করোনা সংক্রমণে তামিলনাড়ু আগের দিন দিল্লিকে অতিক্রম করার পর এবার গুজরাটকেও ছাড়িয়ে গেল দিল্লি। তামিলনাড়ুতে মঙ্গলবার মোট ৭১৪ জনের করোনা সংক্রমণ ধরা পড়েছে, অর্থাৎ এখানে এখন মোট সংক্রমণ ৮৭১৮। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংক্রমণে রয়েছে গুজরাট, মঙ্গলবার ৩৬২ জনের নতুন সংক্রমণের পর তাদের সংখ্যা এখন ৮৯০৪।
তামিননাড়ুর চেন্নাইতেই মোট সংক্রমণ প্রায় ৫০০০। রাজ্যে মোট সংক্রমণের ৫৫ শতাংশ এখানেই। কিন্তু শুধু চেন্নাই নয়। বিভিন্ন রাজ্যে মোট সংক্রমণের বড় অংশ, ৫০ শতাংশেরও বেশি একটি বা দুটি শহর থেকে ঘটছে। মহারাষ্ট্রের মোট সংক্রমণের ৬০ শতাংশ ঘটেছে মুম্বইয়ে এবং গুজরাটের মোট সংক্রমণের ৭০ শতাংশ ঘটেছে আমেদাবাদে। মধ্যপ্রদেশের ইন্দোর ও পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার অবস্থাও একই রকম। (ছবি দেখুন)। রাজ্যে মোট মৃত্যুর অধিকাংশও ঘটেছে এই শহরগুলিতে।
আরও পড়ুন, আরোগ্য সেতু অ্যাপের তথ্য কাদের কাছে যেতে পারে, সংশয় ও উদ্বেগ
এর ফলে শহরগুলির স্বাস্থ্য পরিকাঠামো পরীক্ষার মুখে পড়েছে। মুম্বইয়ে মোট ১০ হাজারের বেশি সংক্রমণ একন যার ফলে নতুন রোগীদের জন্য শয্যা মিলছে না। মঙ্গলবার কিছু রোগীকে ওয়েটিং লিস্টে রাখা হয়, স্থানীয় কর্তৃপক্ষ সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে আরও শয্যার ব্যবস্থা করছেন।
তবে সংক্রমণ ছড়ানো নিয়ন্ত্রণের দিক থেকে দেখলে ছোট এলাকায় বেশি সংক্রমণ খারাপ নয়। এর ফলে স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ ওই এলাকাগুলিকে তিহ্নিত কের আইসোলেট করতে পারেন এবং অন্যান্য জায়গায় কাজকর্ম স্বাভাবিক করা সম্ভব। সব দিক থেকেই বড় শহরগুলিতে স্বাস্থ্য পরিকাঠামো অপেক্ষাকৃত ভাল। ছোট শহর বা গ্রামীণ এলাকায় বড়সড় সংক্রমণ হলে বেশি সমস্যায় পড়তে হবে।
আরও পড়ুন, কোভিড অতিমারীর সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ চিত্র
মঙ্গলবার সারা দেশে ৩৫৩২ জনের নতুন সংক্রমণের খবর পাওয়া গিয়েছে, বর্তমানে নিশ্চিত সংক্রমিতের সংখ্যা ভারতে ৭৪২৭৬। এর মধ্যে ২৪৮৩৫ জন ইতিমধ্যে সুস্থ হয়ে গিয়েছেন এবং তাঁদের থেকে অন্যের মধ্যে সংক্রমণের আশঙ্কা আর নেই। সারা দেশে মৃত্যুর সংখ্যা পোঁছিয়েছে ২৪১৫-তে।
৪ মে থেকে লকডাউনের নিয়মাবলী শিথিল করা হয়েছে, যার ফলে কাজকর্ম শুরু হয়েছে, মানুষের যাতায়াতের ব্যাপারেও বিধিনিষেধ কমানো হয়েছে, তবে এর ফলে যে আশঙ্কা করা গিয়েছিল সেভাবে সংক্রমণ সংখ্যার উপর ব্যাপক প্রভাব পড়েনি।
গত ১০ দিনের মধ্যে দু দিন অস্বাভাবিক ভাবে সংক্রমণ সংখ্যা বেড়েছে। যখন দেশে মোট সংক্রমণ ২২০০-২৫০০-র মধ্যে ছিল, তখন ৪ মে ৩৮০০ নতুন সংক্রমণ দেখা গিয়েছে। কিন্তু তার কারণ ছিল মহারাষ্ট্র ও পশ্চিমবঙ্গ পুরনো কিছু সংক্রমণের হিসেব দিয়েছিল ওই দিনে। গত রবিবার আরেকবার ব্যাপক সংক্রমণ ঘটেছিল, মোট ৪৩৭০ জন নতুন করে সংক্রমিত হয়েছিলেন। এই দু দিন ছাড়া বাকি দিনগুলিতে সংক্রমণের সংখ্যা মোটামুটি প্রতিদিন ৩৬০০-র মধ্যে থেকেছে।
একজন সংক্রমিত ব্যক্তি থেকে সংক্রমণ ছড়ানোর হারও গত এক সপ্তাহে খুব বেশি বাড়েনি। ১৩ এপ্রিল প্রথম লকডাউন শেষের দিন থেকে ১০ মে পর্যন্ত সংক্রমণ প্রজনন সংখ্যা ছিল ১.২৩, অর্থাৎ প্রতি ১০০ জন সংক্রমিত গড়ে আরও ১২৩ জনের মধ্যে সংক্রমণ ছড়িয়েছিলেন। ২৪ মার্চ প্রথম পর্যায়ের লকডাউন শুরু আগে এই সংখ্যা ছিল ১.৮৩।
তবে কিছু রাজ্যে সংক্রমিতের সংখ্যা ব্যাপক বেড়েছে। তামিলনাড়ু ছাড়া ওড়িশাতেও সংক্রমণ ব্যাপক হারে ঘটছে যদিও তার পরিমাণ শীর্ষ পাঁচ রাজ্যের তুলনায় অনেকটাই কম। মঙ্গলবার ওড়িশায় ১০১টি সংক্রমণের খবর এসেছে যা এখনও পর্যন্ত সর্বাধিক। রাজ্যে মোট সংক্রমিত ৫৩৮, যার অধিকাংশ গঞ্জাম, বালাসোর, জাজপুর, খুরদা ও ভদ্রক - এই পাঁচ জেলায়। প্রায় সমস্ত সংক্রমণই দেখা যাচ্ছে ভিন রাজ্য থেকে ফেরা পরিযায়ী শ্রমিকদের মধ্যে বা তাঁদের নিকট সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের মধ্যে। সবচেয়ে খারাপ হাল গঞ্জাম জেলার, সেখানে সংক্রমিতের সংখ্যা ২১০।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন