ভারতীয় সময় অনুসারে বৃহস্পতিবার রাতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ডিরেক্টর জেনারেলের ডাকা আপৎকালীন কমিটির দ্বিতীয় বৈঠকে নভেল করোনাভাইরাস উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়। সে বৈঠকে এ বিষয়টিকে আন্তর্জাতিক উদ্বেগদায়ী জনস্বাস্থ্যের আপৎকালীন পরিস্থিতি (PHEIC) বলে ঘোষণা করা বয়েছে। পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে এই রোগ ছড়িয়ে পড়েছে।
আন্তর্জাতিক আপৎকালীন পরিস্থিতি ঘোষণার মানে কী?
বৈঠকের পর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, অন্য দেশগুলিতেও এই রোগের প্রাদুর্ভাব আশঙ্কা করা হচ্ছে। ফলে সমস্ত দেশকেই কড়া নজরদারি, প্রাথমিক চিহ্নিতকরণ, আলাদা করা, সংযোগ চিহ্নিতকরণ এবং রোগ ছড়ানো প্রতিরোধে নজর দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পুরো তথ্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সঙ্গে শেয়ার করতে হবে। সমস্ত দেশকে মনে করিয়ে দেওয়া হচ্ছে তথ্যাবলী বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে দেওয়ার আইন রয়েছে। পশুর ক্ষেত্রে এই ভাইরাসের চিহ্ন ধরা পড়লে সে ব্যাপারে সমস্ত তথ্য পশু স্বাস্থ্যের বিশ্ব সংস্থাকে জানাতে হবে।
কমিটি অবশ্য ভ্রমণ বা ব্যবসার উপর কোনও বিধিনিষেধ চাপায়নি। ভারত অবশ্য সমস্ত নাগরিককে চিনে ভ্রমণ না করার পরামর্শ দিয়েছে।
বর্তমান পরিস্থিতি কতটা গুরুতর?
ভারতে প্রথম করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কথা জানা যায় বৃহস্পতিবার, যখন য়ুহান বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী দেশে ফেরার পর পরীক্ষার সময়ে এই রোগের সংক্রমণ ধরা পড়ে। ৪০০ ভারতীয়কে য়ুহান থেকে শনিবার দিল্লি নিয়ে আসা হচ্ছে। ৩০ জানুয়ারি ২০২০ পর্যন্ত চিনের ৩১টি প্রদেশে মোট ৭৭১১ জনের নিশ্চিত সংক্রমণের কথা জানা গিয়েছে। এর মধ্যে ১৩৭০টি গুরুতর সংক্রমণ, ১৭০ মৃত্যু, ১২৪ জনকে ছেড়ে দেওয়ার এবং ১২১৬৭ টি ক্ষেত্রে সম্ভাব্যতার কথা বলা হয়েছে। নিশ্চিত সংক্রমণ অন্য দেশে যা জানা গিয়েছে তা হল, থাইল্যান্ড (১৪), সিঙ্গাপুর (১০), অস্ট্রেলিয়া (৫), আমেরিকা (৫), জাপান (৮), দক্ষিণ কোরিয়া (৪), মালয়েশিয়া (৭), ফ্রান্স (৪), ভিয়েতনাম (২), কানাডা (২), নেপাল (১), কম্বোডিয়া (১), শ্রীলঙ্কা (১), জার্মানি (৪), সংযুক্ত আরব আমিরশাহী (৪), হংকং (১০), ম্যাকাও (৭), তাইওয়ান (৮), ফিনল্যান্ড (১), অ্যাঙ্গোলা (১) এবং ভারত ১।
চিনের কাছে PHEIC-র অর্থ কী?
সংক্রমণের উৎসস্থলের কাছে বিশেষজ্ঞরা যে পরামর্শ পাঠিয়েছেন, সে তালিকা দীর্ঘ
* ঝুঁকি বিষয়ে জনগণকে জানানোর একটি সামগ্রিক কৌশল তৈরি করতে হবে, যার মাধ্যমে গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে এবং প্রতিষেধক ব্যবস্থা সম্পর্কে জনগণ জানতে পারবেন।
•জনস্বাস্থ্য সম্পর্কিত ব্যবস্থা বাড়াতে হবে যাতে বর্তমান প্রকোপ কমানো যায়
•স্বাস্থ্য পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনতে হবে এবং স্বাস্থ্য কর্মীদের সুরক্ষা দিতে হবে।
•চিন জুড়ে নজরদারি বাড়াতে হবে এবং সক্রিয় সংক্রমণ খুঁজে বের করতে হবে।
•বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও তার সহযোগীদের সঙ্গে তদন্তের ব্যাপারে সহযোগিতা করতে হবে যাতে মহামারী সম্পর্কে এবং এর প্রকোপ কীভাবে ছড়িয়ে পড়ছে তা বোঝা যায় এবং প্রতিরোধ করা যায়।
•মানবশরীরে সংক্রমণ সম্পর্কিত প্রয়োজনীয় তথ্য শেয়ার করতে হবে।
•এই প্রকোপের জুনোটিক উৎস নির্দিষ্টকরণের কাজ চালিয়ে যেতে হবে, এবং তা জানা গেলেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে সে সম্পর্কে অবগত করতে হবে।
•সমস্ত বন্দর ও বিমানবন্দরে নির্গমনের সময়েও পরীক্ষা চালাতে হবে, যাতে লক্ষ্ণণযুক্ত ভ্রমণকারীকে প্রাথমিকভাবে চিহ্নিত করা যায়, তবে আন্তর্জাতিক চলাচলে যাতে ন্যূনতম বিঘ্ন ঘটে, তাও দেখতে হবে।