Advertisment

করোনাভাইরাস আটকাতে সারা দেশে জারি হওয়া ১৮৯৭ সালের মহামারী আইনে কী বলা আছে?

এই আইনের দ্বিতীয় ধারায় রাজ্য সরকার ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিকে রোগ ছড়িয়ে পড়া আটকাতে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ ও বিধি তৈরির অধিকার দেওয়া হয়েছে।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Corona Epidemic

দিল্লির এক সরকারি স্কুলের ছবি (ফোটো- অমিত মেহরা)

বুধবার ১১ মার্চ ক্যাবিনেট সচিবদের বৈঠকে স্থির হয়েছে সমস্ত রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলি ১৮৯৭ সালের মহামারী সম্পর্কিত আইনের ২ নং ধারা প্রয়োগ করবে যাতে স্বাস্থ্যমন্ত্রকের নির্দেশাবলী কার্যকর করা যায়।

Advertisment

এই মুহূর্তে ভারতে অন্তত ৭৩ জনের করোনাভাইরাস রোগে আক্রান্ত হবার খবর রয়েছে। সারা পৃথিবীতে এই সংখ্যা ১,১৯,১০০-র বেশি এবং প্রায় ৪৩০০ জনের মৃত্যু ঘটেছে। বিভিন্ন দেশের সরকারি ঘোষণা থেকে এই সংখ্যা বের করেছে সংবাদসংস্থা রয়টার্স।

জল-সাবানই কিন্তু করোনাভাইরাস সংক্রমণ আটকানোর মোক্ষম অস্ত্র

মহামারি সম্পর্কিত আইন নিয়মতিভাবে সারা দেশে সোয়াইন ফ্লু, ডেঙ্গি, কলেরার মত রোগের মোকাবিলা করার জন্য আগেও প্রয়োগ করা হয়েছে।

১৮৯৭ সালের মহামারী সম্পর্কিত আইনের ইতিহাস

১৮৯০-এ পূর্বতন বোম্বে প্রেসিডেন্সিতে বিউবোনিক প্লেগের মহামারী আটকাতে এই আইন প্রবর্তন করেছিল ঔপনিবেশিক সরকার।

এই আইনের বলে ঔপনিবেশিক সরকার বিভিন্ন বাড়িতে, যাত্রীদের মধ্যে সন্দেহভাজন প্লেগের রোগী খুঁজত, তাদের জোর করে আলাদা করে দিত এবং সংক্রমিত এলাকা ধ্বংস করে দিত।

ঐতিহাসিকরা সম্ভাব্য অপব্যবহারের জন্য এই আইনের নিন্দা করেছেন।

১৮৯৭ সালে, যে বছর এই আইন লাগু হয়, স্বাধীনতা সংগ্রামী বাল গঙ্গাধর তিলককে ১৮ মাসের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তাঁর অপরাধ ছিল তাঁর চালিত দুটি সংবাদপত্র কেশরী এবং মারহাট্টায় প্লেগ মহামারী যেভাবে সরকার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে, তার পদ্ধতি নিয়ে সমালোচনা করা ছিল।

করোনা আক্রান্তদের কী ওষুধ দেওয়া হচ্ছে?

১৮৯৭ সালের মহামারী সম্পর্কিত আইনের বিধি

এই আইনের চারটি ধারা রয়েছে, যার উদ্দেশ্য হল বিপজ্জনক মহামারী জনিত রোগের সংক্রমণ প্রতিহত করা।

এই আইনের দ্বিতীয় ধারায় রাজ্য সরকার ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিকে রোগ ছড়িয়ে পড়া আটকাতে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ ও বিধি তৈরির অধিকার দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছেঃ

যখনই কোনও রাজ্য সরকারমনে করবে মহামারী ছড়িয়ে পড়বার সম্ভাবনা রয়েছে এবং যে আইন রয়েছে, তার দ্বারা এই ছড়িয়ে পড়া নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়, তখন সরকার নিজে বা কোনও ব্যক্তিকে অধিকার দানের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করতে পারে। এই পদক্ষেপ প্রকাশ্য নোটিস দানের মাধ্যমে হবে।

রাজ্য সরকারের হাতে যেসব অগাধ ক্ষমতা দেওয়া রয়েছে, তার মধ্যে থাকছে রেল বা অন্য কোনও পরিবহণে যাতায়াতকারীদের পরীক্ষা, পরীক্ষক আধিকারিকদের সন্দেহ হলে, তাদের আলাদা করে হাসপাতাল বা অন্য কোনও অস্থায়ী থাকার ব্যবস্থা করা।

৩ নং ধারায় এই আইনের বিধি অমান্য করলে শাস্তির বন্দোবস্তও করা হয়েছে। এঁদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৮৮ নং ধারায় (সরকারি আধিকারিকের নির্দেশ অমান্য করা) ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।

৪ নং ধারায় এই আইন বলবৎকারী আধিকারিকদের আইনি সুরক্ষা দেবার কথা বলা হয়েছে।

আইন কার্যকর করার উদাহরণ

২০১৮ সালে গুজরাটের বদোদরার জেলা কালেক্টর এই আইনের আওতায় নোটিফিকেশন জারি করে ঘোষণা করেন ওয়াগোড়িয়া তালুকের খেদকর্মাসিয়া গ্রামকে কলেরা অধ্যুষিত বলে ঘোষণা করেন। তার আগে সেখানে ৩১ জনের মধ্যে এই রোগের লক্ষণ দেখা গিয়েছিল।

২০১৫ সালে চণ্ডীগড়ে ম্যালেরিয়া ও ডেঙ্গির মোকাবিলায় এই আইন প্রয়োগ করা হয় এবং আধিকারিকদের এ সম্পর্কিত নোটিস জারি করা হয়। তাঁদের নির্দেশ দেওয়া হয় আইন অমান্যকারীদের ৫০০ টাকার চালান কাটতে।

২০০৯ সালে পুনেতে সোয়াইন ফ্লু আটকাতে গোটা শহরের সমস্ত হাসপাতালগুলিতে পরীক্ষার জন্য ২ নং ধারা প্রয়োগ করা হয় এবং সোয়াইন ফ্লুকে অবশ্য জ্ঞাপনীয় রোগ বলে চিহ্নিত করা হয়।

coronavirus
Advertisment