সারা দুনিয়ার ল্যাবরেটরিগুলিতে নভেল করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন তৈরির চেষ্টা যখন চলছে, সে সময়েই বহু মানুষ হিউম্যান চ্যালেঞ্জ ট্রায়াল নামক বিতর্কিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার জন্য স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে নাম লিখিয়েছেন। ২৭ এপ্রিল 1DaySooner নামের এরকম এক উদ্যোগে ৫২টি দেশের ৩৮১৭ জন এই পরীক্ষার জন্য সম্মত হয়েছেন। এই পদ্ধতিতে স্বেচ্ছাসেবকদের শরীরে ইচ্ছা করে ভাইরাস প্রবেশ করিয়ে দেওয়া হবে, যাতে ভ্যাকসিন তৈরির কাজে দ্রুততা আসে।
সাধারণত ভ্যাকসিন কীভাবে তৈরি হয়?
সাধারণত ভ্যাকসিন তৈরিতে বেশ কয়েক বছর সময় লাগে এবং সেগুলি সাধারণভাবে তিন পর্যায়ের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের মধ্যে দিয়ে যায়। প্রথম পর্যায়ে ছোট একদল মানুষের মধ্যে ট্রায়াল ভ্যাকলিন দেওয়া হয়। দ্বিতীয় ধাপে যাঁদের জন্য ভ্যাকসিন তৈরি, সেই ধরনের বৈশিষ্ট্যমূলক (যথা বয়স ও শারীরিক স্বাস্থ্য) মানুষের শরীরে প্রবেশ করানো হয়। তৃতীয় পর্যায়ে বেশ কয়েকহাজার মানুষের শরীরে ভ্যাকসিন প্রয়োগ করে তার কার্যকারিতা ও নিরাপত্তা পরীক্ষা করা হয়। এই পর্যায়ে অংশগ্রহণকারীদের হয় ভ্যাকসিন না হয় প্ল্যাসিবো দেওয়া হয়।
ভারতের সর্বত্র একই পরিমাণ টেস্টের প্রয়োজন নেই, বলছেন বিশেষজ্ঞ
ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা স্থির হয় ওই গোষ্ঠীতে যাঁদের ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে ও যাঁদের প্ল্যাসিবো দেওয়া হয়েছে তাঁদের উপর নজর রেখে। যাঁদের ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে তাঁদের মধ্যে সংক্রমণের সম্ভাবনা কম থাকবার কথা।
হিউম্যান চ্যালেঞ্জ ট্রায়াল কী?
হিউম্যান চ্যালেঞ্জ ট্রায়ালে ভ্যাকসিন গ্রুপ ও প্ল্যাসিবো গ্রুপ- দু পক্ষই তাঁদের শরীরে সংক্রমণের সম্মতি দেন- রোগের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেন তাঁরা।
এই পদ্ধতির সমর্থকরা মনে করেন, এ ধরনের পরীক্ষার ফলে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন তৈরির অমূল্য সময় বাঁচবে, এবং গবেষকদের বাস্তবিক ক্ষেত্রে সংক্রমিতদের জন্য অপেক্ষা করতে হবে না।
১ মার্চ গবেষক নির এইয়াল, মার্ক লিপসিৎশ এবং পিটার জি স্মিথ জার্নাল অফ ইনফেকশাস ডিজিজেজ-এ তৃতীয় পর্যায়ের পরীক্ষার বদলে হিউম্যান চ্যালেঞ্জ ট্রায়ালের প্রস্তাব দিয়েছেন। এই গবেষণাপত্রে তাঁরা সময় বাঁচাবার পক্ষে সওয়াল করেছেন।
হোম আইসোলেশনের ব্যাপারে কেন্দ্রীয় সরকারের নতুন গাইডলাইন
1DaySooner ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, “ক্লিনিকাল সেটিংয়ে সংক্রমণের পদ্ধতি ও ভ্যাকসিনের সুরক্ষা সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য জোগাড়ের মাধ্যমে গবেষকরা যে তথ্য জানতে পারবেন, তা ভ্যাকসিন ও তৈরির কাজে প্রভূত সহায়ক হবে।” এর ফলে লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন বাঁচার আশার কথাও ব্যক্ত করা হয়েছে ওয়েবসাইটে।
হিউম্যান চ্যালেঞ্জ ট্রায়াল- নৈতিকতার প্রশ্ন
হিউম্যান চ্যালেঞ্জ ট্রায়াল নতুন কিছু নয়, ম্যালেরিয়ার মত কম বিপজ্জনক রোগের ক্ষেত্রে বিজ্ঞানীরা এ পদ্ধতি ব্যবাহার করে এসেছেন। কিন্তু কোভিড ১৯-এর মত সম্ভাব্য মারক রোগের ক্ষেত্রে এ ধরনের ট্রায়াল নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন সমালোচকরা, বিশেষ করে গবেষণা প্রক্রিয়া যখন প্রাথমিক স্তরে রয়েছে।
ফের র্যাপিড টেস্ট বন্ধ কেন?
২০১৬ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তাদের এই বিষয়ক এক নথিতে লিখেছে, “কয়েকশ বছর ধরে হিউম্যান চ্যালেঞ্জ ট্রায়াল সংঘটিত হচ্ছে এবং এর ফলে ওষুধ ও ভ্যাকসিনের বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের প্রভূত উন্নতি হয়েছে। এ ধরনের গবেষণা একটা নৈতিকতা কাঠামোর মধ্যে থেকে হওয়া উচিত এবং সত্যিকারের সম্মতি নেওয়া উচিত। এ ধরনের ট্রায়ালের ক্ষেত্রে আগে থেকে ভাবনা, সাবধানতা এবং অনবধানতার বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে। যে তথ্য পাওয়া যাবে তা যেন মানুষের জীবনের ঝুঁকি নেওয়াকে ন্যায্য প্রতিপন্ন করে।”
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন