মালিক পেইরিস হংকং বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজিস্ট, যিনি ২০০৩ সালের সার্স করোনাভাইরাস চিহ্নিতকরণে অন্যতম ভূমিকা নিয়েছিলেন। তিনি কথা বললেন অনুরাধা মাসকারেনহাসের সঙ্গেঃ
ভারতে পরীক্ষা কি যথেষ্ট পরিমাণে হচ্ছে? যাঁরা বিদেশ ভ্রমণ করেননি, বা যাঁদের সংক্রমণ বা সংক্রমিতের সংস্পর্শে আসার মত ঘটনা ঘটেনি, তাঁরা ছাড়া আর কারও পরীক্ষা না হওয়ায় কি বিপদের সম্ভাবনা থেকে যাচ্ছে না?
সত্যি কথা বলতে কী, ভারতের মত দেশে সব মানুষের পরীক্ষা করা সম্ভব নয়। সংখ্যাটা বড্ড বেশি। কিন্তু কোনও কমিউনিটির মধ্যে ভাইরাস গিয়েছে কিনা, তা পরীক্ষা করবার উপায় রয়েছে। একটা পদ্ধতি হল নিউমোনিয়া বা ইনফ্লুয়েঞ্জার রোগীদের যথেচ্ছ পরীক্ষা করা, তাঁরা ভ্রমণ করেছেন কিনা, কোথায় করেছেন এসব না দেখেই। এর ফলে ভারতে কমিউনিটির মধ্যে সংক্রমণ ঘটছে কিনা তার আঁচ পাওয়া যাবে। সেরকম কোনও সম্ভাবনা দেখলে এই পরীক্ষা আরও বাড়ানো যেতে পারে।
চিকেন খেলে কি করোনাভাইরাস সংক্রমণ হতে পারে?
হংকংয়ে যেমন প্রাথমিকভাবে চিন থেকে ঘুরে এসেছেন যাঁরা, তাঁদের পরীক্ষা করা হচ্ছিল। তারপর অন্য দেশ ঘুরে আসা নাগরিকদের পরীক্ষা করা শুরু হয়। এখন সমস্ত নিউমোনিয়া রোগীদের পরীক্ষা করা হচ্ছে। কিন্তু এত জনসংখ্যাসমন্বিত ভারতে তেমনটা করা সম্ভব নয়। স্বল্প সময়ের জন্য ব্যাপক পরিমাণ পরীক্ষা করা যেতেই পারে, কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদে তা এখানে সম্ভব কিনা সে নিয়ে আমি নিশ্চিত নই। অন্তত ৬ থেকে ৯ মাসের জন্য সুষ্ঠু অ্যাকশন প্ল্যানের কথা সব দেশকেই ভাবতে হবে।
কমিউনিটির মধ্যে প্রতিরোধী ব্যবস্থা গড়ে তোলার একটা প্রস্তাব আসছে। এটা কতটা কার্যকর হতে পারে?
রোগ নিয়ন্ত্রণের জন্য স্কুল বন্ধ, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার মাধ্যমে রোগ সংক্রমণ পৃথিবীর সব দেশে আটকানো সম্ভব কিনা, সে নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। কোনও দেশ যাই করুক, বাইরে থেকে সংক্রমণ আমদানি হবার সম্ভাবনা থেকেই যায়। সাম্প্রতিক কিছু রিপোর্ট থেকে দেখা যাচ্ছে ব্রিটেন মেনে নিয়েছে যে প্রাদুর্ভাব অবশ্যম্ভাবী, ফলে তারা প্রভাব আটকানোর চেষ্টা করছে, এবং হাসপাতালে যাতে ভিড় না জমে যায় সে দিকে নজর দিচ্ছে। এই দৃষ্টিভঙ্গির ফলে ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ জনসংখ্যা কোনও একটি সময়ে সংক্রমিত হয়ে পড়তে পারে যতদিন না প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয় ও সংক্রমণে শৃঙ্খল ভেঙে পড়তে পারে। আমার ধারণা লোকজন এই দৃষ্টিভঙ্গিতে সচকিত হয়ে পড়বেন, কিন্তু আমাদের বাস্তবের মুখোমুখি হতেই হবে এবং দীর্ঘ মেয়াদে এর ফলে প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে।
কিন্তু এর ফলে একটা বড় সংখ্যার মানুষ শিকার হয়ে পড়বেন না?
আমরা এতদিন পর্যন্ত যা দেখেছি, তাতে অল্পবয়সীদের মধ্যে, যাঁদের বয়স ৬০-এর নিচে, তাঁদের মধ্যে আক্রান্তের হার কম। বয়স্কদের ব্যাপারে সাবধানী হতে হবে, এবং যাঁদের অন্য অসুস্থতা রয়েছে তাঁদের ব্যাপারেও একই কথা প্রযোজ্য। বর্তমানে, যাঁদের জ্বর বা কাশি হয়েছে, তাঁদের বয়স্ত মানুষদের সঙ্গে দেখা না করা বা কাজে না যাওয়াই ভাল। কম লোকের সঙ্গে বাড়িতে থাকাই বাঞ্ছনীয়।
গরমের সময়ে বেশি তাপমাত্রায় কি ভাইরাসের সংক্রমণ কমতে পারে?
আমরা এখন বলতে পারি যে বেশি তাপমাত্রা সম্বলিত দেশে এই ভাইরাস কম কার্যকর হয়েছে। আমরা জানি এই ভাইরাস বেশ কিছুদিন কার্যকর থাকতে পারে। ২২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে এই ভাইরাস তিন থেকে চারদিন বাঁচে। ৩৩ থেকে ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় এই ভাইরাসের বাঁচার মেয়াদ অনেকটাই কম। আমাদের কাছে এর পূর্ণ প্রমাণ নেই, কিন্তু গরম দেশগুলিতে সংক্রমণ অনেক কম হচ্ছে। তবে, আমরা ধরে নিতে পারি না যে সংক্রমণ সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। যদি আমাদের ভাগ্য ভাল হয়, তাহলে বেশি তাপমাত্রায় সংক্রমণের পরিমাণ কম হবে।
গরম পড়লে করোনাভাইরাস সংক্রমণ কমবে, এমন কোনও প্রমাণ নেই
২০০৩ সালে যে সার্স ভাইরাস দেখা গিয়েছিল বর্তমান ভাইরাস অনেকটাই তার মত। গবেষণায় দেখা গিয়েছে বেশি তাপমাত্রা ও বেশি আর্দ্রতায় এদের বাঁচার ক্ষমতা কম। মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া বা থাইল্যান্ডের মত এশিয় দেশগুলিতে সার্সের তেমন প্রকোপ না দেখা যাওয়ার এটা একটা ব্যাখ্যা হতে পারে।