চিন করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঘটনা অনেকটাই কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে। সংক্রমণ সংখ্যা বা মৃত্যুর সংখ্যা - কোনওটাতেই সে দেশ আর সবচেয়ে ওপরে নেই। সকলের চোখ এখন আগামী কয়েক সপ্তাহের দিকে- যখন বিভিন্ন প্রদেশে দু মাস ধরে চলা লকডাউন ক্রমে কমিয়ে আনা হবে।
উহান ছিল চিনের সংক্রমণ কেন্দ্র। সেখান থেকে লকডাউন প্রক্রিয়া তুলে নেওয়ার কথা আগামী ৮ এপ্রিল। কিন্তু তার মানে এই নয় যে করোনার বিরুদ্ধে চিনের লড়াই শেষ হয়ে গিয়েছে, বরং বিশেষজ্ঞরা বলছেন বিধিনিষেধ তুলে নেওয়া হলে ফের সংক্রমণ মাথা চাড়া দিচ্ছে কিনা সে দিকে নজর রাখতে হবে।
লকডাউন প্রত্যাহারের পর কী করতে হবে, গবেষণা যা বলছে-
লকডাউন প্রত্যাহারের পর চিন কী পদ্ধতি নেয়, সেদিকে তাকিয়ে রয়েছে সারা বিশ্ব- বিশেষ করে আমেরিকা ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশ, যেগুলি বর্তমানে আন্তর্জাতিক মহামারীর কেন্দ্র হয়ে উঠেছে।
চিনের বাসিন্দারা ক্রমশ স্বাভাবিক জীবনযাপনে ফিরে আসতে শুরু করেছেন, এখন দেখার যে সেখানে কোভিড ১৯ রোগীর সংখ্যা বাড়ছে কিনা। তেমনটা হলে চিনকে দ্বিতীয়বার লক ডাউনের রাস্তায় যেতে হতে পারে।
নেচার পত্রিকায় এক প্রবন্ধে বলা হয়েছে যদি জনসংখ্যার অধিকাংশ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হন, তাহলে সেই জনসমাজে গড়ে ওঠা গোষ্ঠীপ্রতিরোধের কারণেই ওই ভাইরাস দ্বিতীয়বার তত শক্তিশালী হয়ে ফিরে আসতে পারে না।
কিন্তু তেমনটা না-ও হতে পারে। যদি উহানের উদাহরণই ধরা যায়, চিনের কোভিড ১৯ রোগীদের মধ্যে অধিকাংশই যেখানকার বাসিন্দা, সে প্রদেশে অধিকাংশ মানুষই সংক্রমিতই নন। ফলে ভাইরাস যদি ফিরে আসে, তাহলে ঝুঁকিপ্রবণ জনসংখ্যা যথেষ্ট বেশি।
নেচার পত্রিকার প্রবন্ধে বলা হয়েছে, উহানে সংক্রমিত ও প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন মানুষের সংখ্যা জনসংখ্যার ১০ শতাংশের কম।
ফলে কেন্দ্রে ও বিভিন্ন রাজ্যে সরকার যখন স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে, ক্রমে বিধিনিষেধ শিথিল করবার কথা উঠেছে, তখন নজরদারি টেস্টিং ও সংস্রব চিহ্নিত করার কাজ চালাতে হবে।
লন্ডনের ইমপিরিয়াল কলেজের কোভিড ১৯ রেসপন্স টিম এক গবেষণায় দেখাচ্ছে ১১টি ইউরোপিয় দেশ (ব্রিটেন, নরওয়ে, স্পেন, ইতালি, ডেনমার্ক, ফ্রান্স, অস্ট্রিয়া, বেলজিয়াম, নরওয়ে, সুইজারল্যান্ড ও জার্মানি)-এ কঠোরভাবে সামাজিক দূরত্ব নীতি অবলম্বন করবার মাধ্যমে কোভিড ১৯ সংক্রমিত ব্যক্তির অন্যের সংস্পর্শে যাবার অনুপাত অনেকটাই কমে এসেছে।
সরকারি হস্তক্ষেপ জারি থাকলে সংক্রমণের সংখ্যা অনেক নিচে নেমে আসবে বলে মত প্রকাশ করেছেন গবেষকরা।
এই গবেষণায় বলা হয়েছে মহামারী একটি নির্দিষ্ট দেশে কোন সময়ে বাড়তে শুরু করেছে, তার প্রেক্ষিতে পদক্ষেপের সময় বিবেচনা করা উচিত। মাথায় রাখতে হবে মোকাবিলায় কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে তাও। যে ১১টি দেশ নিয়ে গবেষণা হয়েছে, তার মধ্যে ইতালিতে এই নীতি প্রথম কার্যকর হয়।
ইমপিরিয়াল কলেজের গবেষকরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে এই দেশগুলিতে সংক্রমণের সব ঘটনা নথিভু্ক্ত হচ্ছে না কারণ পরীক্ষা হচ্ছে কেবলমাত্র হাসপাতালে, কমিউনিটির মধ্যে সংক্রমণের কোনও চিহ্নই নেই। তাঁদের অনুমান, জার্মানিতে ৬ লক্ষ মানুষ সংক্রমিত, কিন্তু পরিসংখ্যান বলছে সংখ্যাটা ৭৪ হাজার।
কোনওভাবেই এই বাড়তি সংখ্যাও জনসাধারণের অর্ধেকের বেশি নয়।
অর্থাৎ এ দেশগুলিতে এখনও গোষ্ঠী প্রতিরোধ গড়ে ওঠেনি, অর্থাৎ বিধিনিষেধ তুলে নিলে ভাইরাস ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়বে।
এদিকে নেচার পত্রিকাকে হংকং বিশ্ববিদ্যালয়ের এপিডেমিওলজিস্ট বেন কাওলিং বলেছেন, চিন একদিকে যেমন সামাজিক দূরত্ববিধি কার্যকর করেছে, তেমনই ব্যাপকভাবে টেস্টিং করেছে। এই পর্যায়ে নতুন হাসপাতাল বানানো হয়েছে, সরকারি আধিকারিকরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে জ্বর পরীক্ষা করেছেন। কাওলিংকে উদ্ধৃত করেছে নেচার পত্রিকা। তিনি বলেছেন, “লোকে চিনকে অনুসরণ করছে বটে, কিন্তু পুরোটা করছে না।”