অতিমারী শুরুর আগেই খোলা জায়গায় বায়ুদূষণের পরিমাণ এতটাই ছিল যে তাতে বছরে ৯০ লক্ষ মানুষের মৃত্যু ঘটত। এখন দুটি নতুন গবেষণায় দেখা যাচ্ছে যেসব কোভিড ১৯ রোগীরা বায়ু দূষণ বেশি এমন জায়গায় বাস করেন, সেখানে তাঁদের মৃত্যুহার বেশি।
বায়ু দূষণ নানাভাবে মানবদেহের ক্ষতি করে। গাড়ি ও কারখানায় জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোর ফলে ধূলিকণা ও অতিক্ষুদ্র কণা তৈরি হয়। প্রতিবার প্রশ্বাস গ্রহণের ফলে এই কণাগুলি শরীরে প্রবেশ করে এবং হৃদযন্ত্রের সমস্যা, স্ট্রোক, অ্যাজমা, নিউমোনিয়া এবং লাং ক্যানস্যারের ঝুঁকি তৈরি হয়।
এই কণাগুলি এতই ক্ষুদ্র যে তারা শরীরের সর্বত্র পৌঁছতে পারে। বায়ু দূষণ নিয়ে যত গবেষণা হচ্ছে, ততই এর সঙ্গে যুক্ত রোগের তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে- এখন এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে কোভিড ১৯-ও।
কোভিড ১৯ কীভাবে হামের টীকাকরণ কর্মসূচি ব্যাহত করছে?
সেন্টার ফর সায়েন্স অ্যান্ড ডেমোক্র্যাসির রিসার্চ ডিরেক্টর গ্রেচেন গোল্ডম্যান বলেছেন, সাম্প্রতিকতম বিজ্ঞান থেকে দেখা যাচ্ছে বায়ু দূষণের কোনও নিরাপদ মাত্রা নেই।
নয়া যে গবেষণাগুলি হয়েছে- তার একটি আমেরিকার হারভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এবং অন্যটি ইতালির ইউনিভার্সিটি অফ সিয়েনা থেকে। সেগুলিতে দেখানো হয়েছে বায়ুদূষণ ও দ্রুত ছড়াচ্ছে এমন শ্বাসজনিত রোগ একসঙ্গে কতটা মারাত্মক হতে পারে।
হারভার্ডের গবেষকরা দেখেছেন দীর্ঘকালীন বায়ুদূষণের ফলে প্রতি কিউবিক মিটারে যদি ১ মাইক্রোগ্রাম ক্ষুদ্রকণার বৃদ্ধি হয়, তাহলে মৃত্যুর আশঙ্কা ১৫ শতাংশ বেড়ে যায়। এই গবেষণা এখনও পিয়ার রিভিউয়ের স্তরে যায়নি, তবে একাধিক বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন এ পরিসংখ্যান বিস্ময়কর নয়।
কোভিড ১৯ সকলকে সমানভাবে প্রভাবিত করে না। যাঁরা খুব ভোগেন, মনে করা হয় তাঁদের ক্ষেত্রে ভাইরাস ঊর্ধ্ব শ্বাসনালীতে পৌঁছে গিয়েছে- যে কারণে গলা ব্যথা হয় এবং সেখান থেকে নিম্ন শ্বাসনালীতে পৌঁছয়, যার ফলে ফুসফুসে প্রদাহ হয়- যার জেরে মৃত্যু হতে পারে।
কোভিড ১৯ ও বয়স্কদের করণীয়- বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণ
সিয়েনা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা লিখেছেন, বায়ু দূষণের ফলে ঊর্ধ্ব শ্বাসনালীর প্রতিরোধের প্রথম স্তরটিই ক্ষতিগ্রস্ত হয়, ফলে যাঁরা দূষণপ্রবণ এলাকায় বাস করেন, তাঁরা এ রোগে বেশি শিকার হন।
আগের তথ্যও এই বক্তব্যকেই শক্তিশালী করছে। ২০০৩ সালে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে বেশি বায়ুদূষণে সার্সে মৃত্যু বেশি হয়েছে। একাধিক গবেষণায় দেখা গিয়েছে ইনফ্লুয়েঞ্জা জাতীয় রোগের জন্য বায়ুদূষণ দায়ী।
কোনও শহর বা রাজ্যের দরিদ্রতর এলাকায় বায়ুদূষণ বেশি। গোল্ডম্যান বলছেন, “ভাইরাস কাদের ক্ষতি করবে সে সম্পর্কিত অবিচারের এটা আরেকটা স্তর।” বায়ুদূষণ থেকে লকডাউনের কারণে বড় শহরগুলি রক্ষা পাচ্ছে বলে মৃত্যুর সংখ্যা কিছুটা কমবে, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি বায়ুদূষণ হ্রাসই দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলবে।
কোভিড ১৯: ফলস নেগেটিভ টেস্টের বিপদ
নীতিপ্রণেতারা জানেন এর জন্য কী করতে হয়- গণপরিবহণের লভ্যতা বাড়ানো, পরিবহণ যানের বৈদ্যুতিকীকরণ, পাওয়ার প্ল্যান্ট ও কারখানায় নিষ্কাশনের নিয়ম স্থির করা বা তার মূল্য ধার্য করা, এবং ইস্পাত ও সিমেন্টের মত দূষণকারী শিল্পের পরিবর্তে নয়া প্রযুক্তি উদ্ভাবন।
এর পর থেকে হয়ত প্রভাবশালী ব্যক্তিদের কেউ কেউ বায়ুদূষণ ও অসুস্থতার সম্পর্ক নিয়ে আগের চেয়ে বেশি কার্যকর হবেন। চিনের ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেসের প্রতিনিধি তথা চিনের সুপ্রিম কোর্টের উপদেষ্টা কাই জুয়েন বলছেন, বহু মানুষের প্রাণের বিনিময়ে আমরা এ শিক্ষা পেয়েছি। আমার মনে হয় পরিবেশের সুরক্ষা কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের কাছে আগের চেয়ে বেশি জায়গা পাবে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন