Advertisment

“মৌলিক স্বাস্থ্যের গুরুত্বের ব্যাপারে চোখ খুলে দিতে পারে এই মহামারী”

ডক্টর কে লীলামণি কোজিকোড় ও তিরুবনন্তপুরম সরকারি মেডিক্যাল কলেজের কমিউনিটি মেডিসিনের বিভাগীয় প্রধান ছিলেন ও পরে কোচির অমৃতা ইন্সটিট্যুট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সেসেও সে দায়িত্ব পালন করেছেন। ৪৮ বছর তিনি কমিউনিটি মেডিসিনের জগতে কাজ করেছেন।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

নয়া দিল্লিতে চলছে স্যানিটাইজেশন (ছবি- প্রবীণ খান্না)

ডক্টর কে লীলামণি কোজিকোড় ও তিরুবনন্তপুরম সরকারি মেডিক্যাল কলেজের কমিউনিটি মেডিসিনের বিভাগীয় প্রধান ছিলেন ও পরে কোচির অমৃতা ইন্সটিট্যুট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সেসেও সে দায়িত্ব পালন করেছেন। ৪৮ বছর তিনি কমিউনিটি মেডিসিনের জগতে কাজ করেছেন। তিনি লিখলেন-

Advertisment

দুমাস হল ভারতে প্রথম কোভিড ১৯ সংক্রমণের প্রথম ঘটনা চিহ্নিত হয়েছে। এই স্বল্প সময়ে, জাতীয় পর্যায়ে লকডাউনের মধ্যে সংখ্যা ৪০০০ ছাড়িয়েছে। H1N1 এবং সোয়াইন ফ্লু অতিমারী আমরা মোকাবিলা করেছি, কিন্তু সে সময়ে এত কঠোর পদক্ষেপ দরকার হয়নি।

হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন- যে ওষুধে এখন সবার নজর

কয়েক দশক ধরে কমিউনিটি মেডিসিনের জগতে কাজ করবার পর দেখেছি, মেডিক্যাল ছাত্রছাত্রীদের অনেকেই ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য ও প্রাথমিক নিকাশির মত বিষয় গোষ্ঠী স্বাস্থ্যে কতটা জরুরি সে বিষয়ে সচেতন নয়। প্রাথমিক হাতের স্বাস্থ্য, শরীরের স্বাস্থ্য, কাশির উপায় এসব ব্যাপারে চোখ খুলে দেবার জন্য আমাদের বোধহয় এরকম একটি অতিমারীর প্রয়োজন ছিল। যে কোনও রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে তিন ধরনের প্রতিরোধ ব্যবস্থা প্রয়োজন, প্রাথমিক, দ্বিতীয় ধাপ ও তৃতীয় ধাপ।

স্বাস্থ্যশিক্ষা বা সচেতনতায় প্রথামিক প্রতিরোধের ধারণায় জোর দেওয়া হয়, যার মধ্যে রয়েছে সুরক্ষাজনিত উপায় এবং প্রতিরোধক্ষমতা। কোনো রোগ প্রাথমিকভাবে লক্ষিত হওয়া এবং তার দ্রুত চিকিৎসা দ্বিতীয় পর্যায় এবং অক্ষমতা প্রতিরোধ ও পুনর্বাসন হল তৃতীয় পর্যায়।

কোন পর্যায়ে পদক্ষেপ প্রয়োজন তা কমিউনিটি মেডিসিন বিশেষজ্ঞরা পরিস্থিতি বিবেচনা করে স্থির করবেন। শ্বাসকষ্ট প্রবল হলে প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপ পোলিও ও কুষ্ঠের মত প্রয়োজনীয়, তৃতীয় পর্যায়েরও যথেষ্ট প্রয়োজন রয়েছে।

গ্রীষ্মকালে করোনাভাইরাস মরে যেতে পারে, তবে সাবধানের মার নেই, বলছেন বিশেষজ্ঞরা

দুর্ভাগ্যজনকভাবে, সর্বদাই জোর দেওয়া হয় তৃতীয় পর্যায়ে, তা বড় হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলির উপর, যা সাধারণ মানুষের আওতার বাইরে। চিকিৎসকরা অবশ্যই চিকিৎসা ও রোগীর ব্যাপারে যত্নবান হন, কিন্তু সে সুবিধা কেবল রোগী ও তাঁর পরিজনেরাই পেয়ে থাকেন। কিন্তু জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা যদি কেবল প্রতিরোধের প্রাথমিক অংশটুকু প্রয়োগ করেন, তাহলে একটা গোটা কমিউনিটি বেঁচে যেতে পারে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, চিকিৎসকদের মত জনস্বাস্থ্যের ফলাফল তৎক্ষণাৎ পরিলক্ষিত হয় না।

