Omicron Variant: ছড়াচ্ছে ওমিক্রন। ঝোড়ো হাওয়ার গতিতে বলা যায়। দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আসা করোনার এই ভ্যারিয়েন্ট ইতিমধ্যেই ভারত সহ ৩০টি দেশে, সদর্পে। ফলে চিন্তায় অনেকেরই চিৎ হয়ে পড়বার উপক্রম হয়েছে। এই ভাইরাস কি ভ্যাকসিনকে কড়ে আঙুলে নাচিয়ে ছু়ড়ে ফেলে দিচ্ছে, নাকি ভ্যাকসিন নেওয়া থাকলে নো-চিন্তার ব্যাপার, নানা তথ্য, নানা কথা সামনে আসছে। ওমিক্রন বা ওমাইক্রন সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা তথ্যভাণ্ডার তৈরি করছেন। জোরদার ভাবে চলছে সেই কাজ। এখনও পর্যন্ত যে ডেটা হাতে এসেছে তা থেকেও এই ভাইরাস বিষয়ে একটা জের টানা যেতে পারে। টানতে হচ্ছেও। কারণ, করোনায় মানুষ মোটেই দেরি করতে রাজি নয়। অসংখ্য প্রশ্নের কিছু উত্তর যদি বেরিয়ে না আসে তা হলে মাথার ঘায়ে পাগল কুকুর হওয়ার পরিস্থিতি হতে পারে।
তথ্য কী বলছে?
প্রমাণ প্রাথমিক ভাবে যা হাতে এসে পৌঁছেছে, সেই দিকে নজর দিলে দেখা যাবে, ইউরোপে ওমিক্রন আক্রান্ত ৭০ জনের মধ্যে ৩৫ জনেরই কোনও উপসর্গ দেখা যায়নি। মানে, অর্ধেক রোগী অ্যাসিমটোম্যাটিক। ইউরোপিয়ান সেন্টার ফর ডিজিজের আরও তথ্য হল, যাঁদের উপসর্গ দেখা দিয়েছে, তাঁদের কেউই হাসপাতালে ভর্তি হননি, মানে কোনও চরম পরিস্থিতির ব্যাপার ঘটেনি, মৃত্যুরও প্রশ্ন উঠছে না এর ফলে।
যদিও ইউরোপীয় ওই সংস্থা বলছে, আরও রোগীর তথ্য প্রয়োজন এই বিষয়ে নিঁখুত সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর জন্য। এতে আরও অনেকটাই সময়ের দরকার রয়েছে। তারা জানিয়েছে, এখনও পর্যন্ত যাঁরা ওমিক্রন আক্রান্ত হয়েছেন, তাঁদের বেশির ভাগটাই কমবয়সি। তাঁদের সকলেই পুরো মাত্রায় ভ্যাকসিন নেওয়া। হতে পারে যে ভ্যাকসিনের জোরে এটি জোরে কামড়াতে পারেনি।
দক্ষিণ আফ্রিকায় ওমিক্রন আক্রান্তের সংখ্যা লাফ দিয়ে বাড়ছে। ভ্যাকসিন নিয়েছেন এর মধ্যে প্রায় সকলেই, তাঁদের উপসর্গও দেখা গিয়েছে নাম-মাত্র। আটলান্টা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ডক্টর কার্লোস ডেল রিও বলছেন, ওমিক্রনে মৃদু উপসর্গ দেখা যাচ্ছে। কিন্তু একটা ব্যাপারে সতর্ক করতে হচ্ছে যে, বহু সংখ্যক রোগীর বয়স কম, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরাও রয়েছেন এই তালিকায়, ভাল সংখ্যাতেই।
ভাইরাস সম্পর্কে
ওমিক্রন যখন পৃথিবীতে তির বেগে বীরের মতো ছড়াচ্ছে, তখন বিজ্ঞানীরা এই ভাইরাসটির গভীরে নেমে পড়েছেন। তাঁরা বলছেন করোনাভাইরাসের ৫০ বার বদল ঘটে এর জন্ম। এর স্পাইক প্রোটিন, যা কোষে ভাইরাসের সেঁধিয়ে যাওয়ার জন্য দায়ী, বদলেছে ৩০ বার। পেন ইনস্টিটিউট অফ ইমিউনোলজির ডিরেক্টর ড. জন ওয়েরি বলছেন, যখন ভাইরাসের মিউটেশন বাড়তে থাকে, সেটি দুর্বল হয়ে পড়ে, এটাই স্বাভাবিক।
বিজ্ঞানীদের একাংশের মত, বেশ কয়েক মাস ধরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তলানিতে থাকা কোনও রোগীর শরীরে ভাইরাসের বদল ঘটতে ঘটতে ওমিক্রন এসে হাজির হয়েছে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অতি-অল্প থাকা এইডস রোগীর শরীরে এই ঘটনা ঘটে থাকতে পারে বলে অনেকের মত। কারণ, দক্ষিণ আফ্রিকায় এইডসের ভাল প্রকোপ।
ওমিক্রনই কি এবার কোভিড-পৃথিবীতে মূল ভ্যারিয়েন্ট?
ওমিক্রন ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট টুক করে ওভারটেক করে যাবে, এটাই এখন বিজ্ঞানী মহলে পুরোদম আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে। যদি এটি ডেল্টাকে হারিয়ে দেয় শেষ পর্যন্ত, এবং মৃদু অসুখের জন্ম দিতে থাকে, তা হলে কিন্তু এই ভাইরাস একটি টার্নিং পয়েন্টের সূচনা করবে আমাদের এই কোভিড-ধরাধামে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের পাবলিক হেলথ এজেন্সি বলছে, কয়েক মাসে ইউরোপের মোট কোভিড সংক্রমণের অর্ধেকে পৌঁছে যাবে ওমিক্রন সংক্রমণ। এর উপসর্গ মৃদু হলেও, নজরের নয়ন তিলমাত্র এটি থেকে সরালে চলবে না। ভ্যাকসিনের দুটি ডোজ কিংবা বুস্টার নেওয়া থাকলেও নয়। হাত ধোয়া, মাস্ক পরা, ভিড় এড়ানো, সামাজিক দূরত্বের উপখ্যানে দ্য এন্ড করে দিলে চলবে না মোটেই।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন