Advertisment

করোনাভাইরাসের জন্যই ভারতকে বদলাতে হবে- মণীশ সাভারওয়াল

এমএসএমই শিশু ও বামন, শিশু ও বামন দুইই আকারে ছোট। শিশুর বৃদ্ধি হবে, বামন সে অবস্থাতেই থাকবে।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

টিমলিজ সার্ভিসেস সংস্থার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সেন্ট্রাল বোর্ডের ডিরেক্টর মণীশ সাভারওয়াল কথা বলেছেন লকডাউন, আনলকডাউন ও চাকরি সম্পর্কে।

Advertisment

শিল্প, কারখানা, উৎপাদন ও পরিষেবা কীভাবে ফের শুরু হতে পারে

আমার ধারণা মানুষের অজানা সম্পর্কে এখন শঙ্কিত থাকা উচিত, কারণ আমাদের কোনও রিমডেলিং হয় না। আমরা জানি না যে আমরা ভাইরাস প্রকোপের শুরুতে আছি, নাকি মাঝে, নাকি শেষে। ফলে বাস্তব হল অনিশ্চয়তা রয়েছে, রয়েছে ঝুঁকিও। ঝুঁকির মধ্যে থেকেই আমরা সবাই কাজ করছি, ফলে আমরা বিভিন্ন সম্ভাবনার কথা ভাবতে পারি।

করোনা একটা অনিশ্চয়তা, আমরা জানি না ভাইরাস কখন আসবে... কিন্তু আমি এটা জানি যে আমরা কোনওদিনই ঝঁকিকে নিশ্চিহ্ন করতে পারব না, আমাদের একে ম্যানেজ করতে হবে এবং একে সামলাতেও হবে। সকলের জন্য লকডাউন ১৫ দিন বা একমাস চলতে পারে, কিন্তু একটা সময়ে তাকে শেষ করতে হবে কারণ আমরা সকলে একই ঝড়ের মধ্যে থাকলেও একই নৌকোয় নেই। একটা কোম্পানির কত ঋণ, তার ক্লায়েন্টরা কীরকম, কোম্পানির অবস্থা কী, এসব কিছু নিয়েই একটা কোম্পানিকেমানিয়ে নিতে হবে।

আরও পড়ুন, কত পরিযায়ী শ্রমিক বাস্তুচ্যুত হলেন এই লকডাউনে?

পরিসংখ্যানবিদদের ২৭ শতাংশ বেরোজগারির ধারণার সঙ্গে আমি সম্পূর্ণ দ্বিমত। এটা অনেকটা রবিবার বিকেলে বেকারির পরিমাণ ৭৫ শতাংশ বলার মত - রবিবার কেউ অফিস যায় না, রবিবার বিকেলে অফিস বন্ধ থাকে। সুতরাং লকডাউনের সময়ে এরকম কোনও হিসেব দেওয়ার অর্থ হচ্ছে হাত দেখা বা অ্যাসট্রোলজির মত, এর সঙ্গে আমাদের পলিসি তৈরির কোনও সম্পর্ক নেই।

 কাজের খোঁজ করে বেড়াচ্ছেন রাগী যুবক-যুবতী,  ভারত কি ফের সে পরিস্থিতিতে ফিরবে

স্বাধীনতার সময় থেকে ভারতের পুঁজি শ্রমিকহীনতায় ভুগেছে, আমাদের শ্রমিকরা পুঁজিহীনতার প্রতিবন্ধকতায় থেকেছেন। ১৯৯১ সাল থেকে পরিস্থিতি পাল্টাতে শুরু করে। কিন্তু আমাদের অনেক পূর্বশর্ত রয়েছে... গত ২০ বছর ধরে আমার মনে হয় আমরা উন্নয়ন নিয়ে আগেভাগে সেলিব্রেশন শুরু করে দিয়েছি। আমাদের ৪৫ শতাংশ শ্রমশক্তি এখনও কৃষিক্ষেত্রে নিযুক্ত এবং জিডিপি-তে তাঁদের অবদান মাত্র ১৪ শতাংশ।

