সোশাল মিডিয়ায় প্রচুর ভিডিও ঘুরছে, যাতে দেখা যাচ্ছে য়ুহানবাসী পাকিস্তানি ছাত্রছাত্রীরা করোনাভাইরাস কেন্দ্র থেকে তাঁদের সরানো হচ্ছে না বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ১৪ হাজার ছাড়িয়েছে এবং মারা গিয়েছেন ৩০০ জনেরও বেশি।
ভারত য়ুহান থেকে দুটি বিমানে করে নাগরিকদের সরিয়ে নিয়ে গিয়েছে, এবং পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ চিনের সঙ্গে দেওয়াল তুলে দিচ্ছে যাতে এই সংক্রমণ না ছড়ায়।
পাকিস্তান এই অবস্থান নিল কেন?
পাকিস্তান বলেছে তারা চিনের সঙ্গে সংহতি বজায় রাখতে তাদের নাগরিকদের বিপজ্জনক এলাকায় রেখে দেবে।
শুধু তাই নয়, পাকিস্তান এও বলেছে, চিন থেকে নাগরিকদের সরিয়ে আনা দায়িত্বজ্ঞানহীন আবেগনির্ভর সিদ্ধান্ত হবে।
গত সপ্তাহে ডন পত্রিকায় প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের এক বরিষ্ঠ সহযোগীকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, "আমরা বিশ্বাস করি বর্তমানে আমাদের প্রিয়জনদের স্বার্থে চিনে তাঁদের থাকা উচিত। এই অঞ্চল, পৃথিবী ও দেশের বৃহত্তর স্বার্থে আমরা তাঁদের এখন সরিয়ে নিচ্ছি না।"
"বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এ কথা বলছে, চিনের নীতিও তাই, আমাদের নীতিও একই। আমরা চিনের সঙ্গে সম্পূর্ণ সংহতি জ্ঞাপন করছি। যদি আমরা দায়িত্বজ্ঞানহীনের মত আচরণ করে ওখান থেকে আমাদের নাগরিকদের সরিয়ে নিতে থাকি, তাহলে সারা বিশ্বে এ মড়ক দাবানলের মত ছড়িয়ে পড়বে।"
এই লাইনে কি একা পাকিস্তানই রয়েছে?
এই ভাইরাসের প্রকোপের পর অন্য দেশগুলির চেয়ে পাকিস্তানের ভূমিকা সম্পূর্ণত আলাদা।
একদিকে আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুরের মত দেশগুলি, সম্প্রতি চিন ভ্রমণকারী অনাগরিকদের নিজেদের দেশে ঢুকতে দিচ্ছে না।
ভিয়েতনাম চিনে যাতায়াতের সব বিমান বন্ধ করে দিয়েছে, জাপান হুবেই ভ্রমণকারী সমস্ত বিদেশিদের দেশে ঢোকা নিষেধ বলে ঘোষণা করেছে। এই প্রকোপের কেন্দ্রস্থল হল হুবেই।
মঙ্গোলিয়া ও রাশিয়া চিনের সঙ্গে তাদের ভূমি সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে। উত্তর কোরিয়া প্রথম এ পদক্ষেপ নিয়েছিল।
বেশ কিছু বড় সংস্থা চিনের সঙ্গে অস্থায়ী ভাবে ব্যবসা বন্ধ করেছে। অ্যাপল মেইনল্যান্ড চিনে তাদের ৪২টি স্টোর বন্ধ করে দিয়েছে। মনে রাখতে হবে, অ্যাপেলের তৃতীয় বৃহত্তম বাজার এইখানে, এবং দুনিয়া জোড়া বিক্রির এক ষষ্ঠাংশ আসে এখান থেকে।
কিন্তু অন্যদিকে, পাকিস্তানের মত দেশও রয়েছে- রয়েছে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও মায়ানমারের মত দেশও- যেখানকার সরকার এই প্রকোপের ভয়াবহতা নিয়ে অপেক্ষাকৃত কম উদ্বেগ প্রকাশ করছে।
মায়ানমারে লাউডস্পিকারে করে হোম রেমিডি প্রচার করা হচ্ছে, সরকারি ও আধাসরকারি সংস্থাগুলি শোনা যাচ্ছে চিনের অন্য জিনিসের মতই এ বেশিদিন টিকবে না বলে রসিকতা করছে। ইন্দোনেশিয়ায় সরকার জনগণকে কম কাজ করে বেশি বিশ্রাম নিতে উৎসাহ দিচ্ছে কারণ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভাল থাকলে রোগ আটকানো যাবে। কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হান সেন এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেছেন কেউ মুখোশ পরলেই তাকে ছুড়ে ফেলে দেওয়া হবে কারণ এর ফলে অকারণ আতঙ্ক ছড়াবে।
এ দেশগুলি এরকম প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে কেন?
পাকিস্তানের ব্যাপারটা মূলত "একসঙ্গে বাঁচব, একসাথে মরব" জাতীয় মনোভঙ্গি, যা তাদের "সব সময়ের সঙ্গী" চিনের সঙ্গে "পর্বতের থেকেও উঁচু, সমুদ্রের চেয়েও গভীর, ইস্পাতের চেয়েও মজবুত ও মধুর থেকেও মিষ্টি বন্ধুত্বের নীতি থেকে উদ্ভূত।"
এই সমস্ত দেশগুলির সঙ্গেই চিনের নিবিড় সংযোগ রয়েছে, এবং বেজিংয়ের কড়া নজর সকলেই এড়িয়ে চলতে চায়। চিন এ প্রকোপের ব্যাপারে খুবই স্পর্শকাতর এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভ্রমণ নিষিদ্ধ করার নীতি সম্পর্কে তাদের বক্তব্য, "সত্যের দিকে নজর না দিয়ে", "মিত্রতা বজায় না রেখে" এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সার্স মড়ক নিয়ে চিন যা করেছিল তা নিয়ে দুনিয়া জুড়ে সমালোচনা হয়েছিল। এবারের বিষয়টি স্বীকৃত ও অনেকটা খোলামেলা ও স্বচ্ছ হওয়া সত্ত্বেও পশ্চিমের ডাক্তার ও স্বাস্থ্য আধিকারিকরা এবারেও কম উদ্বিগ্ন নন।
হান সেনের প্রশ্ন, "কোনো কম্বোডিয়ান বা কম্বোডিয়ায় বসবাসকারী বিদেশি কি এই রোগে মারা গিয়েছেন? কম্বোডিয়ায় এখন যে রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে তার নাম আতঙ্ক রোগ। চিনের য়ুহান শহরের করোনাভাইরাস নয়।"