সারা বিশ্বে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের তুলনায় আফ্রিকা মহাদেশে এ সংক্রমণ অনেকটাই কম। ডিসেম্বরের শেষে চিনের পর বিভিন্ন দেশে এই সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়লেও আফ্রিকায় প্রথম করোনা সংক্রমণ দেখা গিয়েছে ১৪ ফেব্রুয়ারি। সে ঘটনা ছিল মিশরের। ৯ মার্চ পর্যন্ত সাব সাহারান আফ্রিকায় এই সংক্রমণ পৌঁছয়নি। ওই দিন বুরকানো ফাসোয় প্রথম সংক্রমণ দেখা গেয়। তার পর থেকে অবশ্য সংখ্যাটাদ্রুত বাড়ছে।
Advertisment
১৯ মার্চের হিসেবে আফ্রিকার ৫৪টি দেশের মধ্যে ৩৬টি দেশ থেকে ৭৩৩ জনের সংক্রমিত হবার কথা জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ১৬ জনের।
অন্য দেশের মত পরিমাণে না হলেও এই সংখ্যা দ্রুত বাড়বে বলেই আশঙ্কা, তার কারণ বেজিং ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আফ্রিকার বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে এবং এই দেশগুলির স্বাস্থ্য ব্যবস্থা তত ভাল নয়। আফ্রিকার মানুষের আশঙ্কা ২০১৪-১৬-র অবোলা মহামারীর মতই ঘটনা ফের ঘটতে চলেছে।
Advertisment
আফ্রিকায় কোভিড-১৯ সংক্রমণের ঘটনা তুলনামূলকভাবে কম কেন?
অনেয দেশগুলির মতই আফ্রিকাতেও সংক্রমণ ঘটেছে ভিন মহাদেশের ভ্রমণকারীদের থেকে। স্বাস্থ্য মন্ত্রকের দেওয়া হিসেবে দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম ৬২ জনের সংক্রমণ ঘটেছে ভিন দেশ থেকে।
স্থানীয়ভাবে সংক্রমণের ঘটনা ইতিমধ্যে ঘটতে শুরু করেছে এবং তাদের চিহ্নিত করা যাচ্ছে না বলে আশঙ্কাও তৈরি হয়েছে। সম্প্রতি কেপ টাউনে একটি ক্রুজকে কোয়ারান্টাইনে রাখা হয়েছে। এর ৬ জন যাত্রী ইস্তাম্বুল থেকে একটি বিমানে এসেছিলেন। ওই বিমানের একজন কার্গো জাহাজের কর্মী যাত্রী ও তাঁর সহকর্মীর দেহে ভাইরাসের উপসর্গ দেখা দিয়েছে।
হুয়ের স্থানীয় প্রধান ডক্টর মাতশিদিসো মোয়েতি মানতে চাননি যে বহু সংক্রমিত মানুষকে চিহ্নিত করা যায়নি, তবে পরীক্ষার কিটের অভাবরে কথা তিনি স্বীকার করে নিয়েছেন। আফ্রিকার ৪২টি দেশে এখন টেস্টিংয়ের ক্ষমতা রয়েছে। প্রকোপ শুরুর সময়ে এই সংখ্যাটা ছিল মাত্র ২।
সংক্রমণ ঠেকাতে আফ্রিকার দেশগুলি কী ব্যবস্থা নিয়েছে?
অনেকগুলি আফ্রিকার দেশ সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে। জনসমাবেশও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আশা করা হচ্ছে ইতালি বা আমেরিকার মত ধনী দেশের মত অবস্থা সেখানে ঘটবে না। বৃহস্পতিবার সেনেগাল এয়ার স্পেস বন্ধ করেছে। অ্যাঙ্গোলা ও ক্যামেরুন বিমান বন্ধ করে দিয়েছে, বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে জল ও সড়ক সীমানাও। রোয়ান্ডা এক মাসের জন্য সমস্ত বাণিজ্যিক বিমান নিষিদ্ধ করেছে। মরিশাসে প্রথম সংক্রমণের খবর আসার পরেই তারা সীমান্ত বন্ধ করেছে।
মোট ৫৪টি দেশের মধ্যে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দক্ষিণ আফ্রিকা। শুক্রবার পর্যন্ত সেখানে নিশ্চিত সংক্রমণের সংখ্যা ২০২। আল জাজিরার তথ্য অনুসারে দক্ষিণ আফ্রিকা জিম্বাবোয়ে সীমান্তে ৪০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বেড়া দিচ্ছে, যাতে জিম্বাবোয়ে থেকে রাগজহীন অভিবাসীরা সেখানে ঢুকে না পড়তে পারেন। যেসব জায়গায় মদ কিনে পান করা যায় সেগুলি সন্ধে ৬টা থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত বন্ধ রাখার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকায়।
আফ্রিকার সবচেয়ে জনবহুল দেশ নাইজেরিয়া চিন ও আমেরিকা সহ ১৩টি দেশের ভ্রমণকারীদের সে দেশে ঢোকার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। নাইজেরিয়ায় সংক্রমিতের সংখ্যা ৮।
সোমবার প্রথম ঘটনার খবর পাবার পর সোমালিয়া স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয় দু সপ্তাহের জন্য বন্ধ করেছে এবং জনসমাবেশের উপর সতর্কতা জারি করেছে। দু সপ্তাহের জন্য আন্তর্জাতিক বিমান চলাচলের উপন নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
দ্রুত কোভিড-১৯ পরীক্ষার ব্যাপারে সাহায্য করছে সেনেগাল। জুনের মধ্যে তা শুরু হয়ে যাবার কথা। এ ছাড়া চিনা বিলিওনেয়ার জ্যাক মা জানিয়ে দিয়েছেন আফ্রিকার দেশগুলিকে ১.১ মিলিয় টেস্টিং কিট, ৬ মিলিয়ন মাস্ক এবং ৬০ হাজার প্রোটেকটিভ স্যুট ও ফেস শিলড দেওয়া হবে।
আসন্ন সময়ে আফ্রিকার সামনে বড় সমস্যা কী হতে পারে? অতিমারীর সঙ্গে লড়াইয়ে আফ্রিকা কি প্রস্তুত?
ডক্টর মোয়েতির মতে আইসিইউ ও ভেন্টিলেটর পরিকাঠামোর অভাব আফ্রিকাকে ভোগাবে। সংবাদসংস্থা এপি জানাচ্ছে, পশ্চিম আফ্রিকার দেশ মালিতে প্রতি ১০ লক্ষ মানুষের জন্য ভেন্টিলেটরের সংখ্যা ১, সব মিলিয়ে সংখ্যাটা ২০।
ওই সংবাদসংস্থাকে ডক্ট নগোজি এরোন্ডু জানিয়েছেন, সাব সাহারান আফ্রিকার অনেক দেশেই আইসোলেশন ওয়ার্ড নেই, কোভিড ১৯ রোগীর সংখ্যা বাড়লে তার মোকাবিলা করবার মত সংখ্যায় স্বাস্থ্য কর্মীও নেই।
এখনও পর্যন্ত যা জানা গিয়েছে, তাতে এই ভাইরাসের সংক্রমণ বয়স্কদের মধ্যে বেশি। আফ্রিকার জনসংখ্যায় অল্পবয়সীদের সংখ্যা ইউরোপের থেকে বেশি। এ কারণেই এই মহাদেশে বিপদের সংখ্যা কম বলে আশা।
পরিকাঠামোগত দিক থেকে আফ্রিকা অনেকটাই পিছিয়ে। সীমিত ক্ষমতা নিয়েই চিহ্নিত করা ও পরীক্ষা করার কাজ চালানো আফ্রিকার দেশগুলির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ।