কেন ভারতে লকডাউনের আবহে বাড়ল সংক্রমণ, মার খেল অর্থনীতি

যথাসময়ের আগেই, এবং কঠোরভাবে, লকডাউন বলবৎ হওয়া সত্ত্বেও ভারতে ক্রমাগত বেড়েছে করোনা সংক্রমণ, মেলেনি কোনও আর্থিক সুবিধাও। এর ব্যাখ্যা করলেন প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসু

যথাসময়ের আগেই, এবং কঠোরভাবে, লকডাউন বলবৎ হওয়া সত্ত্বেও ভারতে ক্রমাগত বেড়েছে করোনা সংক্রমণ, মেলেনি কোনও আর্থিক সুবিধাও। এর ব্যাখ্যা করলেন প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসু

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
covid-19 india economy

মুম্বই থেকে বাড়ি ফেরার ট্রেন ধরার অপেক্ষায় পরিযায়ী শ্রমিকরা। ছবি: প্রদীপ দাস, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস

ভারতে দ্রুতগতিতে বাড়ছে COVID-19 এর সংক্রমণ। মোট সংক্রমিতের সংখ্যার তালিকায় চড়চড় করে উঠে আসার দৌলতে রাশিয়াকে পেছনে ফেলে ভারত বর্তমানে পৃথিবীতে তৃতীয় স্থানে, সামনে রয়েছে স্রেফ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ব্রাজিল।

Advertisment

কিন্তু এর অন্যরকম ব্যাখ্যা করছেন বিশ্ব ব্যাঙ্কের প্রাক্তন মুখ্য অর্থনীতিবিদ তথা সিনিয়র ভাইস-প্রেসিডেন্ট, এবং কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সি মার্কস প্রোফেসর কৌশিক বসু। তাঁর মতে, "সরাসরি COVID সংক্রমণের হিসেব করলে ত্রুটির সম্ভাবনা মাথায় রাখতে হয়, কাজেই তা না করে জনসংখ্যার নিরিখে হিসেব করলে (যা আমাদের করা উচিত), ভারত ও চিন সমেত আফ্রিকা এবং এশিয়ার সবকটি দেশের পরিস্থিতি অনেকটাই ভালো"।

publive-image প্রতি ১ মিলিয়ন (১০ লক্ষ) মানুষ পিছু ভারতে সংক্রমিতের সংখ্যা

তবে কৌশিকবাবু একথাও জানিয়েছেন, "এই দুই অঞ্চলের মধ্যেও ভারতের পারফরম্যান্স উল্লেখযোগ্য রকমের খারাপ। প্রতি ১ মিলিয়ন (১০ লক্ষ) করোনা রোগী পিছু মৃত্যুহারের নিরিখে (যাকে পরিভাষায় বলা হয় Crude Mortality Rate) চিন, ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া, আফ্রিকার অধিকাংশ দেশ, এবং অন্যান্য অনেক দেশের তুলনায় পিছিয়ে ভারত।"

Advertisment

আরও পড়ুন: ‘বায়ুবাহিত’ করোনাভাইরাসকে কি আদৌ আটকাচ্ছে ঘরে বানানো মাস্ক?

উঠতি অর্থনীতির দেশগুলির মধ্যে ভারতই প্রথম লকডাউন ঘোষণা করা সত্ত্বেও কেন এমনটা হলো?

কৌশিকবাবুর কথায়, "লকডাউন অবশ্যম্ভাবী ছিল, কিন্তু আমাদের অঞ্চল অনুযায়ী তার নিয়মকানুন সাবধানে গুছিয়ে নিতে হতো। ভারতের অর্থনীতি চক্রাকারে নিম্নগামী, এবং অতিমারী চক্রাকারে ঊর্ধ্বগামী... ২৪ মার্চ যে লকডাউন ঘোষিত হয়, তা সংক্রমণ তো রুখতে পারেই নি, উল্টে আরও খারাপ হয়েছে পরিস্থিতি। লকডাউন শুরু হওয়ার দুই সপ্তাহ পর থেকেই বাড়তে শুরু করে সংক্রমণের হার, যা এখনও ভীতিজনক ভাবেই বেড়ে চলেছে।"

কেন হলো এমন?

এ ব্যাপারে মোটামুটি সকলেই একমত যে ভারতের লকডাউন ছিল বিশ্বের কঠোরতম। মাত্র চার ঘণ্টার নোটিশে যখন লকডাউন বলবৎ করা হয়, তখন স্বাভাবিকভাবেই প্রত্যাশা ছিল যে সারা দেশে কাজকর্ম এবং জনসাধারণের যাতায়াত আচমকা থমকে যাওয়ার, এবং সরবরাহ শৃঙ্খল ব্যাহত হওয়ার প্রেক্ষিতে নির্দিষ্ট কিছু পরিকল্পনা নেবে সরকার। কিন্তু কোনও সহায়ক পদক্ষেপের প্রমাণ মেলেনি।

কৌশিকবাবু লিখেছেন, "আমার কাছে যাবতীয় তথ্য না থাকায় আমি বলতে পারব না কী পরিকল্পনা ছিল, কিন্তু টেস্টিং বাড়ানোর চেষ্টা, চিকিৎসা ক্ষেত্রের বিস্তার করা, এবং আটকে পড়া লক্ষ লক্ষ দরিদ্র শ্রমিকদের সাহায্যার্থে কোনোরকম সহায়ক পদক্ষেপের অভাব সত্যিই আশ্চর্যজনক। অধিকাংশ দেশেই লকডাউনের পর যাতে আটকে পড়া মানুষজন বাড়ি ফিরতে পারেন, সেই উদ্দেশ্যে ন্যূনতম যানবাহন চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়। কিন্তু ভারতে নিজেদের বাড়ি থেকে বহুদূরে আটকে পড়া বিপন্ন, ক্ষুধার্ত পরিযায়ী শ্রমিকদের সমস্যা সমাধানের চেষ্টার কোনও চিহ্নই দেখা যায়নি।"

তাদের ১৩ জুন সংখ্যার ৩০ নম্বর পৃষ্ঠায় 'দ্য ইকনোমিস্ট' পত্রিকা উল্লেখ করেছে যে লকডাউনের প্রথম দু'মাসে "চার হাজারেরও বেশি" নিয়ম লাগু করে ভারত, যার অনেক কটিই ছিল পূর্বে জারি করা নিয়মের সংশোধনী, এমনকি সংশোধনেরও সংশোধন।

কৌশিকবাবুর বক্তব্য, "যেভাবে লকডাউন কার্যকর করা হলো, তাতে লকডাউনই হয়ে দাঁড়ালো ভাইরাসের সংক্রমণের উৎস। গাদাগাদি করে মানুষকে এক জায়গায় রাখা, যাতে একে অপরকে সংক্রমিত করতে পারেন, এবং তারপর তাঁদেরকেই শয়ে শয়ে মাইল সফর করানোর ফলে অতিমারী পরিস্থিতি যতটা খারাপ হতে পারত, তার চেয়ে অনেক গুণ বেশি হয়েছে।"

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন