বাড়ছে সংক্রমণ, কিন্তু কমছে সংক্রমণের হার, কীভাবে সম্ভব?
দেশে প্রায় প্রতিদিনই বাড়ছে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ। অথচ রাষ্ট্রীয় স্তরে সংক্রমণের বৃদ্ধিহার উল্লেখযোগ্য ভাবে কমেছে। কীভাবে তা সম্ভব? R-নম্বরই বা কী?
দেশে প্রায় প্রতিদিনই বাড়ছে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ। অথচ রাষ্ট্রীয় স্তরে সংক্রমণের বৃদ্ধিহার উল্লেখযোগ্য ভাবে কমেছে। কীভাবে তা সম্ভব? R-নম্বরই বা কী?
India Coronavirus (Covid-19) Cases: আজব মনে হতেই পারে। দেশে প্রায় প্রতিদিনই বাড়ছে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ। ১৫ এবং ২০ মে'র মধ্যে রোজ ধরা পড়ছিল ৪,০০০ থেকে ৫,০০০ নতুন কেস। গত তিনদিনে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯,০০০ থেকে ১০,০০০। অথচ রাষ্ট্রীয় স্তরে সংক্রমণের বৃদ্ধিহার উল্লেখযোগ্য ভাবে কমেছে এই সময়ের মধ্যে, প্রায় অর্ধেক পারসেন্টেজ পয়েন্ট।
Advertisment
আবার ২৫ টির বেশি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে রাষ্ট্রীয় হারের চেয়ে দ্রুতগতিতে বাড়ছে করোনার সংক্রমণ, অথচ গত দু'সপ্তাহ ধরে কমছে রাষ্ট্রীয় সংক্রমণের বৃদ্ধিহার।
আজব মনে হলেও এর ব্যাখ্যা খুব কঠিন নয়। প্রথম ক্ষেত্রে, নতুন কেসের সংখ্যা প্রতিদিন বাড়লেও তা আগের বৃদ্ধিহার বজায় রাখার পক্ষে যথেষ্ট নয়। দ্বিতীয় ক্ষেত্রে, যে ২৫ টি রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে দ্রুতগতিতে বাড়ছে সংক্রমণ, সেগুলিতে কেসের সংখ্যা এখনও তুলনায় কম। যে রাজ্যগুলি এযাবৎ রাষ্ট্রীয় স্তরে সবচেয়ে বেশি কেস নথিভুক্ত করেছে - মহারাষ্ট্র, গুজরাট, এবং রাজস্থান - সেখানে বৃদ্ধিহার কমে এসেছে, যার ফলে অন্যান্য রাজ্যের বৃদ্ধিহারের প্রভাব কিছুটা প্রশমিত হয়েছে।
অতএব রোজই নতুন সংক্রমণের সংখ্যা বাড়তে থাকলেও পাশাপাশি কমছে বৃদ্ধিহার। যেমন ধরুন শুক্রবার সারা দেশে ধরা পড়ে ৯,৫০০-এর কিছু বেশি সংক্রমণ। বৃহস্পতিবার সংখ্যাটা ছিল ১০,০২৪, এবং সাতদিনের গড় দৈনিক বৃদ্ধিহার দেখলে দেখা যাবে, ৪.৬১ শতাংশ থেকে ৪.৫২ শতাংশে নেমে এসেছে তা।
Advertisment
বৃদ্ধিহারে মন্দা প্রমাণিত হয়ে আরও এক ভাবে - গত দু'মাস ধরে ক্রমাগত কমছে সংক্রমণের মাত্রা। এই মাত্রা মাপা হয় একজন সংক্রমিত ব্যক্তি গড়ে আর কতজনের মধ্যে সংক্রমণ ছড়াতে পারেন, সেই সংখ্যার ভিত্তিতে। এটিকে 'রিপ্রোডাকশন নাম্বার' বা স্রেফ R বলা হয়ে থাকে, এবং কোনও জনগোষ্ঠীতে মহামারী কত দ্রুত ছড়াচ্ছে, তা বোঝার এটি একটি উৎকৃষ্ট উপায়। চেন্নাইয়ের ইন্সটিটিউট অফ ম্যাথেম্যাটিকাল সায়েন্সেস-এ ডাঃ শীতাভ্র সিনহা এবং তাঁর সহকর্মীরা যা হিসেব দেখিয়েছেন, সেই অনুযায়ী দেশের সাম্প্রতিকতম রিপ্রোডাকশন নাম্বার হলো ১.২২, যা এই মহামারী চলাকালীন সর্বনিম্ন। এর অর্থ হলো, ১০০ জন সংক্রমিত ব্যক্তি গড়ে সেই সংক্রমণ ছড়াচ্ছেন ১২২ জনের মধ্যে।
প্রথম পর্বের লকডাউন শুরু হওয়ার ঠিক আগে, ২৪ মার্চ, এই সংখ্যা ছিল ১.৮৩, অর্থাৎ ১০০ জন সংক্রমিত ব্যক্তি পিছু সংক্রমণ ছড়াচ্ছিল গড়ে আরও ১৮৩ জনের মধ্যে। R-নম্বর যত কমবে, মহামারী ছড়ানোর গতিও তত ধীর হবে। তবে এই সংখ্যা ১-এর নীচে নামলে তবেই বলা যাবে যে অবসানের পথে মহামারী।
রিপ্রোডাকশন নাম্বারের এই অধোগতির একটি কারণ অবশ্যই লকডাউনের ফলে মানুষের যাতায়াতের ওপর নিষেধাজ্ঞা। তবে লকডাউন শিথিল হওয়ার পরেও কমতে থেকেছে এই সংখ্যা। এখানে ফের একবার বড়সড় ভূমিকা পালন করছে মহারাষ্ট্র। ভারতের মোট সংক্রমণে ৩৫ শতাংশের বেশি অবদান মহারাষ্ট্রের, সুতরাং সংক্রমণের বক্ররেখা বা কার্ভ-এর ওপর অসঙ্গত প্রভাব এই রাজ্যের।
তবে ১৬ এবং ২৬ মে'র মধ্যে R-নম্বর হবে ১.২৩, এমনটাই অনুমান করেছিলেন ডাঃ সিনহা এবং তাঁর সহকর্মীরা। সেই ভিত্তিতে ৩০ মে'র মধ্যে দেশে সক্রিয় সংক্রমণের সংখ্যা হওয়া উচিত ছিল ১.৩৫ লক্ষ। কিন্তু প্রকৃত সংখ্যাটা আন্দাজ ৯০ হাজার, যেহেতু মহারাষ্ট্রে কমতে থাকা বৃদ্ধিহার টেনে নামাচ্ছে R-নম্বর।
ডাঃ সিনহার হিসেবমত, বর্তমান হারে ১.৩৫ লক্ষ সক্রিয় সংক্রমণ দেখা যাবে ৯ জুন নাগাদ। এই ন'দিনের বিলম্বের জন্য সরাসরি দায়ী বৃদ্ধিহারে হ্রাস। বৃহস্পতিবার, ৪ জুন পর্যন্ত সক্রিয় সংক্রমণের সংখ্যা ছিল ১.১৪ লক্ষ, যার সঙ্গে প্রতিদিন যোগ হচ্ছে ৪,০০০ থেকে ৫,০০০ নতুন সংক্রমণ।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন