ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেলের জন্মদিন, কোভিড কীভাবে কেড়ে নিচ্ছে তাঁর উত্তরাধিকার?

তাঁর গোটা কর্মজীবন জুড়ে তিনি যে বিষয়টির উপর জোর দিয়েছিলেন, তা আজও গুরুত্বপূর্ণ- হাত ধোয়া।

তাঁর গোটা কর্মজীবন জুড়ে তিনি যে বিষয়টির উপর জোর দিয়েছিলেন, তা আজও গুরুত্বপূর্ণ- হাত ধোয়া।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
florence nightigal

সেন্ট টমাস হাসপাতালে অবস্থিত ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল মিউজিয়মের তিনটি প্যাভিলিয়নে তাঁর জীবন বর্ণিত রয়েছে

আধুনিক নার্সিংয়ের প্রবক্তা ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেলের ২০০ তম জন্মবার্ষিকী ১২ মে। কোভিড-১৯ অতিমারীর সময়ে তাঁর ভূমিকা অবশ্য স্মরণীয়।  তা সত্ত্বেও  তাঁর জন্মবার্ষিকী হিসেবে যা ঘটছে, তাকে ইংরেজি ভাষায় আইরনিক ছাড়া আর কিছু বলা চলে না।

Advertisment

নাইটিঙ্গেল (১৮২০-১৯১০)-এর ছিল অসামান্য গাণিতিক প্রতিভা। তিনিই প্রথম স্বাস্থ্যকর্মী যিনি পরিসংখ্যানকে কাজে লাগিয়ে দেখিয়েছিলেন সংক্রমণ কমাতে পারলে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিষয়ের উন্নতি ঘটে। তাঁর গোটা কর্মজীবন জুড়ে তিনি যে বিষয়টির উপর জোর দিয়েছিলেন, তা আজও গুরুত্বপূর্ণ- হাত ধোয়া। মজার কথা হল, এই অতিমারীর জেরে তাঁর জন্মবার্ষিকী অনুষ্ঠানই শুধু বাতিল হতে বসেনি, তাঁর উত্তরাধিকারের একটা অংশও ঝুঁকির মুখে। লন্ডনের ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল মিউজিয়মে এখন আর দর্শক আসেন না, যার ফলে মিউজিয়মের অস্তিত্ব সংকটের মুখে। তারা ঘোষণা করেছে, তারা এখন বাঁচার লড়াই লড়ছে এবং সে কারণে তহবিল সংগ্রহের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।

নার্স ও গণিতজ্ঞ

১৮৪০ সালে নাইটিঙ্গেল তাঁর বাবা-মায়ের কাছে অনুরোধ করেছিলেন যেন তাঁকে গণিত পড়তে দেওয়া হয়। তাঁর মা কর্ণপাত করেননি। তবে এ বিষয়ে তাঁকে টিউটর রেখে পড়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। ১৮৫১ সালে বাবা-মায়ের কথা না শুনে তিনি নার্সিং পড়তে যান যা তখনকার দিনে খুব একটা সম্মানীয় পেশা বলে স্বীকৃত ছিল না।

Advertisment

আরও পড়ুন, শ্রম আইনে বদলের অর্থ কী?

ক্রিমিয়ার যুদ্ধ (১৮৫৪-৫৬)-র সময়ে সরকার যখন নার্স আহ্বান করে এবং তাঁকে সুপারিনটেনড্যান্ট অফ দি ফিমেল নার্সিং এসট্যাবলিশমেন্ট অফ দি ইংলিশ জেনারেল হসপিটাল অফ টার্কি পদে নিয়োগ করা হয়, সে সময়ে তাঁর নিজস্ব পদ্ধতি কাজে আসে। সেখানেই তিনি লেডি উইথ দি ল্যাম্প খেতাব অর্জন করেন, কারণ তিনি রাতের বেলা একটি লন্ঠন হাতে রোগীদের শয্যার পাশে ঘুরে বেড়াতেন। এখানেই তিনি রাশিবিজ্ঞান নিয়ে তাঁর নিজস্ব কাজ করেছিলেন।

