Advertisment

গর্ভবতী মহিলা, মাতৃদুগ্ধ ও কোভিড সংক্রমণ

গর্ভবতী মহিলারা করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার ব্যাপারে বেশি ঝুঁকিপ্রবণ কারণ গর্ভাবস্থায় প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পায়।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Covid-19 Pregnancy transmission

প্রতীকী ছবি

কোভিড-১৯-এর ঝুঁকি গর্ভবতী মহিলাদের মধ্যে কেন বেশি? সদ্যোজাতের মধ্যে কীভাবে করোনাভাইরাস সংক্রমিত করে দিতে পারেন মা? এসবের উত্তর খুঁজতে গবেষণা জারি রয়েছে।

Advertisment

সম্প্রতি ল্যানসেট পত্রিকায় প্রকাশিত এক গবেষণায় দুজনের মাতৃদুগ্ধে কার্স কোভ ২ ভাইরাসের সন্ধান মেলার কথা জানানো হয়েছে। গবেষকরা দ্বিতীয় মায়ের ক্ষেত্রে পরপর চারদিন ধরে সার্স কোভ ২-এর রাইবোনিউক্লিক অ্যাসিডের সন্ধান পেয়েছেন। তা সত্ত্বেও সংক্রমিত মাতৃদুগ্ধ থেকে সন্তানের মধ্যে রোগ ছড়াতে পারে কিনা তা স্পষ্ট নয়। এতদিন পর্যন্ত মাতৃদুগ্ঘে ভাইরাসের উপস্থিতি ও সেখান থেকে শিশুর মধ্যে সংক্রমণ ছড়ানোর বিষয়টি নিয়ে প্রায় কিছুই জানা ছিল না।

করোনাভাইরাস ও গর্ভাবস্থা সম্পর্কে আমরা কী জানি

আমেরিকার সিডিসি জানিয়েছে, কোভিড-১৯ সংক্রমিত কেউ যদি সন্তানকে স্তনপান করান, তাহলে তাঁর মাস্ক পরে থাকা উচিত এবং প্রতিবার স্তনপান করানোর আগে হাত ধোয়া উচিত। এ ছাড়া তাঁর একটি নির্দিষ্ট ব্রেস্ট পাম্প ব্যবহার করা এবং নিয়ম মোতাবেক তা সাফ করা উচিত।

সিডিসি-র বক্তব্য মা থেকে সন্তানে কোভিড সংক্রমণ (ভার্টিকাল ট্রান্সমিশন) ঘটার কথা নয়। তারা বলছে, তবে জন্মের পরে সদ্যোজাত যদি কোনও সংক্রমিতের সংস্পর্শে আসে, সে মা বা কেয়ারগিভার যে কেউই, তাহলে সংক্রমণ সম্ভাবনা থাকে।

এপ্রিলের গোড়ায়, ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ হেলথকেয়ার কর্মী ও ধাত্রীবিশারদদের সম্ভাব্য ভার্টিকাল ট্রান্সমিশন-এর বিভিন্ন দিক নিয়ে প্রস্তুত থাকার প্রয়োজনীয়তার কথা বলে গাইডলাইন প্রকাশ করেছিল।

মা থেকে সন্তানে ভার্টিকাল ট্রান্সমিশন ঘটতে পারে জন্মের আগে, জন্মের ঠিক আগে বা ঠিক পরে, অথবা জন্মের পরে। গাইডলাইনে ভার্টিকাল ট্রান্সমিশনের সম্ভাবনার কথা বলা হয়েছিল, তবে সংক্রমিত গর্ভবতী ও সদ্যোজাতের অনুপাতের বিষয়টি যে অনির্ধারিত, সে কথাও উল্লেখ করা হয়েছিল।

গর্ভবতী মহিলারা করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার ব্যাপারে বেশি ঝুঁকিপ্রবণ কারণ গর্ভাবস্থায় প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পায়।

গর্ভবতী মহিলাদের অধিক ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরনের কারণে ঊর্ধ্বশ্বাসনালী ফুলে থাকে এবং তার ফলে ফুসফুসের স্ফীতিও কম হয় বলে তাঁদের সংক্রমণের সম্ভাবনা বেশি থাকে।

এপ্রিল মাসে জার্নাল অফ রিপ্রোডাকটিভ ইমিউনোলজিতে প্রকাশিত রিভিউ আর্টিকেলে বলা হয়েছিল, কোভিড ১৯ গর্ভবতী মহিলাদের প্রতিরোধ ক্ষমতায় বদল মা ও সন্তানের সুস্থতায় ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। এ ছাড়াও বলা হয়েছিল মায়ের সংক্রমণ ও তজ্জনিত প্রদাহ ফিটাসের বৃদ্ধিতে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।

সম্প্রতি শিকাগোর নর্থওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণায় ১৬ জন কোভিড-১৯ আক্রান্ত মহিলার প্রসবের পরেপরেই পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, এঁদের সকলের প্ল্যাজেন্টাতেই ক্ষত রয়েছে। এি গবেষণার সহ-লেখক ডক্টর অমিলি মিলার এক বিবৃতিতে বলেছেন, এটি একটি প্রাথমিক গবেষণা যার মাধ্যমে অতিমারীর সময়ে গর্ভবতী মহিলাদের উপর কীভাবে নজর রাখতে হবে, তার ছবি এর মাধ্যমে পাওয়া যেতে পারে।

ল্যানসেটের নতুন গবেষণায় কী বলা হয়েছে?

গবেষকরা দুজন সংক্রমিত মায়ের দুধের নমুনা সংগ্রহ করেন ভর্তি ও ডেলিভারির দিন। প্রথমজনের চারটি নমুনাই নেগেটিভ আসে। দ্বিতীয় জনের প্রসবের ১০, ১২ ও ১৩ দিনে ভাইরাসের সন্ধান মেলে। তাঁর পরে মৃদু কোভিড-১৯ উপসর্গও দেখা যায়।

যদিও মাতৃদুগ্ধে ভাইরাসের আরএনএ থাকলেও সদ্যোজাত তা পান করলে সংক্রমিত হবে কিনা সে ব্যাপারে নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না, তা সত্ত্বেও এই গবেষণা থেকে ভাইরাসের আরএনএ-র সম্ভাব্য অবস্থান জানা যাচ্ছে। যেমন, সার্স কোভ ২ ভাইরাসের আরএনএ মানুষের মলে উপস্থিত থাকা মানেই তা সংক্রামক নাও হতে পারে।

গবেষকরা বলছেন মাতৃদুগ্ধের নমুনা নিয়ে আরও গবেষণা করলে এর মাধ্যমে সংক্রমণ ছড়াতে পারে কিনা তা জানা যাবে।

COVID-19
Advertisment