করোনাভাইরাস অতিমারী ছড়িয়ে পড়া আটকাতে সারা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ বিশ্ব অর্থনীতিতে ব্যাপক কুপ্রভাবের সম্ভাবনা জেনেও লকডাউনের পদক্ষেপ নিয়েছে। সম্সত রকমের চলমানতা স্তব্ধ করে দিয়ে ভাইরাস সংক্রমণ আটকাবার এই নীতি সতর্কতামূলক নীতি হিসেবে পরিচিত। খাদ্য নিরাপত্তা এবং পরিবেশ আইনের ক্ষেত্রে এই নীতি এতদিন প্রযোজ্য হলেও এর সমর্থকরা এখন বলছেন সরকারকে এই নীতি জনস্বাস্থ্যের মত ক্ষেত্রেও, বর্তমান সংকট সময়ে কঠোরভাবে কাজে লাগাতে হবে।
সতর্কতামূলক নীতি বলতে কী বোঝায়?
এই নীতি অনুসারে, প্রত্যাশিত ঘটনা যে সময়ে ক্ষতিকারক কিন্তু অনিশ্চিত, সেই চূড়ান্ত ঝুঁকির সময়ে কর্তৃপক্ষকে সতর্কতা নীতি পালন করতে হবে। এর ফলে সম্ভাব্য ক্ষতি এড়াতে, যদি সতর্কতা মূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করলে ক্ষতি এড়ানোর সম্ভাবনা থাকে, তাহলে সে রাস্তাই অবলম্বন করতে হবে। যেমন কোনও হারিকেন জাতীয় ঝড়ের সময়ে সেখানে থেকে সম্ভাব্য ক্ষতির হিসেব নিকেশ না করে ঝড়ের স্থান ত্যাগ করতে হয়, এখানেও সেই নীতি অবলম্বন করবার কথা বলা হয়েছে।
করোনায় মৃত্যু সঠিকভাবে চিহ্নিত করা কেন জরুরি
ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে, কিন্তু সে নিয়ে চূড়ান্ত প্রমাণ নেই সেরকম ক্ষেত্রে সামাজিক দায়িত্বের জায়গা থেকে নীতিপ্রণেতারা এই পদ্ধতি অবলম্বন করে এসেছেন। যেমন যতক্ষণ কোনও প্রডাক্ট পরীক্ষার মাধ্যমে নিরাপদ না প্রমাণিত হচ্ছে তা ব্যবহারের অনুমতি দেন না, সেইরকম।
সমালোচকরা বলেন এই নীতি অবৈজ্ঞানিক এবং সারা পৃথিবীর যেসব রাজনীতিবিদরা নিয়মতান্ত্রিকতার বিরুদ্ধে তাঁরাও এর সমালোচনা করেন।
১৯৭০ ও ৮০তে জার্মানিতে প্রথমবার এই নীতি গৃহীত হয়। অনিশ্চিত পরিবেশ ও স্বাস্থ্য সমস্যার ক্ষেত্রে এই নীতি প্রয়োগ করা হয়। ১৯৯২ সালে রাষ্ট্র সংঘ পরিবেশ ও উন্নয়ন সম্পর্কিত রিও ঘোষণায় এই নীতি গ্রহণ করে। মাসট্রিক্ট চুক্তিতেও এই নীতি অবলম্বন করা হয়।
ইউনেস্কোর এর কার্যকরী সংজ্ঞা বিশ্লেষণ করতে গিয়ে বলেছে, যখন মানুষের কাজকর্ম বৈজ্ঞানিকভাবে ক্ষতিকর বলে সম্ভব মনে হচ্ছে, কিন্তু তার কোনও নিশ্চিত বৈজ্ঞানিক প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে না, সে সময়ে সেই সম্ভাব্য ক্ষতি দূর করতে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
করোনা অতিমারীর সময়ে এর কার্যকারিতা
অতিমারীর শুরুর দিকে, চিন, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান, সিঙ্গাপুরের মত দেশে এই পদ্ধতি অতীব কার্যকর হয়, কোয়ারান্টিন, সামাজিক দূরত্ব এবং প্রচুর পরিমাণ পরীক্ষার নীতি গ্রহণের মাধ্যমে। দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে এই দেশগুলি সংক্রমণের হার এবং মৃত্যু সংখ্যা অন্য পশ্চিমি দেশগুলি, যারা দেরিতে পদক্ষেপ করা শুরু করে, তাদের থেকে কমাতে সক্ষম হয়েছে।
মহামারীর প্রাথমিক মার সামলে ওঠার পর কী হতে পারে?
ব্রিটেনে, সরকার যখন গোষ্ঠী প্রতিরোধের অপরীক্ষিত তত্ত্বের উপর নির্ভর করে গড়িমসি করেছিল, তখন তাদের কাজকর্মের সমালোচনা করা হয়েছে, উদাহরণ দেওয়া হয়েচে এশিয় দেশগুলির, যারা ব্যাপক অনুশীলনের মধ্যে দিয়ে গিয়েছে। আমেরিকায়, ট্রাম্প প্রশাসনকে এর ঝুঁকি কমিয়ে দেখানোর জন্য সমালোচিত হতে হয়েছে। এমনকি মার্চের শেষ দিকে ট্রাম্প ইস্টারের আগে সামাজিক দূরত্ববিধি তুলে নেবার পক্ষে সওয়াল করেছিলেন।
এখন গোটা পৃথিবী জুড়ে আলোচনা চলছে, কীভাবে লকডাউন তুলে নেওয়া যায়। সতর্কতামূলক নীতির সমর্থকরা সে সময়ে সরকারগুলির কাছে আবেদন করছেন ভবিষ্যৎ কুপ্রভাবকে কীভাবে সীমিত ও সংক্ষিপ্ত রাখা যায়, সে ব্যাপারে চিন্তাভাবনা করতে, এবং অপরীক্ষিত অনুমান নির্ভর না হতে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন