Advertisment

“ঐক্যবদ্ধ অনুশাসনের মাধ্যমেই করোনাপ্রতিরোধী লড়াই চালাতে হবে”

 সমস্ত সংস্থাকে স্বাস্থ্যমন্ত্রকের সাহায্য নিয়ে কাজ করতে হবে এবং একটিই নির্দেশ থাকবে যাতে কোনও সংশয় না থাকে ও সবটা স্পষ্ট থাকে।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Coronavirus, Vitamin C

ছবি- পার্থ পাল

২০১০ সাল পর্যন্ত ভারত সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রকের সচিবের দায়িত্বভার সামলেছেন ডক্টর কে সুজাতা রাও। তিনি হু, গ্লোবাল ফান্ড এবং UNAIDS-এও ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেছেন।

Advertisment

২০০৯ সালে H1N1 ভাইরাসের সঙ্গে লড়াইয়ে তিনি ছিলেন সামনের সারিতে। আজকের প্রেক্ষিতে নিজের অভিজ্ঞতার কথা তিনি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের সঙ্গে ভাগ করে নিলেন।  

ভারতের সামনে করোনাভাইরাস নয়া চ্যালেঞ্জ কীভাবে নিয়ে এল? স্বাধীন ভারতে এরকম কি এর আগে ঘটেছে?

 শুধু ভারতে নয়, ১৯১৮ সালের পর সারা পৃথিবীতে এক ভয়ংকর কিছু ঘটেনি। গতি, ছড়ানোর ব্যাপ্তি এবং মৃত্যুর নিরিখে। আমরা মহামারী ও অতিমারী দেখেছি, কিন্তু সেগুলো সাইক্লোনের মত, এবার যা ঘটছে তা সুনামি।

 আগে যেভাবে বিষয়গুলি সামলানো হয়েছে, তার তুলনায় এবারের বিষয়টা কতটা আলাদা? নতুন কিছু যোগ হয়েছে, বা কোনও ঘাটতি দেখা যাচ্ছে?

 আমার মনে হয় পলিসি একইরকম রয়েছে এবং মহামারীর সংক্রমণ ও প্রক্ষেপপথ অনুসারেই চলছে। আজকের দিনে সংযোগ ও প্রকৃতির ব্যাপারে আমরা অনেকটাই এগিয়ে। যেহেতু বিষয়টা খুবই প্রেক্ষিত নির্ভর, সে কারণে কোনও কিছুই ঠিক বা ভুল বলা যাবে না। যাঁরা এ লড়াই লড়ছেন তাঁদের ভিত্তি হল বিজ্ঞান, প্রাপ্ত প্রমাণ, ঐতিহাসিক অভিজ্ঞচা এবং সর্বোপরি, অতিক্রিয়া- সুঃখিত হবার চেয়ে নিরাপদ হওয়া ভাল- এই বোধ।

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, এইডসের সময়ে যেমন ছিল, H1N1-এর সময়ে প্রতিক্রিয়া তার থেকে ভিন্ন ছিল। তার কারণ সংক্রমণের প্রকৃতি এবং ইনকিউবেশন পিরিয়ড, এসবই ভিন্ন, যেহেতু দুটি ভাইরাসও আলাদা। কিন্তু কোভিড-১৯ এর ক্ষেত্রে আমাদের প্রতিক্রিয়া অনেকটা এইডসের মত, যদিও করোনাভাইরাস অনেক বেশি মারাত্মক এবং অনেক দ্রুত ছড়ায়... যা পরিস্থিতি আমাদের পক্ষে সহনীয় নয়... ফলে আমি মনে করি, একবার প্রযুক্তিগত সমস্যা দূর হয়ে গেলে আমাদের টেস্টিংয়ের ব্যাপারটা অনেকটাই বাড়ানো উচিত। টেস্টিং যেভাবে বাড়ছে, তাতে আমি খুশি।

H1N1 ও COVID-19, দুটোর বিরুদ্ধে লড়াইয়েই রাজনৈতিক নেতারা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছেন। কোভিড ১৯-এর ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী নিজে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। কিন্তু আমি দেখছি রাজ্যগুলির ক্ষেত্রে রাজনৈতিক স্বার্থ আগে দেখা হচ্ছে, যা এড়ানো উচিত। এর আগে এরকম ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নিজে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করতেন। প্রধানমন্ত্রী নিজে মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে কথা বলায় আমি খুশি। কিন্তু আমি এখনও মনে করি কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর উচিত রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে কথা বলে আরও বেশি সমন্বয়ের রাস্তায় যাওয়া উচিত।

সংক্রামক রোগের ক্ষেত্রে একটাই নীতি, একটাই লক্ষ্য, একটাই নেতৃত্ব হওয়া উচিত। সমস্ত রাজ্য যদি যা খুশি করতে থাকে তাহলে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হবে। কে কখন লকডাউন শুরু করবে তার নির্দেশিকা থাকা উচিত, তার কী প্রস্তুতি রয়েছে তা দেখা উচিত, কারণ সমসময়েই ব্যালান্স ঠিক রাখতে হবে। ব্যালান্স ও মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রয়োজন।

H1N1-এর সময় থেকে কী শিক্ষা আমরা এখন নিতে পারি?

H1N1 ও করোনা, দুটোই অতিমারী, এবং আমাদের দুটোর ক্ষেত্রেই ভাগ্য ভাল। সোয়াইন ফ্লু যখন এল, তখন আমাদের বার্ড ফ্লু হয়ে গিয়েছে, ফলে আমাদের জনস্বাস্থ্য পরিকাঠামো নিয়ন্ত্রণে। আমাদের হাতে তখন ওষুধ ও কাঠামো দুইই রয়েছে।

করোনার ক্ষেত্রেও আমরা চিন, জাপান দক্ষিণ কোরিয়ার অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নেবার সুযোগ পেয়েছিষ আমার মনে হয় সোয়াইন ফ্লুর সময়ে আমরা যেরকম টেস্টিংয়ের কৌশল নিয়েছিলাম, অবিলম্বে সেই পদ্ধতি গ্রহণ করা উচিত। দ্বিতীয়ত আমাদের শিক্ষা হল, রাজ্যগুলির উপর নিয়ন্ত্রণ। মানুষকে পলিসি বুঝতে হবে, বিশ্বাস করতে হবে।

২০০৯ -এর কোনও নির্দিষ্ট শিক্ষা?

 সংযুক্ত নেতৃত্ব। সমস্ত সংস্থাকে স্বাস্থ্যমন্ত্রকের সাহায্য নিয়ে কাজ করতে হবে এবং একটিই নির্দেশ থাকবে যাতে কোনও সংশয় না থাকে ও সবটা স্পষ্ট থাকে। সে H1N1 হোক কি কমনওয়েলথ গেমসের সময়ে ডেঙ্গি হোক, স্বাস্থ্যমন্ত্রক এই নীতি নিয়ে কাজ করে এসেছে। এখন আমি দেখছি, নীতি আয়োগ, আইসি এমআর, বিশেষ মন্ত্রী গোষ্ঠী, আরও অনেকে রয়েছে, তারা মিডিয়ায় কথাও বলে চলেছে।

দ্বিতীয়ত,  আমার এইচআইভি এবং পোলিওর অভিজ্ঞতা থেকে আমি বলব কোশল স্থির করবার জন্য আমাদের আরও ভালভাবে তথ্য বিশ্লেষণ করতে হবে। আমাদের বিশ্বের ও দেশের প্রমাণের দিকে তাকাতে হবে। এ কাজ দ্রুত শুরু করা উচিত। তৃতীয়ত ও ধরনের প্রকোপের মোকাবিলর জন্য প্রাতিষ্ঠানিক পরিকাঠামো গড়ে তুলতে হবে।

ভারতের মত আকারের এবং বসতিপূর্ণ এলাকায়, দেশের প্রকৃতির কথা মাথায় রাখলে তিনটি প্রধান চ্যালেঞ্জ কী হতে পারে?

 অর্থ, কারণ সস্তায় প্রতিরোধ হবে না। দ্বিতীয়ত প্রশিক্ষিত মানবসম্পদ যা সমস্ত স্তরে সর্বত্র সমানভাবে ভাগ করতে হবে, কারণ রোগীকে উত্তর থেকে দক্ষিণে নিয়ে আসা সম্ভব নয়। তৃতীয়ত জনস্বাস্থ্য নীতির সাপেক্ষে প্রাথমিক স্বাস্থ্য। জনস্বাস্থ্য ও পরিকাঠামোয় আমাদের বিনিয়োগ করতে হবে।

এরকম সময়ে আন্তর্জাতিক স্তরে একসঙ্গে চলা কতটা জরুরি?

 খুবই জরুরি, বিশেষ করে আমাদের সঙ্গে হুয়ের সম্পর্কের কথা মাথায় রাখলে। ভারত এ ব্যাপারে যথেষ্ট এগিয়ে। দেশের নিজের সমস্যা রয়েছে। তা সত্ত্বেও আমরা শুরুতে চিনকে আমরা সাহায্য করেছিলাম। অন্যান্য দেশগুলি আমাদের আটকে পড়া নাগরিকদের সাহায্য করেছে।

 যদিও সবে শুরু, তবু এ সংকট থেকে আমাদের শিক্ষা কী হতে পারে?

 যদি আমরা অল্পের উপর দিয়ে রক্ষা পাই তাহলে সে আমাদের সৌভাগ্য। এবারে অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা হল যত দ্রুত সম্ভব জনস্বাস্থ্যের পরিকাঠামো বানাতে হবে- জনস্বাস্থ্যে প্রশিক্ষণ দিতে হবে, ল্যাবরেটরি, নজরদারি ব্যবস্থা, প্রকোপ প্রতিরোধে ব্যবস্থা, সমস্ত রকম।

coronavirus corona
Advertisment