Advertisment

সেক্স হরমোনের কারণেই কি কোভিড সংক্রমণে মহিলাদের মৃত্যুহার কম? 

এমন সম্ভাবনার কথাও উঠে আসছে, যেখানে বলা হয়েছে মহিলাদের সেক্স হরমোন সংক্রমণ মোকাবিলায় পুরুষের থেকে বেশি কার্যকর।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Sex Hormone

ইস্ট্রোজেন ট্রায়াল আরও বেশি পরিমাণ পুরুষদের মধ্যে করবার প্রস্তুতি চলছে

এখনও পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে, কোভিড-১৯ সংক্রমণে পুরুষের মৃত্যুহার মহিলাদের তুলনায় বেশি। এর কারণ সম্পর্কে এখনও কোনও সিদ্ধান্তে না আসা গেলেও, আমেরিকায় গত দুদিনের বিভিন্ন গবেষণায় বোঝার চেষ্টা করে হচ্ছে এর কারণ নারী শরীরে ইস্ট্রোজেন ও প্রজেস্টেরন, এই দুটি সেক্স হরমোনের মধ্যে নিহিত রয়েছে কিনা।

Advertisment

প্রবণতা ও তত্ত্ব

বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যাচ্ছে এই সংখ্যাগত প্রবণতাটা দেশ ও এলাকাভিত্তিতে একই রকম। ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি চিনা গবেষকরা উহান, হুবেই ও সম্পূর্ণ চিনের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছেন সে দেশে পুরুষের মৃত্যুহার ২.৮ শতাংশ, মহিলাদের ১.৭ শতাংশ।

হিউম্যান চ্যালেঞ্জ ট্রায়াল কী, তা বিতর্কিতই বা কেন?

Advertisment

এর পর ইতালি, ইরান, দক্ষিণ কোরিয়া, জার্মানি, ফ্রান্স এবং ব্রিটেনও যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতেও একই প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ব্রিটেনের জাতীয় পরিসংখ্যান দফতর দেখিয়েছে, কোভিড-১৯-এ মহিলাদের চেয়ে পুরুষের মৃত্যুহার প্রায় দ্বিগুণ।

অস্ট্রেলিয়ার স্বাস্থ্য দফতর দেখাচ্ছে ৭০-৭৯ ও ৮০-৮৯ বছর বয়সীদের মধ্যে পুরুষের মৃত্যুহার বেশি। ভারত এখনও কোভিড-১৯ সংক্রমণ ও মৃত্যুর লিঙ্গগত হিসাব প্রকাশ করেনি।

এই স্পষ্ট প্রবণতা থেকে নানা রকম তত্ত্ব উঠে আসছে, তার মধ্যে রয়েছে এমন সম্ভাবনার কথাও, যেখানে বলা হয়েছে মহিলাদের সেক্স হরমোন সংক্রমণ মোকাবিলায় পুরুষের থেকে বেশি কার্যকর।

জীববিদ্যা সম্পর্কিত যে সব তত্ত্ব সামনে আসছে তার মধ্যে একটিতে বলা হয়েছে একজন মহিলার জিনগত কাঠামোয় দুটি এক্স ক্রোমোজোম থাকে, পুরুষের থাকে একটি। এক্স ক্রোমোজোমের সঙ্গে যেহেতু প্রতিরোধ ক্ষমতা যুক্ত থাকে সে কারণে মনে করা হচ্ছে, মহিলাদের প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি হবে।

আরেকটি তত্ত্ব জীবনচর্যার সঙ্গে যুক্ত। যেহেতু মনে করা হয়- পুরুষরা বেশি ধূমপান করেন এবং ঝুঁকি নেন- এর মধ্যে সংক্রমণ প্রতিরোধী ব্যবস্থা যথাযথ না গ্রহণ করাও রয়েছে।

ভারতের সর্বত্র একই পরিমাণ টেস্টের প্রয়োজন নেই, বলছেন বিশেষজ্ঞ

হরমোন

ইস্ট্রোজেন ও প্রজেস্টেরন দুটি মুখ্য সেক্স হরমোন যা নারীর বৈশিষ্ট্য গঠন করে। ইস্ট্রোজেনের নারীর শারীরিক গঠন তৈরি করে এবং তার প্রজনন ব্যবস্থাও বহাল রাখে। প্রজেস্টেরন অস্থায়ী এন্ডোক্রিন গ্ল্যান্ড থেকে নিঃসৃত হয়, যা ঋতুচক্রের দ্বিতীয় ভাগে নির্মিত হয়, এবং নিষেকের পর সম্ভাব্য গর্ভাবস্থার জন্য শরীরকে প্রস্তুত করে। পুরুষের শরীরেও ইস্ট্রোজেন ও প্রজেস্টেরন তৈরি হয়, তবে তার পরিমাণ অত্যল্প।

এখন আমেরিকায় দুটি দল পরীক্ষা করে দেখছে যে এই হরমোনগুলি নারীকে কোভিড-১৯-এর সঙ্গে লড়াইয়ে প্রস্তুত করে কিনা। নিউ ইয়র্কের স্টোনি ব্রুক বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি দল ইতিমধ্যেই পুরুষ কোভিড-১৯ রোগীদের মধ্যে সামান্য পরিমাণ ইস্ট্রোজেন দিতে শুরু করেছেন। অন্য একটি দল, লস এঞ্জেলেসের সিডার্স সিনাই মেডিক্যাল সেন্টার করোনাভাইরাস সংক্রমিত পুরুষদের মধ্যে প্রজেস্টেরনের কনডাক্ট ট্রায়াল শুরু করেছেন।

ইস্ট্রোজেন ট্রায়াল আরও বেশি পরিমাণ পুরুষদের মধ্যে করবার প্রস্তুতি চলছে। মার্কিন ন্যাশনাল লাইব্রেরি অফ মেডিসিন বলেছে, এই গবেষণার উদ্দেশ্য হল কোভিড ১৯ রোগী বা সম্ভাব্য রোগীদের ত্বকে ইস্ট্রোজেন দিয়ে দেখা যে সাতদিনের মধ্যে কোভিড -১৯ উপসর্গ দ্রুত কমে কিনা।

নিউ ইয়র্ক টাইমস সিডার্স-সিনাইয়ের প্রোজেস্টেরন গবেষণার মুখ্য গবেষক ডক্টর সারা গন্ডেহারিকে উদ্ধৃত করেছে। তিনি বলেছেন “আইসিইউতে মহিলাদের চেয়ে পুরুষদের অবস্থা খারাপ হচ্ছে, এবং গর্ভবতী মহিলাদের (যাঁদের দেহে ইস্ট্রোজেন ও প্রজেস্টেরন দুটি হরমোনই রয়েছে) কোভিড সংক্রমণ সামান্য। নিউ ইয়র্ক টাইমসকে তিনি বলেন, তাহলে মহিলাদের কিছু সুরক্ষা রয়েছে, গর্ভাবস্থার কিছু সুরক্ষা রয়েছে, সে কারণেই আমরা হরমোনের ব্যাপারটা ভাবছি।”

পাল্টা যুক্তি

মহিলাদের শরীরে ইস্ট্রোজেন ও প্রজেস্টেরন তৈরি হয় তাঁদের প্রজননকালীন বয়সে, দুটির মাত্রাই মেনোপজের পর অনেকটা কমে যায়। তাহলে এই দুই হরমোনের জন্যই যদি মহিলাদের মধ্যে মৃত্যুহার কম হত, সেক্ষেত্রে বয়স্কা নারীদের ক্ষেত্রে এই প্রবণতা দেখা যাওয়ার কথা নয়। বয়স্কা মহিলাদের মধ্যে বেঁচে যাওয়ার প্রবণতা বয়স্ক পুরুষের থেকে বেশি বলে দেখা যাচ্ছে।

করোনামৃত্যুর ৬০ শতাংশই মহারাষ্ট্র ও গুজরাটে

কিছু বিশেষজ্ঞ, যাঁরা প্রতিরোধক্ষমতার সঙ্গে লিঙ্গপার্থক্য নিয়ে গবেষণা করছেন, তাঁরা এ ব্যাপারে বেশি আশা করতে নিষেধ করেছেন বলে নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। সাব্রা ক্লেইন জনস হপকিনস ব্লুমবার্গ স্কুল অফ পাবলিক হেলথে এ বিষয়ে গবেষণা করেন। তিনি নিউ ইয়র্ক টাইমসকে বলেছেন, “আমরা এই ধারাটা সর্বব্যাপী দেখতে পাচ্ছি। বয়স্ক পুরুষরা সামঞ্জস্যবিহীনভাবে আক্রান্ত হচ্ছেন, এবং তা থেকে আমার মনে হচ্ছে এটা জিনগত ব্যাপার বা অন্য কিছু, শুধু হরমোন সংক্রান্ত নয়।”

পুরুষদের মধ্যে সামঞ্জস্যবিহীন মৃত্যুর ঘটনা ৭০-৮৯ বছর বয়স্কদের মধ্যে বেশি তা অস্ট্রেলিয় সরকারের প্রকাশিত তথ্য থেকে জানা যাচ্ছে।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন

coronavirus COVID-19
Advertisment