শুক্রবার সকালে কর্পোরেট কর কমানোর ব্যাপারে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তা ক্রমহ্রাসমান বৃদ্ধির সঙ্গে যুঝতে থাকা দেশীয় অর্থনীতির পক্ষে এক দারুণ চমক হতে পারে।
জানা গিয়েছে সরকার জাতীয় সংস্থাগুলির কর ৩০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২২ শতাংশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ ছাড়া ১ অক্টোবরের পর যে সব কোম্পানি তৈরি হয়েছে, তারা যদি ২০২৩ সালের মধ্যে উৎপাদন শুরু করে, তাদের ক্ষেত্রে এই করের পরিমাণ হবে মাত্র ১৫ শতাংশ। উল্লেখ্যে, এর পরের বছরই দেশের পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন।
এ খবর প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই স্টক এক্সচেঞ্জে ব্যাপক সাড়া পড়ে যায়, কারণ অধিকাংশ প্রতিষ্ঠিত কোম্পানিই কর ছাড়ের ফলে লাভবান হবে।
কর্পোরেট করে ছাড় কিসের লক্ষ্যে?
মূলত কর্পোরেট ট্যাক্সের হার কম রাখা হয় বেসরকারি ক্ষেত্রে লগ্নিতে উৎসাহ দেবার জন্য। ভারতীয় অর্থনীতির ক্রমহ্রাসমান পরিস্থিতির জন্য ব্যক্তি ক্ষেত্রে ভোগের হার কমাকে যেমন দায়ী করা হয়, তেমনই দায়ী করা হচ্ছে বেসরকারি ব্যবসায়ে লগ্নি কমে আসাকেও। অন্য যে দুটি কারণ বৃ্দ্ধির ক্ষেত্রে দায়ী বলে ধরা হয়, সেই সরকারি খরচ এবং রফতানি, এ দুয়েরই এখন বৃদ্ধিতে উৎসাহদানকারী অবস্থা নেই। সরকারি খরচ আর্থিক ঘাটতির জন্য চাপের মুখে, অন্যদিকে রফতানি স্থির অবস্থাতেই রয়েছে।
আরও পড়ুন, অভিন্ন দেওয়ানি বিধি নিয়ে বিতর্ক কোথায়, পরিস্থিতিই বা কী?
কর্পোরেট করে ছাড় দেবার উদ্দেশ্য বেসরকারি বিনিয়োগকে উৎসাহ দান। দীর্ঘমেয়াদি এই প্রক্রিয়া বর্তমান এবং নতুন ব্যবসাকে লগ্নি ও উৎপাদনে উৎসাহী করবে, যার ফলে কাজের সুযোগ তৈরি হবে।
এর মানে কি জিএসটি কাউন্সিল জিএসটি হার না-ও কমাতে পারে?
জিএসটি-র হারে ব্যাপক কোনও বদল সম্ভবত জিএসটি কাউন্সিল ঘটাবে না, কারণ কেন্দ্র ও রাজ্য উভয় পর্যায়েই আর্থিক চাপ রয়েছে।
সরকার কি কর্পোরেট করে ছাড় না দিয়ে জিএসটি-র হার কমাতে পারত বা আয়করে ছাড় দিতে পারত?
সরকারি হিসেবে, সাম্প্রতিকতম কর্পোরেট কর ছাড়ের ফলে সরকারে ঘর থেকে যাবে ১.৫ লক্ষ কোটি টাকা। যে কেউ জিজ্ঞাসা করতেই পারেন অপ্রত্যক্ষ কর (জিএসটি)-এ ছাড় দিয়ে বা সরাসরি ব্যক্তিগত আয়করে ছাড় দিয়ে অর্থনীতিতে আরও বেশি প্রভাব ফেলা যেতে পারত কিনা।
আরও পড়ুন, কে এই রাজীব কুমার, যাঁকে হন্যে হয়ে খুঁজছে সিবিআই?
ব্যক্তিগত আয় বা জিএসটি-তে ছাড় দিলে তাৎক্ষণিক ভাবে আর্থিক ক্ষেত্রে প্রভাব বাড়ত কারণ তার ফলে উপভোক্তারা খরচের বেশি সুযোগ পেতেন, জিনিসপত্রের দামও কমত। ভোগের পরিমাণ বাড়লে ব্যবসায়ীরা জমে থাকা পণ্য বিক্রি করতে পারতেন এবং সম্ভাব্য নতুন লগ্নির ক্ষেত্র তৈরি হত।
তাহলে আয়কর বা জিএসটি-তে ছাড় নয় কেন?
এর সম্বাব্য দুটি কারণ রয়েছে। প্রথমত সরকারের অর্থনীতির হাল সম্পর্কে নিজস্ব ধারণা। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সঙ্গে আলোচনায় দেখা গিয়েছে, কেউ কেউ বিশ্বাস করেন যে ভারতের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের চাবিকাঠি লুকিয়ে আছে লগ্নির চাহিদার উপর। সরকারও যদি তেমন মনে করে, তাহলে কর্পোরেট ট্যাক্সে ছাড় অগ্রাধিকার পাবে।
অন্য কারণটি এত তত্ত্বগত নয়, বাস্তবের ভূমিতে দাঁড়িয়ে। আয়কর ছাড়ের সুবিধা পেতেন কেবল তাঁরাই, যাঁরা আয়কর দিয়ে থাকেন, যে সংখ্যাটা ভারতীয় অর্থনীতিতে অতীব নগণ্য। ফলে আয়কর ছাড়ের প্রভাব কেবলমাত্র সেটুকুতেই সীমাবদ্ধ থাকত।
জিএসটি-র ক্ষেত্রে করছাড়ের সুবিধা পাওয়া মুশকিল কারণ এ ব্যাপারে শুধু কেন্দ্রের হাতে পুরোটা নেই, রাজ্যগুলিও বড় ভূমিকা নিয়ে থাকে।
শেষত, এ তর্কও থাকবে যে কর্পোরেট করে ছাড় দিয়ে যতটা জোয়ার ভারতীয় অর্থনীতিতে এল, তা থেকে বেশি সুফল পাওয়া যেত আয়কর বা জিএসটি-তে ছাড় দিলে। কিন্তু মনে রাখতে হবে, লগ্নির সিদ্ধান্ত দীর্ঘমেয়াদি সিদ্ধান্ত এবং কর্পোরেট করে ছাড় দেওয়া হলে তা ভারতীয় অর্থনীতির পক্ষে বেশি সুফলদায়ী হবে।
Read the Full Story in English