Advertisment

অর্থমন্ত্রীর ঘোষণায় মাঝারি, ক্ষুদ্র ও অতি ক্ষুদ্র উদ্যোগগুলি কী পেল?

সরকার আশা করছে এই ক্রেডিট গ্যারান্টির ফলে এই এমএসএমই গুলিকে আরও ঋণ দিয়ে সাহায্য করা হলে তারা তা শোধ করতে পারবে।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
MSME Credit

দীর্ঘদিন ধরে বকেয়া এমএসএমইর সংজ্ঞাও বদল করা হয়েছে

অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ বুধবার বেশ কিছু আর্থিক প্যাকেজের বিস্তারিত বিবরণ পেশ করেছেন।

Advertisment

বুধবারের ঘোষণার সবচেয়ে বেশি জোর দেওযা হয়েছে মাঝারি, ক্ষুদ্র ও অতি ক্ষুদ্র উদ্যোগের উপর। এ ব্যাপারে ক্রেডিট গ্যারান্টিতে ব্যাাপক বৃদ্ধি করা হয়েছে। তবে যা ঘোষণা করা হয়েছে তার তুলনায় এতে আর্থিক খরচ অনেক কম।

publive-image

অর্থাৎ অর্থনীতিতে সরাসরি টাকা ঢালার বদলে বা এমএসএমই-কে বেল আউট প্যাকেজ না দিয়ে সরকার তাদের ঋণের ঝুঁকি নিজেদের কাঁধে নিচ্ছে যাতে তারা ব্যবসায়ে টিকে থাকতে পারে। এই ক্রেডিট গ্যারান্টির ফলে ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থা এমএসএমই ক্ষেত্রে ঋণের চাহিদা পূরণ করতে পারবে। (চার্ট ২)

publive-image

ক্রেডিট গ্যারান্টি কী?

এমএসএমই গুলিকে ঋণ মূলত দেওয়া হয় সম্পত্তির (কোল্যাটারাল হিসেবে) বিনিময়ে কারণ তাদের আর্থিক গতায়াতের বিশ্লেষণ বিস্তারিত ভাবে পাওয়া যায় না। কিন্তু সংকটের সময়ে, যেমন এই সময়ে, সম্পত্তির দাম কমে এবং তার ফলে এমএসএমই গুলি আর ঋণ পায় না। ব্যাঙ্কগুলি এই উদ্যোগগুলিকে ঋণ বাড়াতে চায় না।

সরকারি ঋণের নিশ্চয়তা দেওয়ার ফলে ব্যাঙ্কগুলি এবার নিশ্চিন্ত থাকবে যে এমএসএমই যদি ঋণ ফেরত না দিতে পারে, তাহলে সরকার সেই ঋণ ফেরত দেবে। যেমন কোনও সংস্থার ১ কোটি টাকার উপর যদি সরকার ১০০ শতাংশ ক্রেডিট গ্যারান্টি দেয়, তার অর্থ ব্যাঙ্ক ওই সংস্থাকে ১ কোটি টাকা ঋণ দিতে পারবে, এবং সংস্থা যদি সে ঋণ ফেরত না দিতে পারে, তবে সরকার সেই অর্থ ফেরত দেবে। এই গ্যারান্টি যদি ঋণের প্রথম ২০ শতাংশের ক্ষেত্রে দেওয়া হয়, তাহলে সরকার ২০ লক্ষ টাকা ফেরত দেওযার ব্যাপারে নিশ্চয়তা দিচ্ছে।

আরও পড়ুন, শিল্পে আত্মনির্ভরতা, ভারত কোথায় পিছিয়ে?

ক্রেডিট গ্যারান্টি কী?

