Advertisment

কেন সবচেয়ে বেশি ধাক্কা খেল অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ?

ব্যাঙ্কগুলি MSME দের ঋণ দিতে এ কারণেই রাজি হয় না যে সে ঋণ ফেরত পাওয়া যাবে না, কিন্তু তথ্য দেখাচ্ছে তুলনায় বড় সংস্থাই ঋণ ফেরত দেয়নি।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

কোভিড-১৯ অতিমারী অর্থনীতির সর্বক্ষেত্রে ব্যাপক ক্ষতি করেছে, তবে ভারতের মাঝারি, ক্ষুদ্র ও অতিক্ষুদ্র উদ্যোগ (MSMEs) ধাক্কা খেয়েছে সবচেয়ে বেশি। যেটুকু তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে, তা থকে সারা দেশের হাজার হাজার পরিযায়ী কর্মীরা যেভাবে আটকে রয়েছেন, তা থেকে বোঝা যাচ্ছে কোভিড-১৯ লকডাউনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এই মাঝারি, ক্ষুদ্র ও অতিক্ষুদ্র উদ্যোগই। গত ২৬ মার্চ প্রধানমন্ত্রী গরিব যোজনায় রিলিফ প্যাকেজ ঘোষিত হয়েছে, তেমনই দ্বিতীয় প্যাকেজেও প্রাথমিক গুরুত্ব দেওয়া হবে এই ক্ষেত্রকেই।

Advertisment

MSME-র সংজ্ঞা কী?

আগে MSME সংজ্ঞায়িত করা হত কারখানা ও যন্ত্রপাতিতে লগ্নির হিসেবের উপর নির্ভর করে। কিন্তু সে সংজ্ঞা দীর্ঘদিন ধরে সমালোচিত হয়েছে কারণ লগ্নির বিশ্বাসযোগ্যতা এবং তার অনুপুঙ্খ হিসেব কর্তৃপক্ষের কাছে থাকত না।

কোভিড অর্থনীতি- নিম্ন আয়ের কর্মীদের কাজ হারানোর আশঙ্কা বেশি

সে কারণেই ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা  বার্ষিক টার্নওভারকে হিসাবের ভিত্তি ধরে, যা জিএসটি বসানোর সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ ছিল। প্রস্তাবিত সংজ্ঞা, যা এখনও সরকারিভাবে অনুমোদিত নয়, সে হিসেবে একটি অতিক্ষুদ্র (micro) উদ্যোগে বার্ষিক টার্নওভার হতে হবে ৫ কোটি টাকার কম, ক্ষুদ্র (small) উদ্যোগের ক্ষেত্রে তা হতে হবে ৫ কোটি টাকা থেকে ৭৫ কোটি টাকার মধ্যে এবং মাঝারি উদ্যোগে এই পরিমাণ হতে হবে ২৫০ কোটি টাকার নিচে।

MSME

msme

msme data

 

msme data

ভারতে কত পরিমাণ MSME রয়েছে, তাদের মালিক কারা এবং সেগুলি কোথায় অবস্থিত?

সাম্প্রতিকতম (২০১৮-১৯)-এর MSME-র বার্ষিক রিপোর্ট অনুসারে দেশে মোট ৬.৩৪ কোটি এ ধরনের উদ্যোগ রয়েছে (চিত্র-২), যার ৫১ শতাংশ গ্রামীণ ভারতে অবস্থিত। সব মিলিয়ে এখানে ১১ কোটি মানুষ কর্মরত (চিত্র-৩), তবে ৫৫ শতাংশ কর্মসংস্থান ঘটে শহরাঞ্চলের MSME গুলি থেকে।

এই সংখ্যা থেকে বোঝা যাচ্ছে প্রতি MSME-তে গড়ে ২ জনের কম কর্মরত। এ থেকে একটা পর্যায়ে বোঝা যায় এগুলি কতটা ক্ষুদ্র। কিন্তু MSMEকে যদি অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি এই বিভাগে ভাগ করা যায় তাহলে যে ছবি পাওয়া যাবে, তা থেকে ছবিটা স্পষ্টতর হবে।

৪ নং চিত্রে দেখা যাচ্ছে MSME গুলির ৯৯.৫ শতাংশ পড়ে অতিক্ষুদ্র বিভাগে। অতিক্ষুদ্র উদ্যোগগুলি গ্রামীণ ও শহরাঞ্চলে সমবিভাজিত, ক্ষুদ্র ও মাঝার উদ্যোগের েবশিরভাগটাই শহরাঞ্চলে। অর্থাৎ, অতিক্ষুদ্র উদ্যোগগুলির সাধারণভাবে কোনও একজন পুরুষ বা মহিলা তাঁর বাড়ি থেকে চালান।

মাঝারি ও ক্ষুদ্র উদ্যোগগুলি, যা কিনা মোট MSME-র ০.৫ শতাংশ- সেখানে কাজ করেন প্রায় ৫ কোটি মানুষ। এই উদ্যোগগুলির জাতিগত বিভাজন করলে ছবিটা সম্পূর্ণ হবে। সমস্ত MSME-র প্রায় ৬৬ শতাংশের মালিকানা তফশিলি জাতি (১২.৫ শতাংশ), তফশিলি জনজাতি (৪.১ শতাংশ) এবং অন্যান্য পিছিয়ে পড়া শ্রেণি (৪৯.৭ শতাংশ)-র হাতে। সর্মীদের লিঙ্গগত বিভাজন মোটামুটি একই রকম, পুরুষ ৮০ শতাংশ, মহিলা ২০ শতাংশ।

কীভাবে করোনা সঙ্কট চিরদিনের মতো পাল্টে দিতে পারে খেলার দুনিয়া

ভৌগোলিক দিক থেকে যদি দেখা যায় ভারতের সাতটি রাজ্যে মোট MSME-র ৫০ শতাংশ অবস্থিত। এই সাত রাজ্য হল উত্তর প্রদেশ (১৪ শতাংশ), পশ্চিমবঙ্গ (১৪ শতাংশ), তামিলনাড়ু (৮ শতাংশ), মহারাষ্ট্র (৮ শতাংশ), কর্নাটক (৬ শতাংশ), বিহার (৫ শতাংশ) এবং অন্ধ্রপ্রদেশ (৫ শতাংশ)।

এই হিসেব থেকে বোঝা যাবে MSME-র সংকট কোথায় সবচেয়ে বেশি অনুভূত হতে চলেছে।

ভারতের MSME গুলি কী ধরনের সমস্যায় পড়ে?

প্রথম সমস্যা হল, এরা কোথাও নথিভুক্ত নয়। তার একটা বড় কারণ হল এরা বড়ই ক্ষুদ্র। এমনকি জিএসটি দেবার ক্ষেত্রে যে মাত্রা, তাও এই উদ্যোগগুলি পূরণ করে না। এই দৃশ্যমানতাহীনতাই এই ধরনের উদ্যোগগুলির মূল শত্রু।

ফর্মাল মানচিত্রের বাইরে থাকার ফলে তাদের কোনও হিসেব রাখতে হয় না, কর দিতে হয় না, বা কোনও নিয়মবিধি মানতে হয় না। এর ফলে তাদের খরচ কমে। কিন্তু এইরকম সংকটের সময়ে সরকারের সাহায্য করার ক্ষেত্রে এই বিষয়গুলি বাধা হয়ে দাঁড়ায়। যেমন, কিছু উন্নত দেশে সরকার ছোট সংস্থাগুলিকে সরাসরি  মজুরি ভরতুকি দেওয়ার চেষ্টা করেছে বা অতিরিক্ত ঋণ দেওয়ার চেষ্টা করেছে,কিন্তু তা সম্ভব হয়নি তার কারণ ক্ষুদ্রতর সংস্থাগুলিকে হিসেবের মধ্যে আনা যায়নি।

এরই সঙ্গে যুক্ত হয়েছে MSME গুলিতে অর্থ জোগানের অভাব। ২০১৮ সালের আন্তর্জাতিক ফিনান্স কর্পোরেশনের রিপোর্ট অনুসারে, ফর্মাল ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্রগুলি MSME-র প্রয়োজনীয় যত ঋণ দিতে সক্ষম, তার এক তৃতীয়াংশেরও কম (১১ লক্ষ কোটি টাকা প্রায়) গিয়েছে (চিত্র-৫)। অর্থাৎ MSME-র অর্থ আসে অসংগঠিত সূত্র থেকে এবং এ বিষয়টি এই কারণেই গুরুত্বপূর্ণ যা থেকে বোঝা যাবে যে রিার্ভ ব্যাঙ্ক যতই MSME গুলিকে নগদ জোগান দেওয়ার চেষ্টা করুক না কেন, তার প্রভাব হবে সীমিত।

কোভিড-১৯ : সরকারের আর্থিক প্যাকেজ যত দ্রুত ঘোষণা করা হয় ততই মঙ্গল

ব্যাঙ্কগুলি MSME দের ঋণ দিতে এ কারণেই রাজি হয় না যে সে ঋণ ফেরত পাওয়া যাবে না (৬নং চিত্র), কিন্তু তথ্য দেখাচ্ছে তুলনায় বড় সংস্থাই ঋণ ফেরত দেয়নি।

এই ক্ষেত্রে আরেকটা বড় সংকট হল MSME গুলেকে পেমেন্ট দিতে সকলেই দেরি করে, সে ক্রেতা (যার মধ্যে সরকারও রয়েছে) হোক বা জিএসটি রিফান্ড হোক।

 কোভিড-১৯ পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করে তুলল কীভাবে?

কোটাক ইনস্টিট্যুশনাল ইকুয়িটিজের শুভদীপ রক্ষিত বলেন, কোভিড-১৯-এর জেরে MSME গুলি ইতিমধ্যেই খারাপ অবস্থায় রয়েছে- তাদের আয় কমেছে এবং ক্ষমতানুগ উপযোগিতা হ্রাস পেয়েছে। সম্পূর্ণ লকডাউনের ফলে এদের অনেকের অস্তিত্বের সংকট নিয়েই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে কারণ সংকট উত্তীরণ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করার মত অর্থ এদের হাতে নেই। সম্প্রতি ক্ষুদ্র ও মাঝারি উৎপাদন সংস্থাগুলির জন্য করা এক সমীক্ষায় তিনি দেখেছেন, মাত্র ৭ শতাংশ বলেছেন, তাঁদের ব্যবসা বন্ধ হওয়ার পরও তিনমাস বা তের বেশি সময় তাঁরা টিকতে পারবেন। নতুন করে কাজ শুরু করার পক্ষে এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ শ্রমিক পাওয়া।

 কী করা যেতে পারে?

রিজার্ভ ব্যাঙ্ক capacity ক্ষেত্রে টাকা দেওয়ার চেষ্টা করলেও গঠনগত কারণেই তার ফলাফল হচ্ছে সীমিত। CRISIL ডিরেক্টর হেতাল গান্ধী মনে করেন এর কোনও সরল উত্তর নেই। সরকার জিএসটি এবং কর্পোরেট ট্যাক্সে ছাড় দিতে পারে, দ্রুত রিফান্ড দিতে পারে, MSME উৎপাদনের চাহিদা বৃদ্ধির জন্য গ্রামীণ ভারতে প্রধানমন্ত্রী-কিসান যোজনার মত মাধ্যমে নগদ জোগান দিতে পারে।

লকডাউনের আঁধারে বাংলার বই প্রকাশনার দুনিয়া

ঋণের নিশ্চয়তা কী?

অধিকাংশ ক্ষেত্রে MSME গুলিকে ঋণ দেওয়া হয়ে থাকে সম্পত্তির বিনিময়ে (কোল্যাটারাল হিসেবে), কারণ তাদের ক্যাশ ফ্লো সম্পর্কিত বিশ্লেষণ প্রায়শই পাওয়া যায় না- কিন্তু সংকটের সময়ে সম্পত্তির দাম কমে যাওয়ায় নতুন ঋণও তারা আর পায় না। MSME ঋণ শোধ না দিতে পারলে তা সরকার চুকিয়ে দেবে বলে নিশ্চয়তা দেয়। সেরকম ঘটলে সে হিসেব বাজেটের বিভাগীয় খরচে দেখানো হয়।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন

Lockdown COVID-19
Advertisment