Advertisment

তাবলিগি জামাত কী, কেমন করে চলে এ সংগঠন?

প্রতিষ্ঠার দু বছরের মধ্যে তাবলিগি জামাত মেওয়াট এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। ১৯৪১ সালে প্রথম তাবলিগি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়, যাতে উত্তর ভারতের প্রায় ২৫ হাজার মানুষ যোগ দেন।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

নিজামউদ্দিন এলাকা ঘিরে ফেলা হয়েছে। একানে তাবলিগি জমায়েতে যোগদানকারী অন্তত ২০০ জনের করোনা সংক্রমণ ধরা পড়েছে (ছবি- প্রবীণ খান্না)

তাবলিগি জামাতের সদর দফতর দিল্লির মারকাজ নিজামউদ্দিনে যে ৪০০০ মানুষ জমায়েত হয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে ২০০ জনেরও বেশির করোনা সংক্রমণ ধরা পড়েছে।

Advertisment

তাবলিগি জামাত বিষয়টা কী?

তাবলিগি জামাতের আক্ষরিক অর্থ হল যে সমাজ বিশ্বাস ছড়ায়। এটি একটি সুন্নি ইসলামিক ধর্মপ্রচারক আন্দোলন।

এর শিকড় রয়েছে হানাফি ব্যবস্থার দেওবন্দি সংস্করণে। দেওবন্দি মৌলবি তথা বিশিষ্ট ইসলামি শিক্ষাবিদ মৌলানা মহম্মদ ইলিয়াস খান্দালওয়া ১৯২৭ সালে মিরাটে এই বিষয়টির সূচনা করেন। হিন্দুদের ধর্মান্তরণ আন্দোলনের সময়ের সঙ্গেই এরও সূচনা হয়।

মৌলানা ইলিয়াজ ১৯২০-এর দশকের মাঝামাঝি সাহারানপুরে মাজাহারউল উলুমে পাঠশিক্ষা দিতেন। এখানে শিক্ষার দিক থেকে পিছিয়ে পড়া মিও কৃষকরা মূলত হিন্দু রীতিনীতি পালন করতেন। মৌলানা ইলিয়াজ মিও মুসলিমদের ইসলামের ঐতিহ্যে ফিরিয়ে আনতে শুরু করেন, দেওবন্দ ও সাহারানপুরে বেশ কয়েকজন তরুণ ও যুবককে তিনি প্রশিক্ষণ দিয়ে মেওয়াটে পাঠান, সেখানে তাবলিগি জামাতের মাধ্যমে মসজিদ ও মাদ্রাসার মধ্যে সমন্বয় সাধনের কাজ শুরু হয়।

এর পরিধি কত দূর?

প্রতিষ্ঠার দু বছরের মধ্যে তাবলিগি জামাত মেওয়াট এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। ১৯৪১ সালে প্রথম তাবলিগি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়, যাতে উত্তর ভারতের প্রায় ২৫ হাজার মানুষ যোগ দেন। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর লাহোরের রাওয়ালিন্ড শহরে এর পাকিস্তান পর্যায় শুরু হয়। বর্তমানে বাংলাদেশে এর বৃহত্তম শাখা রয়েছে। তাবলিগি জামাতের উল্লেখযোগ্য শাখা রয়েছে আমেরিকা ও ব্রিটেনে। এ ছাড়া ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরেও এর শাখা রয়েছে।

এরা কীভাবে ইসলাম প্রচার করে?

 তাবলিগি জামাত ৬ নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত। প্রথম হল কালিমাহ- যা বিশ্বাস বিষয়ক। এখানে তাবলিগরা মেন নেয় যে আল্লা ছাড়া আর কোনও ঈশ্বরের অস্তিত্ব নেই এবং নবী মহম্মদ তাঁর বার্তাবাহক। দ্বিতীয় হল সালাত- অর্থাৎ দিনে পাঁচবার নমাজ পাঠ। তৃতীয় হল ইলম ও ধিকর। এখানে আল্লাহের জ্ঞান ও স্মরণ হয়ে থাকে বিভিন্ন সেশনে। এই সেশনগুলিকে ইমামরা ভাষণ দেন, কোরাণ আবৃত্তি করা হয়, হাদিশ (হাদিথ) পাঠ করা হয়। এই পর্যায়ে অংশগ্রহণকারীরা একসঙ্গে খাওয়া দাওয়া করে থাকেন, সম্প্রদায়গত ও পরিচয়গত অনুভব নিজেদের মধ্যে আনবার জন্য।

চতুর্থ নীতি হল ইকরম -ই- মুসলিম, অন্যান্য মুসলিমদের সম্মান প্রদান। পঞ্চম হল ইখলাস - ই নিয়ত, বা আকাঙ্ক্ষার আন্তরিকতা। এবং ষষ্ঠ হল দাওয়াত এ তবলিগ বা ধর্মান্তরণ।

 এই সমাবেশে কী হয়?

সকাল ৮ টা থেকে ১১টা পর্যন্ত গোটা জমায়েতকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়- এক একটি গ্রুপে জনা দশেক করে থাকেন। প্রতি গ্রুপের একজন করে নেতা মনোনীত করা হয়, সাধারণভাবে তাঁরা বয়োজ্যেষ্ঠ হন। এই গোষ্ঠীগুলিকে একটি দূর পর্যন্ত লক্ষ্যে যেতে বলা হয়, দূরত্ব নির্ভর করে এ কাজের জন্য অংশগ্রহণকারীরা কত টাকা এনেছেন তার উপর। ৩ টে থেকে পাঁচটা পর্যন্ত নবাগতদের সঙ্গে ইসলাম আলোচনা হয়। সূর্যাস্তের পর কোরাণ আবৃত্তি করা হয়, এবং ব্যাখ্যা সহ নবীর জীবনী বর্ণনা করা হয়।

তাবলিগি জামাত সংগঠনের কাঠামোটা ঠিক কেমন?

কোনও নির্দিষ্ট কাঠামো নেই তবে বয়োজ্যেষ্ঠ ও মসজিদের প্রাধান্যপূর্বক একটা নেটওয়ার্ক রয়েছে। আদিতে এর শীর্ষে থাকতেন আমির, যিনি শুরা বা কাউন্সিলের পৌরোহিত্য করতেন। তিনিই ছিলেন সংগঠনের মূল বিন্দু, আন্তর্জাতিক সম্মেলন কবে কোথায় হবে, তা তিনিই স্থির করতেন।

তৃতীয় আমির (১৯৬৫-১৯৯৫) ছিলেন মৌলানা ইনামুল হাসান। তাঁর মৃত্যুর পর এ পদের বিলোপ ঘটে, প্রতিষ্ঠিত হয় আলমি শুরা (আন্তর্জাতিক উপদেষ্টা পরিষদ)। মৌলানা কানধলাওয়ি-য়ের পুত্র জুবের উল হাসান কানধলাওয়ির মৃত্যুর পর এ আন্দোলনে গোষ্ঠী বিভাজন সৃষ্টি হয়।

এই গোষ্ঠীগুলি কী কী?

 ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশে বেশ কিছু শিবির রয়েছে। নিজামউদ্দিন শিবিরের শীর্ষে রয়েছেন মৌলানা সাদ কানধালয়ি, মৌলানা মহম্মদ ইলিয়াসের প্রপৌত্র তিনি। অন্যদিকে পাকিস্তানের রাওয়ালিন্ডে রয়েছে একটি প্রতিদ্বন্দ্বী গোষ্ঠী। বাংলাদেশের টোঙ্গিতে বৃহত্তম আন্তর্জাতিক সম্মেলন হয়, যেখানে প্রায় ২০ লক্ষ মানুষের সমাগম হয়। এ বছর টোঙ্গি গোষ্ঠীর সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ১২ জানুয়ারি। নিজামউদ্দিন গোষ্ঠীর সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ১৭ জানুয়ারি।

coronavirus
Advertisment