করোনাভাইরাস আমাদের মনে করিয়ে দিল মাথা পিছু জিডিপি নাগরিকদের কাছে মোট জিডিপির চেয়ে বেশি প্রয়োজনীয়। আমরা বহুদিন ধরে জিডিপি নিয়ে সেলিব্রেট করছি। আমরা ২০১৮ সালে ব্রিটেনকে ছাড়িয়েছিস ২০১৯-এ ছাড়িয়েছি ফ্রান্সতে, পরের কয়েক বছরে আমরা জাপান ও জার্মানিকেও ছাড়াব, আমাদের সামনে থাকবে কেবল আমেরিকা আর চিন। কিন্তু মাথা পিছু জিডিপিতে আমাদের চেয়ে এগিয়ে ১৩৮টি দেশ এবং মাথা পিছু জিডিপি আমাদের তরুণ তরুণীদের ক্রোধের কারণ হবেই।

সংগঠিত হওয়া, শিল্পায়ন, আর্থিক দিক, শহরায়ন এবং দক্ষতা সবই ভারতে অপর্যাপ্ত। এগুলো করোনাভাইরাসের কারণ হয়নি, কিন্তু আশা করা যায় করোনাভাইরাস এমন পরিস্থিতি তৈরি করবে যাতে রাজনৈতিক অর্থনীতি এর পরিবর্তনে মন দেয়। করোনাভাইরাস মানুষের জীবনে ঘটছে কিন্তু আশা করা যায় করোনাভাইরাস এমন পরিস্থিতি তৈরি করবে যাতে ভারতের নিজেকে পরিবর্তন করা ছাড়া আর কোনও উপায় রইবে না।

উৎপাদকরা বলছেন শ্রমিকের কমতি রয়েছে কিন্তু একই সঙ্গে চাহিদা নেই বলে লোক নিয়োগ হচ্ছে না

লকডাউন পুরোপুরি প্রত্যাহৃত হওয়ার পরবর্তী ১২ মাসের দিকে আমাদের লক্ষ্য রাকতে হবে- কী ধরনের বৃদ্ধি হার ঘটবে দেশে? আমার মনে হয় না নিয়োকারীদের মূল সমস্য এখন শ্রমিক। আমরা পরিযায়ী নিয়ে আলাদা আলোচনা করতে পারি, কিন্তু কোম্পানিগুলির মূল সমস্যা এখন খদ্দের ফিরে পাওয়া এবং লকডাউন শেষ হওয়া।

সাপ্লাই আর ডিস্ট্রিবিউশন চেন যেহেতু রেড-গ্রিন জোন মেনে চলে না, ফলে আমার বিশ্বাস লকডাউন সম্পূর্ণ প্রত্যাহৃত হওয়ার ১২ মাস পর আমরা ৪-৬ শতাংশ বৃদ্ধি হারের ট্র্যাজেক্টরিতে পৌঁছতে পারব।

ফলে আমাদের নজর ২১ সালের অর্থবর্ষ থেকে সরিয়ে লকডাউন পরবর্তী ১২ মাসে নিয়ে যেতে হবে। আমার বিশ্বাস আমরা বৃদ্ধির ট্র্যাজেক্টরিতে ফিরতে পারব এবং আমি আশা করি ভারতকে পিছনে টেনে রেখেছে এমন বেশ কিছু কাঠামোগত বাধা আমরা দুর করতে পারব।

আরও পড়ুন, লকডাউনজনিত কর্মহানিতে লিঙ্গগত তারতম্য

ব্যাঙ্কের ঝুঁকি নিতে না চাওয়া এবং এমএসএমই-র নীতি প্রসঙ্গে

এমএসএমই  ও ফিনান্স দুটো আলাদা বিষয়। এমএসএমই শিশু ও বামন, শিশু ও বামন দুইই আকারে ছোট। শিশুর বৃদ্ধি হবে, বামন সে অবস্থাতেই থাকবে।

আমার প্রথম কোম্পানি ছিল ৫০ কোটি টাকার, দ্বিতীয় কোম্পানি ৫০০০ কোটি টাকার, ফলে দ্বিতীয় কোম্পানি আমার কাছে শিশু ও প্রথম কোম্পানি আমার কাছে বামন। আমি বলব ভারত হল কর্পোরেট বামনদের দেশ। আআমাদের ৬৩ মিলিয়ন উদ্যোগ রয়েছে, কিন্তু কোম্পানির সংখ্যা মাত্র ১৯৫০০ যাদের মূলধন ১০ কোটির বেশি।

