করোনা অতিমারীর মধ্যে বিভিন্ন দেশের সরকারের উপর লকডাউন শিথিল করার জন্য চাপ পড়ছে, যাতে সারা পৃথিবীর ঘরবন্দি মানুষ থেকে আর্থিক ও মনস্তাত্ত্বিক সমস্যা থেকে মুক্তি পান। অনেক দেশই সংক্রমণের সংখ্যা বাড়া সত্ত্বেও লকডাউন তুলে নিচ্ছে। কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন পেতে অন্তত কয়েকমাস এখনও বাকি, এ পরিস্থিতিতে শিথিলতর বিধিনিষেধের মধ্যে থেকে কীভাবে সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ এড়ানো যায়, সে প্রশ্নই বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
Nature Human Behaviour- এ প্রকাশিত এক নতুন গবেষণায় বলা হয়েছে, কোভিড ১৯ কার্ভ ফ্ল্যাট করার জন্য সোশাল ডিসট্যান্সিংয়ের কার্যকরী কৌশল হতে পারে সোশাল বাবল।
শপিং মল বা ধর্মস্থান- যেসব বিধি মানতেই হবে
সোশাল বাবল কী?
গত মাসে ব্রিটেনের রোডম্যাপে বলা হয়েছে কোনও একটি বাড়ি তাঁদের দলে আরেকটি বাড়িকে নিয়ে নিতে পারেন, যাতে যাঁরা বিচ্ছিন্ন হয়ে রয়েছেন তাঁরা আরও বেশি করে সামাজিক সংস্পর্শে আসতে পারেন এবং বর্তমান সামাজিক বিধিনিষেধের কু্প্রভাব সংক্ষিপ্ত করতে পারেন, একইসঙ্গে সংক্রমণের ঝুঁকিও কমাতে পারেন। এর ফলে কিছু পরিবার কাজে ফিরতে পারবেন, এবং তাঁদের পরিবারের শিশুর দেখভালের কাজ শেয়ার্ড হয়ে যাবে।
নিউজিল্যান্ডে পরিবারগতভাবে এই পদ্ধতি অতিমারীর মধ্যে গৃহীত হয়েছিল, যেখানে একটি নির্দিষ্ট সামাজিক গোষ্ঠীর মানুষ একে অপরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারতেন। লকডাউনের সময়েও এই পদক্ষেপ সে দেশে কার্যকর ছিল এবং সংক্রমণ যখন শ্লথ ও নিষেধাজ্ঞা শিথিল, সে সময়েও এই পদ্ধতি চালু রাখা হয়।
নিউজিল্যান্ডের মডেল অনুসারে একটি বাবল মানে কোনও এরজনের পরিবার বা একজনের সঙ্গে যতজন বসবাস করেন। তৃতীয় পর্যায়ের বিপদসংকেতের সময়ে জনগণকে তাঁদের বাবল কিছুটা প্রসারিত করার অনুমতি দেওয়া হয়, যাতে যেসব পরিবারে শিশুদের যত্ন নিতে হবে এবং কেয়ারগিভার- দু পক্ষকেই বাবলের অন্তর্ভুক্ত করা যায়। যাঁরা একা থাকেন বা যে সব দম্পতি দুয়েকজন অন্য মানুষের সঙ্গ চান, তাঁদের জন্যও এই বাবল প্রযোজ্য। এঁদের একই বাড়ি বা পরিবারে অন্তর্ভুক্ত হতে হবে এমন কথা নেই, কিন্তু তাঁদের অবশ্যই স্থানীয় বাসিন্দা হতে হবে।
লকডাউনে সত্যিই কত কোভিড মৃত্যু আটকানো গেল?
সরকারি অ্যাডভাইজরিতে বলা হয়েছে, বাবলকে আকারে ছোট এবং এক্সক্সুসিভ রাখতে। যদি বাবলের একজনের মধ্যেও উপসর্গ দেখা দেয়, তাহলে গোট বাবল নিজেই কোয়ারান্টিনে যাবে, যাতে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া আটকানো যায়।
লন্ডন স্কুল অফ ইকোনমিকস অ্যান্ড পলিটিক্যাল সায়েন্সে প্রকাশিত গবেষণায় বলা হয়েছে নিউজিল্যান্ডে এই বাবল কার্যকর হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে, কারণ এর ফলে বিচ্ছিন্ন, অসমর্থ বিভিন্ন ধরনের মানুষ যাঁদের যত্নের প্রয়োজন তাঁরা তা পেয়েছেন। এ ছাড়া এ নীতি অন্য দেশের জন্যও কার্যকর হতে পারে, যাতে সামাজিক দূরত্ব নীতি কার্যকর রেখেও প্রয়োজনীয় সাহায্য ও সহযোগিতা পাওয়া যেতে পারে।
গবেষণায় কী বলা হয়েছে?
তিনটি কৌশলের কথা বলা হয়েছে- যার মধ্যে রয়েছে একই লোকের সংস্পর্শে আসা, কমিউনিটির মধ্যে যোগাযোগ বাড়ানো এবং বাবলের অন্তর্ভুক্ত মানুষদের মধ্যে বারংবার সংযোগ। গবেষণায় বলা হয়েছে এই কৌশলে একদিকে যেমন ঘরবন্দি থাকতে হবে না, তেমনই সামাজিক দূরত্ব বিধি সুকৌশলে বজায় রেখে কার্ভ ফ্ল্যাট করা যাবে।
সোশাল বাবলের সম্পর্কে গবেষণায় বলা হয়েছে, এর জন্য প্রত্যেক ব্যক্তিকেই স্থির করতে হবে, তিনি কার সঙ্গে বারবার দীর্ঘসময় জুড়ে যোগাযোগ রাখতে চান এবং কেবলমাত্র তাঁদের মধ্যেই তাঁর সংযোগ সীমাবদ্ধ রাখতে হবে।
কর্মীদের মধ্যে বিভাগীয় বা ওয়ার্ক ইউনিট তৈরির মাধ্যমে সামাজিক বাবল এমনকি নিয়োগকর্তারাও কাজে লাগাতে পারেন। যেমন হাসপাতাল বা অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ক্ষেত্রে, সংক্রমণের ঝুঁকি একই কর্মীদের একই শিফটে কাজ করানোর মধ্যে দিয়ে কমানো যায়। এই কর্মীদের বাসস্থানের নিরিখেও এরকম করা সম্ভব।
গবেষকরা বলছেন এই ধরনের মাইক্রো কমিউনিটি ভেদ করা ভাইরাসের পক্ষে কষ্টকর এবং যদি এরকম সংক্রমণ একজনের মধ্যে হয়েই পড়ে, তাহলে তা ছড়িয়ে পড়া শক্ত।