চিকিৎসাশাস্ত্রেও কমিউনিটি মেডিসিন একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এবং প্রথম বর্ষ থেকে ফাইনাল ইয়ার পর্যন্ত এ বিষয়ে শিক্ষাই শুধু দেওয়া হয় না, ডাক্তারদের এর জন্য তিন মাসের প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়।

একবার এক মেডিক্যাল ছাত্র আমার কাছে অভিযোগ করেছিল সে এ বিষয়ে খুবই কম নম্বর পেয়েছে, যে কারণে এমবিবিএস ক্লিয়ার করতে পারেনি। এর পর সে খুবই বিস্ময়করভাবে স্বীকার যে সে মেডিক্যাল কলেজে পড়তে এসেছে বড় ডাক্তার হবে, টাকা রোজগার করবে বলে, স্বাস্থ্য বা নিকাশির মত বিষয়ে সময় নষ্ট করবার জন্য নয়।

করোনার কারণে লকডাউন উঠে গেলে কোন কোন কারখানা খোলা প্রয়োজন?

কিন্তু এ ধরনের ছাত্ররা জানেই না যে এদের যখন প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে পোস্টিং পাবে তখন এর গুরুত্ব বুঝতে পারবে। একবার এক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র পরিদর্শনের পর সেই চাত্রের সঙ্গেই আমার দেখা হয়। সে তখন ডাক্তার হয়ে গিয়েছে। তার টেবিলে কমিউনিটি মেডিসিনের একটা বই। সে তখন আমাকে বলে যে গোষ্ঠীস্বাস্থ্যের প্রয়োজনীয়তা সে বুঝতে পেরেছে।

আজ সারা দেশের প্রায় সকলেই কোয়ারান্টাইন, আইসোলেশন, সামাজিক দূরত্ব, নিরাপদ শৌচের গুরুত্ব বুঝেছেন।

কিন্তু অনেকেই ভুলে গিয়েছেন H1N1 অতিমারীর সময়েও এসব ব্যাপারে জোর দেওয়া হয়েছিল। সেসময়ে নীতিপ্রণেতাদের সঙ্গে আলোচনায় কাশির স্বাস্থ্য, সন্দেহভাজনদের জন্য আলাদা ওয়ার্ড, হাসপাতালের বেডের মধ্যে অন্তত এক মিটার দূরত্ব এবং হাসপাতাল কর্মীদের সুরক্ষা উপকরণ দেবার কথা হয়েছিল বলে আমার স্পষ্ট মনে আছে।

নীতিপ্রণেতাদের কথা ভুলে যান, ডাক্তারেরাও এসব পরামর্শ সিরিয়াসলি নেননি।

এবার একটা সাবধানবাণী। কোনও সন্দেহ নেই যে যেসব নিরাপত্তার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে এবং নিরাপদ দূরত্বের কথা বলা হয়েছে, সেগুলি কঠোরভাবে মেনে আমরা এই অতিমারী পেরিয়ে যাব। কিন্তু এবার আরও বেশি করে অন্য একটা সচেতনতা প্রয়োজন হবে। হাসপাতাল এবং কোয়ারান্টাইন থেকে যাঁরা ফিরবেন তাঁদের পৃথক করার একটা চেষ্টা চলবে।

এই রোগ সম্পর্কে উদ্বেগ ও ভয়ই এর কারণ। এটা দূর করবার উপায় হল এ ভাইরাস কেমন করে ছড়ায় তার সম্পর্কে যথাযথ তথ্যপ্রদান। সেরে উঠেছেন য়াঁরা, তাঁদের অভিজ্ঞতা সংবাদমাধ্যমে শেয়ার করা এ ব্যাপারে খুবই প্রয়োজনীয় ভূমিকা হিসেবে দেখা যেতে পারে। একই রকম গুরুত্বপূর্ণ হল যেসব নিরাপদ অভ্যাসের মাধ্যমে এই অতিমারীকে আমরা দূরে রাখতে পারি- প্রতিদিন স্নান করা, প্রতিবার বাড়ি ফিরে সাবান দিয়ে হাত ধোয়া, কাশির সময়ে মুখ হাত দিয়ে ঢাকা।

এসব সহজ পদ্ধতিগুলি আমাদের জীবনের অংশ হয়ে উঠতে পারে, দাঁত মাজার মতই।

সমস্ত সংকটেরই একটা রুপোলি রেখা রয়েছে। কোভিড ১৯-এর বিরুদ্ধে ভারতের যুদ্ধে। আমরা আমাদের স্বাস্থ্যব্যবস্থা, সর্বক্ষণ কাজ করে চলা পেশাদারদের নিয়ে গর্বিত হতে পারি। এই সময়ে যখন সারা দেশ তৃতীয় পর্যায়ের পরিষেবায় জোর দিচ্ছে, আমরা এ ব্যাপারে এগিয়ে রয়েছি।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন

coronavirus
Advertisment