ফলে ৬৩ মিলিয়ন উদ্যোগের প্রচুর শ্রমিক রয়েছে কিন্তু পুঁজি নেই, ১৯৫০০ কোম্পানির অনেক পুঁজি রয়েছে কিন্তু শ্রমিক নেই। কিন্তু আমি বলব আমাদের ৬৩ মিলিয়ন উদ্যোগের প্রয়োজন নেই, এত উদ্যোগ, এগুলো স্বরোজগারি নয়, বরং স্বশোষক বলা যায়। এমএসএমই ও শ্রম বাজার নিয়ে এত কথা হচ্ছে কারণ ভারতের শ্রম বাজারের দুই শক অ্যাবজর্বার কৃষি রোজগার ও স্বরোজগার আর কাজ করছে না। আমার ধারণা ৬৩ মিলিয়ন এই উদ্যোগগুলির সংখ্যা জিএসটির জন্য ও অন্য বিভিন্ন কাঠামোগত কারণেই কমে যেত।

কিন্তু এই যে দ্বিতীয় প্রসঙ্গ, এই মানুষগুলোকে আমরা অর্থ দিতে পারলাম না, এটা গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এ জন্য আমি ব্যাঙ্ককে দায়ী করব না। আপনারা জানেন এমএসএমই-র ঋণ ভারতের ক্ষেত্রে ২ বা তিন শতাংশ অনাদায়ী সম্পদ নয়, কখনও কখনও তা ১৫-২০ শতাংশ এবং ফলে আমি মনে করি না রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অন্য ব্যাঙ্কগুলিতে ঋণ দিতে বাধ্য করতে পারে... ভারতের ক্রেজিট টু জিডিপি অনুপাত ৫০ শতাংশ, আমরা কী করে এই ৫০ শতাংশকে ১০০ শতাংশ করব?

আমি বলব এর পাঁচটা উপায় রয়েছে। প্রথম হল ব্যাঙ্কের মধ্যে প্রতিযোগিতা বাড়ানো। ৪৭ সালে ভারতে ৯৭টি ব্যাঙ্ক ছিল, এখন ৯৫। ফলে অনেক বেশি ব্যাঙ্ক প্রয়োজন। দ্বিতীয়ত রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের প্রশাসন ঠিক করতে হবে, এখানে শেয়ারহোল্ডাররা এত ক্ষমতাধর যে বোর্ড ও ম্যানেজমেন্ট দুর্বল।

বেসরকারি ব্যাঙ্কের প্রশাসন ঠিক করতে হবে, এখানে সিইও এত ক্ষমতাধর যে বোর্ড দুর্বল। এর পর রিজার্ভ ব্যাঙ্কে নিয়ম ও পরিচালনা বৃদ্ধি করতে হবে। এবং পঞ্চম হল নন-ব্যাঙ্কিং প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সৎ সন্তানের মত ব্যবহার করা চলবে না। ইউপিআই বা ডিজিটাল পেমেন্ট বেড়েছে নন ব্যাঙ্ক এগিয়ে এসেছে বলে। জানুয়ারিতে আমরা বিলিয়ন পেমেন্ট পেয়েছি, আমরা দিনে বিলিয়ন পেমেন্ট পাব। কোভিড হয়ত তাতে গতি আনবে।

আমি মনে করি এমএসএমই দীর্ঘমেয়াদি নয়। প্রত্যেকে উদ্যোগপতি নয়, সব উদ্যোগ দীর্ঘমেয়াদি নয়। ফলে কোভিড দীর্ঘ সময় ধরে চলা একটা বিষয়কে ত্বরান্বিত করবে। কিন্তু আমাদের একটা আরো বেশি প্রতিযোগিতামূলক বৃহত্তর ব্যাঙ্কিং সিস্টেম প্রয়োজন।

RBI indian economy coronavirus
Advertisment