কোভিড-১৯ সংকটের সময়ে, ভারতীয় সরকারের অর্থনীতির হাল খারাপ ছিল। এই অতিমারীর ফলে সরকারের রোজগার আরও চাপের মুখে পড়েছে। যেমন বিশেষজ্ঞরা ইতিমধ্যেই বলছেন এই আর্থিক বর্ষে জিডিপি কমবে ৫ থেকে ১০ শতাংশ। এর ফলে ৫ থেকে ৭ লক্ষ কোটি টাকার রোজগার হানি হবে সরকারের। এবং তা সত্ত্বেও কর্মচারী এবং সংস্থাগুলি চাইছে সরকার তাদের আর্থিকভাবে সাহায্য করুক।

ব্যাঙ্কের মাধ্যমে নগদায়নের ব্যাপারে জোর দেওয়ার চেষ্টা করা যাবে না, কারণ ব্যাঙ্কগুলি কোনও নতুন অর্থ ঋণ দিতে চায় না। তারা যথার্থভাবেই সন্দেহ করে যে নতুন ঋণ কেবলমাত্র তাদের পাহাড়প্রমাণ অনাদায়ী সম্পদ (NPA) আরও বাড়িয়ে তুলবে।

ফলে সরকার এক অদ্ভুত সমস্যার মুখে পড়েছে- ব্যাঙ্কের হাতে টাকা রয়েছে কিন্তু তারা অর্থনীতিতে ঋণের জন্য আকুল অংশকে ঋণ দিতে বিমুখ এবং সরকারের নিজের কাছে অর্থনীতিতে সরাসরি সাহায্য করার মত অর্থ নেই।

এর ফলে সরকার যে ক্রেডিট গ্যারান্টির রাস্তা শেষ পর্যন্ত বেছে নিয়েছে, তা নতুন নয়, কারণ এই আর্থিক প্রহেলিকাও নতুন নয়। (চার্ট ৩)

publive-image

এমএসএমই-র ক্ষেত্রে কত পরিমাণ ক্রেডিট গ্যারান্টি দেওয়া হবে?

এ ব্যাপারে তিনটি প্রস্তাব রয়েছে তবে মূল বিষয়টা হল সাধারণ এমএসএমই নিয়ে, যারা কোভিড-১৯ জনিত লকডাউনের আগে ভালভাবেই চলছিল।

এদের জন্য সরকার ৩ লক্ষ কোটি টাকার ক্রেডিট গ্যারান্টির কথা বলেছে। অর্থমন্ত্রী বলেছেন এই ঋণ সেই সব সংস্থাকে দেওয়া হবে যাদের ২৫ কোটি টাকা ঋণ ইতিমধ্যেই রয়েছে এবং টার্নওভার ১০০ কোটি টাকা। ঋণের সময়কাল চার বছর এবং মোরাটোরিয়ামের সময় ১২ মাস, অর্থাৎ টাকা ফেরত দেওয়া শুরু করতে হবে ১২ মাস পর থেকেই। এই ঋণ ৩১ অক্টোবর, ২০২০-র মধ্যে নেওয়া যাবে।

ক্রিসিলের ডিরেক্টর হেতাল গান্ধীর মতে, “যদি কোনও এমএসএমই-র ২৫ কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণ কোনও ব্যাঙ্ক বা এনবিএফসি-তে ইতিমধ্যেই থাকে, এবং এমএসএমই-র আরও অর্থ প্রয়োজন হয়, তাহলে তোনও কোল্যাটারাল ছাড়াই তারা সেই ঋণ নিতে পারবে, কারণ সরকার ওই ঋণের গ্যারান্টি সম্পূর্ণত দিচ্ছে।”

৩ লক্ষ কোটি টাকা কেন?

গান্ধী বলছেন, ব্যাঙ্ক ও এনবিএফসি ক্ষেত্রে বকেয়া ঋণের পরিমাণ ১৬ থেকে ১৮ লক্ষ কোটি টাকা। ধরে নেওয়া যাক এর ৮০ শতাংশ ঋণ ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল যেখানে ২০ শতাংশ আরও অর্থ প্রয়োজন, তাহলে সেই পরিমাণ হবে ৩ লক্ষ কোটি টাকা। ফলে সরকার আশা করছে এই ক্রেডিট গ্যারান্টির ফলে এই এমএসএমই গুলিকে আরও ঋণ দিয়ে সাহায্য করা হলে তারা তা শোধ করতে পারবে- এমন আশার কারণ এমএসএমইগুলি সংকটের আগে টাকা ফেরত দিতে পেরেছে এবং সংকটের পরে তা না দিতে পারার কোনও কারণ নেই, তবে তারা যাতে এই পর্যায়ে টিকে থাকার জন্য অতিরিক্ত অর্থ পায়, তবেই তা সম্ভব হবে।

 অন্য পদক্ষেপগুলি কী?

