড়ো হবার কিছুটা সময় হাতে পেতেন, অন্যান্য লজিস্টিকাল সম্পদের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। সেক্ষেত্রে কারখানাগুলি স্বল্প পরিমাণে হলেও উৎপাদন শুরু করতে পারত।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন

coronavirus
Advertisment