যখন তিনি সেখানে পৌঁছেছিলেন, তখন কলেরা ও টাইফাসের মত রোগ হাসপাতালগুলিতে চূড়ান্ত মাত্রায় পৌঁছিয়েছে। নাইটিঙ্গেল এ সম্পর্কিত পরিসংখ্যান সংগ্রহ করেন, মৃত্যুর হার হিসেব করেন এবং দেখান যে নিকাশি পদ্ধতির উন্নতি ঘটালে মৃত্যুর সংখ্যা কমবে। ১৮৫৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মৃত্যুহার ৬০ শতাংশ থেকে কমে ৪২.৭ শতাংশে পৌঁছয়, বসন্তকালে তা কমে দাঁড়ায় ২.২ শতাংশে, জানাচ্ছে সেন্ট অ্যান্ড্রুজ আর্কাইভ।

publive-image

তিনি পরিসংখ্যান দিয়ে গ্রাফিক্স তৈরি করেন, যার মধ্যে সবচেয়ে কীর্তিমান হল পোলার এরিয়া ডায়াগ্রাম (চিত্রিত) যা থেকে মৃত্যুহারের বিভিন্নতা বোঝা যায়। সেখানে দেখা যাচ্ছে, অসুস্থতায় মৃত্যুহার ক্ষতজনিত মৃত্যুহারের তুলনায় অনেক বেশি।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে এক ইমেলে  Florence Nightingale: Avenging Angel গ্রন্থের রচয়িতা হাগ স্মল তাঁর পরিসংখ্যানগত বিশ্লেষণের দুটি ধাপ বর্ণনা করেছেন। "প্রথমত, এতে দেখা গিয়েছিল বিভিন্ন হাসপাতালে মৃত্যুহারে ব্যাপক ফারাক রয়েছে, ফলে মৃত্যুর কারণ হাসপাতালের স্থানীয় নির্দিষ্টতা। দ্বিতীয়ত, এতে দেখানো হয়েছিল একটি হাসপাতালের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটালে সেখানে মৃত্যুহার কমছে, ফলে, ওই স্থানীয় নির্দিষ্টতা হল হাসপাতালের স্বাস্থ্যব্যবস্থা।"

আরও পড়ুন, নর্দমার জল থেকে করোনা সংক্রমণের আশঙ্কার কথা বলছেন গবেষকরা

স্মল বলছেন "কোভিড-১৯-এর ক্ষেত্রে প্রথম ধাপটা গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন দেশে মৃত্যুহারে ব্যাপক পারাক রয়েছে এবং পরিসংখ্যানগত বিশ্লেষণ দেখাতে পারবে যে কোন দেশ ভাল করেছে এবং কোন দেশ কী ভুল করেছে।"

কোভিড ১৯, এক ভিলেন

সেন্ট টমাস হাসপাতালে অবস্থিত ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল মিউজিয়মের তিনটি প্যাভিলিয়নে ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেলের জীবন বর্ণিত রয়েছে। ২০২০ সালে এখানে বিশাল অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা ছিল, যেহেতু এটি আন্তর্জাতিক নার্স ও ধাত্রীবর্ষ হিসেবে পরিগণিত (প্রতি বছর ১২ মে আন্তর্জাতিক নার্স দিবস হিসেবে পালিত হয়)। ২০২০ সাল জুড়ে বিভিন্ন প্রদর্শনী ও অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা ছিল বলে জানিয়েছেন মিউজিয়মের ডিরেক্টর ডেভিড গ্রিন। মিউজিয়ম বন্ধ হয়ে গিয়েছে ১৭ মার্চ।

গ্রিন বলেছেন, "দীর্ঘমেয়াদি বন্ধ থাকা ও পর্যটন বাজারের যে আগাম ছবি দেখা যাচ্ছে তাতে মিউজিয়মের ভবিষ্যৎ এখন ঝুঁকির মধ্যে কারণ আমরা মিউজিয়মের প্রবেশমূল্যের উপরেই অনেকটা ভরসা করি। সরকার বা অন্য কোথাও থেকে আমরা অর্থ পাই না।" ওয়েবসাইটে মিউজিয়মের জন্য অনুদানের আবেদন করা হয়েছে।

স্মল এক প্রশ্নের উত্তরে বলেছেন, সেন্ট টমাস হসপিটালের মিউজিয়ম যদি বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে আশা করি তিনি অন্য কোথাও ঠাঁই পাবেন। সম্ভবত সেখানে তাঁর নার্সিং সম্পর্কিত নয় এমন কাজ বিশেষ করে তাঁর পরিসংখ্যান এবং বৈপ্লবিক ১৮৭৫ সালের জনস্বাস্থ্য আইনের খশড়া স্থান পাবে, যা বহু মানুষের প্রাণ বাঁচিয়েছিল।"

আরও পড়ুন, “দু বছরের আগে ভ্যাকসিনের সম্ভাবনা নেই”

আইনের খশড়ায় নাইটিঙ্গেলের প্রভাব সম্পর্কে স্মল লিখেছেন যে এ বিষয়টি ব্রিটেনের বস্তিতে নিকাশির বিষয়টিকে যুক্ত করেছিল। পোলার এরিয়া ডায়াগ্রামের মাধ্যমে তিনি দেখিয়েছিলেন নিকাশি ব্যবস্থা কীভাবে সেনাবাহিনীতে মৃত্যুর সংখ্যা কমিয়েছে।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন

coronavirus COVID-19