এ ছাড়া যেসব এমএসএমই ইতিমধ্যেই ধুঁকছে অথবা অর্থ ফেরত দিতে পারছে না, তাদের ক্ষেত্রে ২০ হাজার কোটি টাকার আরেকটি ঋণ প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এদের ক্ষেত্রে সরকার পুরো নয়, আংশিক ক্রেডিট গ্যারান্টি দেবে।

আরও পড়ুন, জিডিপির কত শতাংশ- একটু হিসেব নিকেশ

তৃতীয় পদক্ষেপ হিসেবে সক্ষম এমএসএমই গুলির জন্য ৫০ হাজার কোটি টাকার ইকুইটি ফান্ড তৈরি করার কথা বলা হয়েছে, যাতে তারা বর্ধিত হতে পারে। সরকার চাইছে এখানে ১০ হাজার কোটি টাকা নিজে দেবে এবং এলআইসি ও স্টেট ব্যাঙ্কের মত প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বাকি অর্থ দেওয়া হবে।

এ ছাড়া দীর্ঘদিন ধরে বকেয়া এমএসএমইর সংজ্ঞাও বদল করা হয়েছে। এখন থেকে টার্নওভারের ভিত্তিতে এমএসএমই নির্ধারিত হবে এবং উৎপাদক এমএসএমই ও পরিষেবাদায়ী এমএসএমই-র মধ্যে তফাৎ করা হবে না।

 এই পদক্ষেপ কতদূর সুবিধা দান করবে?

৩ লক্ষ কোটি টাকার ক্রেডিট গ্যারান্টি যথেষ্ট বড় অঙ্ক যার ফলে এমএসএমই গুলি বেতন দিতে পারবে এবং আর্থিক মন্দার সময়ে ডুবন্ত অবস্থা থেকে কিছুটা শ্বাস নিতে পারবে।

অর্থমন্ত্রীর মতে এই পদক্ষেপ ৪৫ লক্ষ এমএসএমই-কে সাহায্য করবে। ভারতে যা এমএসএমই-র সংখ্যা তার তুলনায় এই সংখ্যা নেহাৎই ক্ষুদ্র, এগুলি মূলত মাঝারি ও ক্ষুদ্র উদ্যোগ, যাতে মোট এমএসএমই-তে কর্মরত ৪০ শতাংশ লোক কাজ করেন- যদিও এই উদ্যোগগুলি সংখ্যায় অতি কম (মোট এমএসএমই-র মাত্র ০.৫ শতাংশ)।

এমএসএমই-র সংজ্ঞা বদলও সহায়তা করবে কারণ টার্নওভারই কোনও এমএসএমই-কে চিহ্নিত করতে পারে এবং তা বহু সংস্থা, বিশেষ করে পরিষেবাদায়ী ক্ষেত্রে মাঝারি আকারের হাসপাতাল, হোটেল ও ডায়াগনোস্টিক সেন্টার এমএসএমই হিসেবে যোগ্যতা অর্জনের সুবিধা পাবে। অন্য যে দুটি পদক্ষেপ তা গোটা বিষয়ে ব্যাপক কোনও বদল আনতে পারবে না।

 ক্রেডিট গ্যারান্টির আশ্রয় নেওয়ার কোনও কুফল রয়েছে কি?

তা রয়েছে, বিশেষ করে ১০০ শতাংশ ক্রেডিট গ্যারান্টির ক্ষেত্রে। তার কারণ এই ধরনের গ্যারান্টিতে ঋণ গ্রহণকারীর ঋণ ফেরত দেওয়ার ব্যাপারে কোনও উৎসাহের জায়গা থাকে না, এবং ঋণপ্রদানকারীও নিশ্চিত থাকে যে সরকার টাকা ফেরত দেবে, ফলে তারাও ঋণগ্রহণকারীর যোগ্যতা খুঁটিয়ে দেখে না।

এর চেয়ে বিচক্ষণ হত যদি সরকার নতুন ঋণের ৮০ শতাংশের গ্যারান্টি দিত। এর ফলে আগামী অর্থ বর্ষে যখন এমএসএমই-র অনাদায়ী সম্পদ বাড়বে তখন সরকারকে বহু অর্থ ব্যয় করতে হবে।

Nirmala Sitharaman Relief Package Lockdown
Advertisment