সারা পৃথিবীর বেশ কিছু দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কেন কিছু দেশে এ পদক্ষেপ নেওয়া হল, কিছু দেশে নেওয়া হল না! শিক্ষা ও অন্যান্য ক্ষেত্রে এর প্রভাব কীরকম হবে!
এই প্রকোপের ফলে কত ছাত্রছাত্রী ক্ষতিগ্রস্ত?
করোনাভাইরাসের কারণে পৃথিবীর প্রায় অর্ধেক ছাত্রছাত্রী (৪৯.২২ শতাংশ)-র স্কুল থেকে বিশ্বিদ্যালয় যাওয়া বন্ধ। ইউনেসকোর হিসেবে, মঙ্গলবার পর্যন্ত ১০৭টি দেশ ক্লাসরুমে সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা বসিয়েছে, যার ফল ভোগ করা শিশু ও যুবকযুবতীর সংখ্যা ৮৬.১৭ কোটি। কোনও কারণে শিক্ষা প্রতিশ্ঠান বন্ধ করা নতন ঘটানা না হলেও, যে পরিমাণে শিক্ষায় বাধা পড়েছে তা অভূতপূর্ব।
ভারতে কি স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয় সম্পূর্ণ বন্ধ?
১৬ মার্চ থেকে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের কথা বলেছে সরকার। তবে বেশ কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মচারী এবং প্রধানদের জন্য খোলা। ঝাড়খণ্ড, উত্তরাখণ্ড, তামিলনাড়ু, পশ্চিমবঙ্গে বোর্ডের পরীক্ষা চলছে। যার জন্য ক্লাস ১০ ও ১২ -এর ছাত্রছাত্রীদের নিয়মিত বাইরে যেতেই হচ্ছে। বুধবার কেন্দ্রীয় সরকার সিবিএসই, এনআইওএস এবং সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলিকে পরীক্ষা বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে। এর পরেই দিল্লি সরকার সমস্ত স্কুল, এমনকি শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মীদের জন্যও বন্ধ করে দিয়েছে। অন্য রাজ্যও একই পথে হাঁটবে বলে আশা করা যায়।
প্রকোপ প্রতিরোধে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা কি কার্যকরী হতে পারে?
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) এই মর্মেই বলছে। তাদের যুক্তি হল, শিশু ও যুবক যুবতীদের মাধ্যমে এ রোগ ছড়াতে পারে। অতিমারীর মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে সংক্রমণের শৃহ্খল ভাঙা যেতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। এর ফলে সংক্রমিতের সংখ্যা কমবে, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উপর চাপ এড়ানো যাবে এবং ভ্যাকসিন তৈরির কাজে বেশি সময় দেওয়া যাবে।
কোনও কোনও দেশ কেন এ পদক্ষেপ নিচ্ছে না?
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখলে শুধু শিক্ষার কাজ ব্যাহত হয় না, সরাসরি তার অর্থমূল্য দিতে হয়। স্কুল বন্ধ থাকলে পরিবারগুলিতে চাইল্ডকেয়ারের খোঁজ করতে হয়। অনেককেই নিজেদের কাজে না গিয়ে শিশুর দেখভাল করতে হয় অভিভাবকদের। তাঁদের শ্রয়মসময় সরাসরি অর্থনীতিতে আঘাত করে।
২০০৮ সালে বিএমসি পাবলিক হেলথ জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে ব্রিটেনে ১২ সপ্তাহ স্কুল বন্ধ থাকায় প্রতি সপ্তাহে ক্ষতির পরিমাণ ছিল ০.২ বিলিয়ন থেকে ১.২ বিলিয়ন পাউন্ড প্রতি সপ্তাহে, যা দেশের জিডিপির ০.২ থেকে ১ শতাংশ। ২০১৬ সালে ব্রুকিংস ইনস্টিট্যুটের এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে চার সপ্তাহ স্কুল বন্ধ থাকলে মার্কিন অর্থনীতিতে তার প্রভাবের আর্থিক পরিমাণ ৪৫ বিলিয়ন ডলার। ব্রিটেন এ কারণেই দীর্ঘদিন ধরে স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত কার্যকর করেনি। অবশেষে বৃহস্পতিবার হাল ছেড়ে দিয়ে তারা শুক্রবার থেকে সমস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়বে যাঁরা সংগতিহীন পরিবার থেকে আসছে, তাদের উপর। স্কুল বন্ধ থাকলে তাদের পুষ্টিতে ঘাটতি হবে। ভারতে স্কুল বন্ধ মানে মিড ডে মিল বন্ধ। এ কারণেই সুপ্রিম কোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রাজ্য সরকারগুলিকে নোটিস পাঠিয়ে স্কুল বন্ধ থাকলে কীভাবে মিড ডে মিল পৌঁছনো যাবে, সে নিয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলেছে।
কম আয়ের পরিবার থেকে আসা ছাত্রছাত্রীরা অনলাইন পড়াশোনার ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়বে কারণ তাদের কাছে প্রযুক্তি লভ্য নয় এবং ঠিকমত ইন্টারনেট কানেকশন থাকে না। প্রথম প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের অনেকের বাবা-মা-ই দূরশিক্ষা বা বাড়ি থেকে শিক্ষার ব্যাপারে অবগত নন।
বন্ধের পর শিক্ষা ঘাটতি মেটাতে সরকার কী কী করছে?
দূরশিক্ষা পদ্ধতি গ্রহণ করা হচ্ছে। ইউনেস্কো কোভিড ১৯ টাস্ক ফোর্স বানিয়েছে যারা নিয়মতি শিক্ষামন্ত্রীদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক করছেন।
চিনে অনলাইন শিক্ষা চালু হয়েছে। ইন্টারনেট কানেক্টিভিটি জোরদার করার জন্য সে দেশের তিন বৃহত্তম টেলিকম অপারেটর চায়না মোবাইল, চায়না ইউনিকম ও চায়না টেলিকমকে ইন্টারনেটকে একযোগে কাজ করতে বলা হয়েছে।
ভারতে শিক্ষাবর্ষের শেষে স্কুল বন্ধ থাকে, ফলে খুব বেশি ক্ষতি এ সময়টায় ঘটছে না। তবে ৩১ মার্চের পর স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রাখতে হলে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারগুলিকে দূরশিক্ষা চালু করতে হবে।