Advertisment

আপৎকালীন পরিস্থিতিতে বন্দিমুক্তি

মুক্তি প্রক্রিয়া শুরুর আগে আর্থার রোড জেলে বন্দিসংখ্যা ছিল জেলের ধারণক্ষমতার ৪ গুণ- ৮০৪ জনের জায়গায় ৩৭১৮ জন।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Coronavirus in prison

আর্থার রোড জেলে ১৫৮ জন বন্দি ও ২৬ জন জেলকর্মীর মধ্যে সংক্রমণ দেখা গিয়েছে

মঙ্গলবার মুম্বই সেন্ট্রাল জেল যা আর্থার রোড জেল নামে পরিচিত, সেখানে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঘটনা ঘটেছে। মহারাষ্ট্র সরকার এর পর একটি সার্কুলার জারি করে জেলে বন্দিদের অর্ধেককে অস্থায়ী জামিন বা আপৎকালীন প্যারোলে মুক্তি দেওয়ার কথা জানিয়েছে। মোট ১৭ হাজার বন্দিকে ছাড়ার কথা, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ছাড়া হয়েছে ৭০০০ জনকে।

Advertisment

কী কারণে এই পদক্ষেপ?

গত কয়েকদিন ধরে আর্থার রোড জেলে ১৫৮ জন বন্দি ও ২৬ জন জেলকর্মীর মধ্যে সংক্রমণ দেখা গিয়েছে। এ ছাড়া বাইকুল্লা কারাগারে ৫৪ বছর বয়সী এক মহিলা বন্দির মধ্যেও সংক্রমণ ধরা পড়েছে। এর পরই মঙ্গলবারের সার্কুলার।

মার্চ মাসে সুপ্রিম কোর্ট জেলে ভিড় কমাবার নির্দেশে দিয়েছিল। শীর্ষ আদালতের পর্যবেক্ষণ ছিল, তিক্ত সত্যিটা হল আমাদের জেলগুলি ভিড়াক্রান্ত, সেখানে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা বন্দিদের পক্ষে সম্ভব নয়। মহারাষ্ট্রের জেলগুলিতে যতজন থাকা সম্ভব তার পাঁচগুণ বন্দি রয়েছে। এই রাজ্যই প্রথম বন্দিদের ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে।

আরও পড়ুন, অর্থমন্ত্রীর ঘোষণায় মাঝারি, ক্ষুদ্র ও অতি ক্ষুদ্র উদ্যোগগুলি কী পেল?

২৫ মার্চ একটি উচ্চ ক্ষমতাশীল কমিটি যেসব বন্দির সাত বছরের নিচে কারাদণ্ড হয়েছে, তাঁদের ছেড়ে দেওয়ার সুপারিশ করে। সেখানে আরও বলা হয়েছিল কয়েদিদের আপৎকালীন প্যারোলে ছাড়ার বিষয়টি কয়েকটি শর্তের উপর নির্ভরশীল। ২৮ মার্চ জেলা আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষ বিচারাধীন বন্দিদের ছাড়ার ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়া শুরু করে। এরপর ৮ মে রাজ্য সরকার মহারাষ্ট্র প্রিজনস (Mumbai Furlough and Parole) আইন সংশোধন করে, এবং কয়েদিদের একাংশকে মুক্তি দেওয়ার জন্য নোটিফিকেশন জারি করে।

কতজনকে ছাড়া হবে, এখনও কতজনকে ছাড়া হয়েছে?

সোমবার কারা দফতর যে রিপোর্ট দিয়েছে, ২৫ মার্চ ও ৮ মে-র সিদ্ধান্তের সূত্রে তাতে ৫১০৫ জন বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে এবং আরও ৩১০৭ জনকে মুক্তির প্রক্রিয়া চলছে। এ ছাড়া মঙ্গলবারের নির্দেশের ভিত্তিতে আরও ৯৫২০ জনে মুক্তি দেওয়া হবে। ৩৫২৩৯ জন বন্দির অর্ধেক, মোট ১৭৬৪২ জনকে রাজ্যের ৬০ টি জেলে লকডাউনের আগে রাখা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার মুক্তি প্রাপ্তের সংখ্যা ৭০০০ ছাড়িয়েছে, এর মধ্যে ৫২০০ জনকে অস্থায়ী জামিনে এবং ১৮০০ জনকে আপৎকালীন প্যারোলে।

মঙ্গলবারের নির্দেশ সমস্ত বিচারাধীন বন্দিকেই মুক্তির কথা বলা হয়েছে। আগের বারের নির্দেশে বলা হয়েছিল যাঁরা সাত বছরের কম সময়ের কারাদণ্ড ভোগ করছেন তাঁদের ছাড়া হবে, তবে হত্যা, ধর্ষণ, অপহরণ, ব্যাঙ্ক জালিয়াতি, বড় ধরনের আর্থিক দুর্নীতি, অর্থ পাচার, সন্ত্রাস দমন আইন, শিশুদের উপর যৌন লাঞ্ছনা, ও বিদেশি নাগরিকদের ছাড়া হবে না। সেখানে আরও বলা হয়েছিল, যেসব জেলবন্দিরা রাজ্যের বাইরে থাকেন, তাঁদের লকডাউনের পর ও গণপরিবহণ চালু হলে ছাড়া হবে।

এই মুক্তি সাময়িক। প্রাথমিক ভাবে, জামিন এবং প্যারোল ৪৫ দিনের জন্য অথবা মহামারী রোগ আইন রাজ্য থেকে অপসারিত হবার পর, যা আগে হবে সেই পর্যন্ত কার্যকর। ৪৫ দিনের প্যারোল পরে ৩০ দিনের জন্য বাড়ানো হবে, তবে জেলবন্দিদের ব্যারাকে ফিরতে হবে।

মুক্তির জন্য এত সময় লাগছে কেন ?

