করোনা প্রকোপের মাঝে বারবার জনসাধারণের কাছে আহ্বান জানানো হচ্ছে, যেন তাঁরা কিছুক্ষণ অন্তর, অন্তত ২০ সেকেন্ড সময় ধরে সাবান দিয়ে হাত ধুতে থাকেন। এর ফলে করোনাভাইরাস হাত থেকে ধুয়ে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে, যার জেরে সংক্রমণের ঝুঁকি কমবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, নিয়মিতভাবে অ্যালকোহল বেসড কিছু দিয়ে বা সাবান ও জল দিয়ে হাত ভালভাবে পরিষ্কার রাখুন।
এদিকে এক রিপোর্টে উঠে এসেছে মুম্বইয়ের পরিস্থিতির কথা। সেখানে দেখানো হয়েছে, মুম্বইয়ের বেশ কিছু বস্তি এলাকায় নিয়মিত হাত ধোয়া তো দূরস্থান, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাও অসম্ভব।
করোনা-আক্রান্ত দেশগুলির মধ্যে স্বাস্থ্য পরিষেবার নিরিখে ভারত কোথায় দাঁড়িয়ে?
যেমন, মান্ডালা কলোনি। এখানে বাড়ি বাড়ি জলের সংযোগ নেই এমনকি ওই কমিউনিটির মধ্যে জলের বন্দোবস্তই নেই। শুধু তাই নয়। এখানে ৬০০০ মানুষের জন্য একটি মাত্র শৌচাগারের ব্যবস্থা রয়েছে এবং শয়ে শয়ে পুরুষ ও শিশুরা খোলা জায়গায় মলত্যাগ করে থাকেন। এঁদের পক্ষে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, হাত ধোয়া, এবং শ্বাসজনিত স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখা প্রায় অসম্ভব। ফলে এখানকার বাসিন্দারা কোভিড ১৯ সংক্রমণের ব্যাপারে অতীব ঝুঁকিপ্রবণ।
ভারতের কত নাগরিকের কাছে পরিশ্রুত জল পৌঁছয়?
ওয়াটার ডট অর্গের দেওয়া হিসেবে ভারতের ৯কোটি ৯০ লক্ষ মানুষ পরিষ্কার, নিরাপদ জল পান না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, মোট মৃত্যুর তার শতাংশ এবং প্রতিবন্ধকতা ও অসুস্থতার ৫.৭ শতাংশের কারণ হল পানীয় জলের সুষ্ঠু ব্যবস্থার অভাব, অনুন্নত শৌচাগার এবং স্বাস্থ্যবিধি যথাযথ না মানা। ২০১৭ সালে হু-এর এক রিপোর্টে বলা হয়েছে ভারত সহ নিম্ন মধ্য আয়ের দেশগুলিতে হাতের স্বাস্থ্য বজায় রাখা লহজ নয় কারণ তাঁদের জল, শৌচাগার ও সাবানের ব্যবস্থা নেই।
২০১৯ সালে জল সরবরাহ, শৌচাগার ও স্বাস্থ্য ২০১৯- এর জন্য গঠিত যৌথ নজরদারি কর্মসূচির দেওয়া হিসেবে ভারতে ৩ কোটি ৭০ লক্ষ মানুষের বাড়িতে হাত ধোয়ার বন্দোবস্ত নেই।
সারাক্ষণ করোনার খবর দেখবেন না
বেশ কিছু আফ্রিকান দেশে যেমন গায়ানায় পরিস্থিতি আরও খারাপ। এখানে মোট জনসংখ্যার ৫০ শতাংশের কাছে হাত ধোয়ার পরিকাঠামো নেই। এর পরেই রয়েছে সেনেগাল, সোমালিয়া, সুদান এবং জাম্বিয়া। লাইবেরিয়ার ৯৭ শতাংশ মানুষের কাছে হাত ধোয়ার সুবিধা পৌঁছয়নি। সম্প্রতি হুয়ের প্রথম আফ্রিকান প্রধান টেড্রোস আদানোম গেব্রিয়েসুস আফ্রিকা করোনাভাইরাসের আশঙ্কা নিয়ে জেগে উঠতে বলেছেন। সারা আফ্রিকা মহাদেশে কোভিড ১৯-এর ৬০০-র বেশি সংক্রমণের খোঁজ পাওয়া গিয়েছে।
জল ও সাবানের শুধু কোভিড ১৯ সংক্রমণের জন্যই প্রয়োজনীয় নয়, সারা পৃথিবীতে পাঁচ বছরের নিচের শিশুমৃত্যুর অন্যতম কারণ যে ডায়ারিয়া, তার হাত থেকে বাঁচতেও সাবান ও জল দিয়ে হাত ধোয়া জরুরি। এনসিবিআইয়ের এক রিপোর্ট অনুসারে ভারতে শিশুমৃত্যু যেযে কারণে ঘটে থাকে, তার তিন নম্বরে রয়েছে ডায়ারিয়া। এ রোগের হাত থেকে যে যে ভাবে বাঁচা যায়, তার অন্যতম হল সাবান দিয়ে হাত ধোয়া, পরিশ্রুত পানীয় জলের সুবিধা এবং উন্নত মানের শৌচাগার ব্যবহার।