গত কয়েক মাস ধরে সকলের মধ্যে যে প্রশ্নটা ঘুরছে, তা হল এই কোভিড ১৯ অতিমারী কতদিন থাকবে এবং বিভিন্ন ঋতুতে ফিরে আসবে কিনা। দুটি নতুন গবেষণার কথা প্রথমবার নিউ ইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত হয়েছে, যাতে দেখানো হয়েছে কোভিড ১৯ কার্ভ কীরকম হতে পারে।
সায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখানো হয়েছে শীতকালে এর প্রকোপ ফিরে আসবে। সেখানে বলা হয়েছে দীর্ঘকালীন বা তৎকালীন সামাজিক দূরত্ববিধি ২০২২ সাল পর্যন্ত বলবৎ রাখা উচিত যাতে রোগের পরিমাণ সীমাহীন না হয়ে ওঠে।
আরও পড়ুন, মাস্কের ব্যবহার এমনকি কমাতে পারে লকডাউনের সময়ও, বলছে গবেষণা
আমেরিকারি সেন্টার ফর ইনফেকশাস ডিজিজ রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি (CIDRAP) অন্য একটি গবেষণায় একটি দৃষ্টিভঙ্গি তুলে এনেছে। তাতে এই অতিমারীর ঢেউ কীরকম ভাবে আসতে পারে তার ধারণা লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। আগের অতিমারী ঐতিহাসিক ধরন এবং সায়েন্সে প্রকাশিত হবেষণাপত্রের ভিত্তিতে এই ঢেউ বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
মূল কথা:
এই অতিমারী সহজে যাবে না। হারভার্ড টি এইচ চান স্কুল অফ পাবলিক হেলথের মহামারীবিশেষজ্ঞ মার্ক লিপসিৎচ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে এক ইমেলে বলেছেন, “দুটি গবেষণা থেকেই এই সিদ্ধান্তে পৌছনো যাচ্ছে যে SARS-CoV-2 নিজে থেকে চলে যাবে না। আমাদের নিয়ন্ত্রণমূলক পদক্ষেপ নিতে হবে যাতে আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ক্ষমতা সুরক্ষিত রাখা যায় এবং তারপর ক্রমশ গোষ্ঠী প্রতিরোধের দিকে যেতে হবে, যদি গোষ্ঠী প্রতিরোধ সম্ভব হয় (আমরা এখনও জানি না প্রতিরোধ কতদিন টিকবে)। এ কারণেই অনেক মাস তো বটেই, বেশ কয়েক বছর ধরে ভাইরাস একটি এলাকায় জনসাধারণের মধ্যে ছড়াবে এবং সে জন্য যথেষ্ট পরিমাণ নিয়ন্ত্রক পদক্ষেপ নিতে হবে।”
আরও পড়ুন, কোভিড ১৯ ভ্যাকসিন- করোনাভাইরাস থেকে মুক্তির সন্ধানপ্রক্রিয়া
লিপসিৎচ দুটি গবেষণারই রচয়িতাদের অন্যতম। তাঁরা কী ভাবছেন দেখে নেওয়া যাক:
সামাজিক দূরত্ব কীভাবে কার্যকর হবে
সায়েন্সের গবেষণায় আগের দুটি করোনা সংক্রমণের সময়কাল ব্যবহার করে তার ঋতুচক্র এবং প্রতিরোধক্ষমতা বিশ্লেষণ করা হয়েছে এবং তার ভিত্তিতে SARS-CoV-2 সংক্রমণের একটি মডেল তৈরি করা হয়েছে।
প্রথম ছবির চার্টে সায়েন্সের গবেষণাপত্রটিই সামান্য পরিমার্জন করে তুলে ধরা হয়েছে। 1A চার্টে মোট সংক্রমণের ব্যাপকতা এবং প্রতি ১০ হাজার সংক্রমণে সংকটজনক অসুস্থতার টাইম সিরিজ তুলে ধরা হয়েছে। এখানে সোশাল ডিসট্যান্সিংয়ের দুটি ছবি দেখানো হয়েছে। অন্যদিকে 1B চার্টে গোষ্ঠী প্রতিরোধের দিকে সামগ্রিক প্রগতির ছবি দেখানো হয়েছে।
1C ও 1D চার্টকেও অনুরূপভাবেই দেখতে হবে। তফাৎ হল, দ্বিতীয় জোড়ে এই প্রাদুর্ভাবের মরশুমি দিকটিকেও বিবেচনা করা হয়েছে, যা প্রথম জোড়ে নেই।
গবেষণায় বলা হয়েছে, প্রথমবারের ভয়ানক অতিমারী ঢেউয়ের পর প্রতিবছর শীতকালে এ ফিরে আসবে।
এই গ্রাফে আমেরিকার বর্তমান আপৎকালীন স্বাস্থ্য ব্যবস্থার চিত্র তুলে ধরা হলেও লিপসিৎচ স্পষ্ট করে দিয়েছেন, এতে নিখুঁতভাবে আমেরিকার পরিস্থিতি বর্ণনা করা নেই তবে তার নীতি ও মূল বিষয়গুলি ধরা রয়েছে। তিনি বলেছেন, “অন্য অঞ্চলে ভিন্ন মাত্রার সংক্রমণ হতে পারে (ভারতে যেমন অনেকে যেরকম আশঙ্কা করেছিলেন তার তুলনায় কম সংক্রমণ হচ্ছে, যার কারণ অজ্ঞাত), যা বিভিন্ন মরশুম, এবং বিভিন্ন নিয়ন্ত্রক নীতির উপর নির্ভরশীল।”
ধারণাগত ভাবে ঢেউয়ের হিসেব
ভবিষ্যতে এই অতিমারীর চেহারা কীরকম হতে পারে তা দ্বিতীয় চিত্রে সংক্ষেপে দেখিয়েছে CIDRAP।
প্রথম সম্ভাব্য - ২০২০-র বসন্তের প্রথম ঢেউয়ের পর গ্রীষ্ম জুড়ে পরবর্তী ক্ষুদ্রতর ঢেউ আসবে, এবং এমনটা ঘটতে থাকবে ১ থেকে ২ বছর ধরে, এরপর ২০২১ সালে তা ধীরে ধীরে মিলিয়ে যাবে।
দ্বিতীয় সম্ভাবনা- ২০২০ সালের বসন্তের প্রথম ঢেউয়ের পর ২০২০ সালের শরৎ বা শীতে তীব্রতর আকারে সে ফিরে আসবে এবং এর পর ২০২১ সাল জুড়ে এক বা একাধিকবার ফিরে আসবে ক্ষুদ্রতর আকারে।
তৃতীয় সম্ভাবনা- ২০২০ সালের বসন্তের প্রথম ঢেউয়ের পরে ক্রমাগত সংক্রমণ ধীরে চলতে থাকবে কিন্তু তা ঢেউ আকারে থাকবে না। এর প্রকৃতি ভৌগোলিক ভাবে বিভিন্ন হবে এবং কীভাবে তার প্রশমনের ব্যবস্থা করা হয়েছে তার উপর নির্ভরশীল হবে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন