সারা দেশে এক সপ্তাহ ধরে কোভিডের সংক্রমণ কমছে। সাপ্তাহিক পজিভিটি রেট স্থিতিশীল। সব ইঙ্গিত বলছে, কোভিডের তৃতীয় ঢেউ ছুঁড়ে ফেলেছে চূড়া। এখন নামছে। সে ক্ষেত্রে দ্বিতীয় তরঙ্গের অনেক পিছনে এটি থামতে চলছে। নতুন করে সংক্রমণ বাড়তে পারে, কিন্তু সেটি খুব বেশি বাড়াবাড়ি পর্যায়ে পৌঁছবে না বলেই মনে করা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার ২ লক্ষ ৫১ হাজার নতুন করোনা সংক্রমণ হয়েছিল সারা দেশে। শুক্রবার তা আরও কমেছে, ২ লক্ষ ৩৫ হাজার হয়েছে। দু'দিনের মধ্যে সংক্রমণ-হ্রাস ৬ শতাংশ। এক সপ্তাহ আগে যা ছিল দৈনিক ৩ লক্ষ ৪৭ হাজার। এ পর্যন্ত তৃতীয় তরঙ্গের সর্বোচ্চ সংখ্যা বলে মনে করা হচ্ছে এটিকে। আর দ্বিতীয় তরঙ্গের সংখ্যা-চূড়া ছিল দৈনিক ৪ লক্ষ ১৪ হাজার।
এখন যে পরিস্থিতি চলছে, মানে যে নিম্নগামী গতি, তা থেকে মনে করা হচ্ছে ভারতে ৮-১০ লক্ষের দৈনিক সংক্রমণের যে অনুমান করা হয়েছিল, তার কোনও সম্ভাবনা নেই। সেই দিক থেকে বিচার করলে ওমিক্রনে বিরাট বিরাট শৃঙ্গ জয় করা দেশগুলির চেয়ে এ দেশ হাল ভিন্নধর্মী। কারণ, সেই সব দেশের কোনওটিতে তৃতীয় তরঙ্গ দ্বিতীয়টির চেয়ে দ্বিগুণ, কোনওটিতে আবার তিন গুণ ঊর্ধ্বে ওঠে। তবে, এটা মনে রাখতে হবে আমাদের দেশে এই যে হিসেব সামনে আসছে, তা প্রকৃত নয়, কারণ বহু জনেরই কোভিড পরীক্ষা হয়নি। ওমিক্রন হয়ে অনেকের সেরে গিয়েছে। যেহেতু তা বেশির ভাগের মৃদু উপসর্গের জন্ম দিয়েছে, পরীক্ষা করার প্রয়োজনই হয়নি। অনেকের আবার কোনও উপসর্গের প্রশ্ন ওঠেনি। কখন ওমিক্রন ধরল আর কখন ছাড়ল রোগী নিজেই জানতে পারেননি।
সাপ্তাহিক পজিটিভিটি রেটের দিকে নজর দিলে দেখা যাবে ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে এক শতাংশের কম ছিল যা, তা দুরন্ত গতিতে বেড়েছে। এখন ১৭ শতাংশের আশপাশে ঘোরাফেরা করছে। কিন্তু এক সপ্তাহ ধরেই এমনটা চলছে, মানে এই পজিটিভিটি রেট বাড়েনি, স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে। এখানে বলে নিতে হবে-- প্রতিদিন ১৭ থেকে ১৮ লক্ষ নমুনা পরীক্ষা হয়েছে গড়ে, গত দু'সপ্তাহে।
আরও পড়ুন নয়া ওমিক্রন ছড়াচ্ছে ইউরোপে, কতটা চিন্তা, আমরা কি এর কোপে কাবু হব?
বেশির ভাগ রাজ্যে এক সপ্তাহ আগের তুলনায় অনেক কম সংক্রমণের সংখ্যা। এর জেরে জাতীয় পরিসরে কোভিডের হার কমে গিয়েছে, গত এক মাসের নিরিখে গ্রাফটা এই প্রথম মাথা নোয়াচ্ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। বৃহস্পতি বার সারা দেশে করোনা রোগীর সংখ্যা ২১ লক্ষ ৫ হাজারের কিছু বেশি। শুক্রবার যা হয়েছে ২০ লক্ষ ৪ হাজার কিছু বেশি। এক দিনে কমেছে-- ১ লক্ষ ১ হাজারের বেশি। চার দিন আগে যে সংখ্যাটা ছিল ২২ লক্ষ ৫০ হাজার। তৃতীয় তরঙ্গে সর্বোচ্চ বলে মনে করা হচ্ছে যাকে। আর দ্বিতীয় তরঙ্গে সক্রিয় করোনা রোগীর সংখ্যা ৩৭ লক্ষ স্পর্শ করেছিল। ফারাকটা নিশ্চয় স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে এই হিসেব থেকে, কোভিডের শিহণরটা কমছে বুঝতেই পারছেন পুরো মাত্রায়। তবে, কেরল এ বিচারে আলাদা, কারণ সেখানে তৃতীয় তরঙ্গের উত্থান শুরু হয়েছে দেরিতে। কেরলে ৫০ হাজারের বেশি দৈনিক সংক্রমণ এখন। শুক্রবার দৈনিক সংক্রমণ ৫৪ হাজার পাঁচশো ছাড়িয়েছে। তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশ, কর্নাটক, উত্তরপ্রদেশ, গুজরাত এবং মধ্যপ্রদেশের গ্রাফও চোখে পড়ার মতো নামছে না। কিন্তু বৃদ্ধিটাও মোটামুটি রোধ করা গিয়েছে। তবে অন্তত ১৬টি রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে সক্রিয় সংক্রমণের সংখ্যা নামছে। গত এক সপ্তাহ ধরেই।
মৃত্যুর সংখ্যা যদিও বাড়ছে। বৃহস্পতিবার যা পৌঁছেছে ৬২৭-এ। শুক্রবার সংখ্যাটা আরও বেড়ে হয়েছে ৮৭১। দ্বিতীয় ঢেউয়ে মৃত্যুর শিখর-সংখ্যা ছিল দৈনিক ৪ হাজার। স্বস্তির ছবিটা বেরিয়ে আসছে গ্রাফ থেকে। মানুষ চাইছে আতঙ্ক কাটিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে। মরিয়া অবস্থা। তৃতীয়ের পর চতুর্থ আসবে না তো, এই জল্পনা চলছে, করোনার নয়া কোনও ভ্যারিয়েন্ট আসবে কি আবার, এলে তা কতটা সহনীয় হবে সভ্যতার পক্ষে, এই ভয়ের পটভূমি তৈরি হয়ে গিয়েছে। তবে কি আমাদের জীবনের রং করোনা পেরিয়ে ফের জেগে উঠতে পারবে না?