সরকার যখন বন্দিদের চিহ্নিত করার প্রক্রিয়া চালাচ্ছে, তার আগে থেকেই জামিন ও প্যারোলের প্রক্রিয়া চলছে। জামিনের নির্দেশ সংশ্লিষ্ট আদালত দেবে, প্যারোল স্যাংশন করবেন জেল কর্তৃপক্ষের আধিকারিক।

আরও পড়ুন, এক দেশ, এক রেশন কার্ডের অর্থ কী?

কারা দফতরের এক বরিষ্ঠ আধিকারিকের কথায়, “যদিও তাঁদের মুক্তির সিদ্ধান্ত আগেই নেওয়া হয়েছে, তা হলেও বন্দিদের নির্দিষ্ট আদালতে আবেদন জানাতে হবে। সমস্ত রেকর্ড খতিয়ে দেখে ও সমস্ত আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতে সময় লাগবে। জেলের সুপার প্যারোল দেওয়ার অধিকারী, কিন্তু তাতেও পেপারওয়ার্কের সময় লাগবে।” মুক্তি প্রক্রিয়ায় আরও বাধা রয়েছে। এটা এমন একটা সময়ে শুরু হয়েছিল, যখন লকডাউনের বিধিনিষেধ তত কঠোর ছিল না। বন্দিদের মুক্তি দেওয়ার পরে তাঁদের গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়ার কোনও ব্যবস্থা নেই, এ অবস্থায় কয়েকটি অলাভজনক সংস্থা লাতুরের মত কয়েকটি জেলায় এগিয়ে এসেছে। কয়েকজন বন্দিকে রাস্তায় ঘুরে বেড়াতে দেখা গিয়েছে।

পুনেতে একজন মুক্তিপ্রাপ্ত কয়েদিকে এক দল লোক হত্যা করেছে, মনে করা হচ্ছে পুরনো শত্রুতাই এর কারণ। মুম্বইয়ে একজন মুক্তিপ্রাপ্ত বন্দিনী তাঁর বাড়ি পালঘরে পৌঁছতে পারেননি, তাঁকে এক রাতের জন্য আশ্রয় দিয়েছিলেন একজন মহিলা জেলার, তারপর আরেক সদ্যমুক্তিপ্রাপ্ত বন্দিনী তাঁকে নিজের বাড়িতে নিয়ে যান।

মহারাষ্ট্রের জেলে ভিড় কীরকম?

লকডাউনের আগে রাজ্যের জেলে যতজন ধরা সম্ভব তার ৫০ শতাংশ বেশি বন্দি থাকতেন। কেন্দ্রীয় জেলে ভিড়ের গড় হিসেব এর চেয়ে অনেকটাই কম, সে হিসেবে ১০ জনের জায়গায় এক একটি কারাগারে ১৩ জন থাকেন।

মুক্তি প্রক্রিয়া শুরুর আগে আর্থার রোড জেলে বন্দিসংখ্যা ছিল জেলের ধারণক্ষমতার ৪ গুণ- ৮০৪ জনের জায়গায় ৩৭১৮ জন। পুনের ইয়েরওয়াড়া জেলে ছিলেন ৫৭১৭ জন, ধারণক্ষমতা ২৪৪৯। রাজ্যের থানে কেন্দ্রীয় কারাগার, কল্যাণ জেলা কারাগার ও বাইকুল্লা জেলের অবস্থাও তথৈবচ।

 অন্য রাজ্যের জেলবন্দিদের মধ্যেও কি করোনা ছড়িয়েছে?

উত্তর প্রদেশ, কর্নাটক, মধ্যপ্রদেশ ও দিল্লির জেলে কোভিড-১৯ সংক্রমণ দেখা গিয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পর প্রায় সব রাজ্যই উচ্চপর্যায়ের কমিটি তৈরি করেছে এবং কাদের ছাড়া যায় তা খতিয়ে দেখছে।

সুপ্রিম কোর্ট বলেছে ছাড়ার ক্ষেত্রে বিভাগ তৈরির সময়ে যেন তা অপরাধের প্রকৃতি, কারাদণ্ডের সময় বা পূর্বতন অপরাধের রেকর্ডের উপরেই সীমিত না থাকে, অধিকাংশ রাজ্যই তা মেনে চলছে এবং তাদেরঅ মুক্তি দিচ্ছে যাদের সাত বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হয়েছে।

হরিয়ানা এবং ওড়িশা ৬৫ বছরের বেশি বয়সী বন্দিদের অস্থায়ী ভাবে মুক্তি দিচ্ছে, তবে তাতে ব্যতিক্রমও রয়েছে। গোয়া বিচারাধীন পর্যালোচনা কমিটি তৈরি করেছে, যা সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুসারে প্রতিজেলায় তৈরি করা হচ্ছে, যারা বিচারাধীনদের মুক্তির দায়িত্ব নেবে।

সারা দেশের বিভিন্ন কমিটি ১৪ ধরনের জেলবন্দিদের মুক্তির নির্দেশ দিতে পারে, যার মধ্যে মহিলা ও দুরারোগ্য ব্যাধিতে ভোগা ব্যক্তিরাও থাকতে পারেন।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন

Jail COVID-19
Advertisment