দিল্লির নারেলায় কোভিড ১৯ কোয়ারান্টাইন কেন্দ্রের দায়িত্ব নিতে সেনাবাহিনীকে ডাকা হয়েছে। এ অবস্থায় অসামরিক কর্তৃপক্ষকে সেনা সাহায্যের বিষয়টি নিয়ে আসোচনা শুরু হয়েছে।
পদ্ধতিটা কী?
এসব ক্ষেত্রে অসামরিক কর্তৃপক্ষ সেনাবাহিনীকে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ, আবশ্যিক পরিষেবা বজায় রাখা, ভূমিকম্পের মত প্রাকৃতিক দুর্যোগে সাহায্য বা অসামরিক কর্তৃপক্ষকে অন্য ধরনের সাহায্যের জন্য ডাকতে পারে।
করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা ঠিক কেমন?
এ ব্যাপারে স্থানীয় সামরিক কর্তৃপক্ষকে সাহায্যের জন্য অনুরোধ জানাতে হয়। সশস্ত্র বাহিনীকে ফ্ল্যাগ মার্চ, ত্রাণ ও উদ্ধার, সরিয়ে নিয়ে যাওয়া ও আপৎকালীন সাহায্যের জন্য কাজে লাগানো যেতে পারে।
তবে কোভিড ১৯-এর ক্ষেত্রে বিষয়টি পৃথক, কারণ এখানে চিকিৎসার বিষয়টিই মুখ্য। এক্ষেত্রে সম্পদ নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে কেন্দ্রীয় ও বিচারবিভাগীয় স্তরে- কারণ এখন প্রয়োজন হল চিকিৎসক, উপকরণ ও চিকিৎসা ও শুশ্রূষাকেন্দ্র।
ট্রাম্পের হুমকি অর্থ বন্ধের- বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা চলে কী ভাবে?
এ অবস্থায় তাদের কাছ থেকে কী প্রত্যাশিত?
কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রিত মেডিক্যাল রিসোর্স ছাড়াও স্থানীয় ইউনিটগুলিকেও আইন শৃঙ্খলা রক্ষা, জনতা নিয়ন্ত্রণ, উত্তেজনা প্রবণ এলাকায় কারফিউ, সংক্রমিত এলাকা থেকে মানুষকে অন্য জায়গায় নিয়ে য়াওয়া, জল ও বিদ্যুতের মত প্রয়োজনীয় পরিষেবার সরবরাহ অক্ষুণ্ণ রাখা, আপৎকালীন খাদ্য ও বাসস্থানের বন্দোবস্ত, অত্যাবশ্যক পরিষেবা ফিরিয়ে আনা, আতঙ্ক প্রতিরোধ, চুরি ও লুঠ ঠেকানো, কোয়ারান্টিন ও ডিটেনশন কেন্দ্রগুলি পাহারা দেওয়া, ড্রোনের মাধ্যমে উপর থেকে নজরদারি, ইত্যাদি কাজে ব্যবহার করা হতে পারে।
সেনা নামানোর ব্যাপারে কোনও ঊর্ধ্বসীমা আছে?
কতদিনের জন্য বা কতজন সেনা নামানো যাবে, তার কোনও ঊর্ধ্বসীমা নেই। জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা কমিটি (NCMC), যার শীর্ষে রয়েছেন ক্যাবিনেট সচিব, সে সংস্থাই এ সিদ্ধান্ত নেবার অধিকারী।
আগের কোনও উদাহরণ রয়েছে যা এক্ষেত্রে প্রযোজ্য?
সুনামি বা সুপার সাইক্লোনের চেয়ে এবারকার পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। মূল তফাৎ হল বর্তমান পরিস্থিতিতে বিশেষজ্ঞরাই মূল, এবং তাঁদের করণীয় সাধারণ সেনারা করে উঠতে পারবেন না।
জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা কর্তৃপক্ষের ভূমিকা কী?
এই সংস্থা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের অধীন এবং বর্তমান পরিস্থিতিতে খুব একটা কাজে লাগানো হয়নি এদের। এবারকার পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য, স্বরাষ্ট্র, অসামরিক পরিবহণ ও প্রতিরক্ষামন্ত্রকই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। সেনাবাহিনী উচ্চপর্যায়ে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলছে।
সেনাবাহিনী এতদিন পর্যন্ত কী করেছে?
মুম্বই, জয়সলমীর, যোধপুর, হিন্ডন, মানেসর এবং চেন্নাইয়ে ৬টি কোয়ারান্টিন কেন্দ্র। ১৭০০-র বেশি জনকে এই কেন্দ্রে রাখা হয়, যাঁদের মধ্যে ৪০০ জনকে ছেড়ে দেওয়া হয়। তিনজনকে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
১৫ টি কেন্দ্রকে স্ট্যান্ডবাই হিসেবে রাখা হয়েছে, যেখানে ৭০০০ জনের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। এর মধ্যে ৬টি সেনা চালিত (বাবিনা, ঝাঁসি, বারমের, ভোপাল, কলকাতা, বিন্নাগুড়ি), বিমানবাহিনীর আরও ৬টি (ভাটিন্ডা, হায়দরাবাদ, দেওলালি, কানপুর, গোরখপুর ও আগ্রা) এবং নৌবাহিনীর ৩টি (বিশাখাপতনম, কোচি ও চিলকা)।
সশস্ত্র বাহিনীর ৫টি টেস্টিং ল্যাব এর অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে। এগুলি হল সেনা হাসপাতাল (রিসার্চ অ্যান্ড রেফারেল), দিল্লি ক্যান্টনমেন্ট, এয়ারফোর্স কমান্ড হাসপাতাল, ব্যাঙ্গালোর, এএফএমসি, পুনে, লখনউয়ের কমান্ড হাসপাতাল এবং উধমপুরের কমান্ড হাসপাতাল।
বিমানবাহিনীর বিশেষ বিমান মানুষকে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে গিয়েছে এবং চিকিৎসার উপকরণ পৌঁছে দিয়েছে। একটি C-17 Globemaster III ১৫ টন জিনিস চিনে পৌঁছে দিয়েছে এবং ১২৫ জন ভারতীয়কে সেখান থেকে ফিরিয়ে নিয়ে এসেছে।C-130J সুপার হারকিউলিস মালদ্বীপে ৬.২ টন ওষুধ পৌঁছে দিয়েছে। ১৩-২১ মার্চ পর্যন্ত মালদ্বীপে সেনার মেডিক্যাল টিম নিযুক্ত ছিল।
দেশের বিভিন্ন প্রান্ত ৬০ টন দ্রব্য বিমানবাহিনীর বিমানে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। ২৮টি বিমান ও ২১টি হেলিকপ্টার মজুত।
৬টি সেনা জাহাজ প্রতিবেশী দেশে সাহায্যের জন্য প্রস্তুত। মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান এবং আফগানিস্তানে পাঠানোর জন্য পাঁচটি মেডিক্যাল টিম তৈরি রয়েছে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন