ভারত ও বিশ্বে কোভিড ১৯ সংক্রমণের বৃদ্ধির হার

করোনা সংক্রমণ বাড়ছে বটে, কিন্তু বৃদ্ধির হার ভারতে অন্য দেশের তুলনায় অনেকটাই কম, বলছেন বিশেষজ্ঞরা।

করোনা সংক্রমণ বাড়ছে বটে, কিন্তু বৃদ্ধির হার ভারতে অন্য দেশের তুলনায় অনেকটাই কম, বলছেন বিশেষজ্ঞরা।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

১৮ মার্চের হিসেবে ভারতে প্রতি সংক্রমিত ব্যক্তি ১.৭ জনের মধ্যে সংক্রমণ ছড়িয়েছেন

গত সপ্তাহে ভারতে কোভিড ১৯ সংক্রমণের হার বেড়েছে, যদিও সারা বিশ্বে এই সংক্রমণ হার উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। ১৯ মার্চের হিসেবে প্রত্যেক সংক্রমিত ব্যক্তি গড়ে ১.৭ জনের মধ্যে সংক্রমণ ঘটিয়েছেন। ২৬ মার্চ সে সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১.৮১-তে। কিন্তু ইরান এবং ইটালির মত দেশে ওই সময়ে এই সংখ্যা উল্লেখযোগ্যরকম কম বলে জানিয়েছেন চেন্নাইয়ের ইনস্টিট্যুট অফ ম্যাথমেটিক্যাল সায়েন্সেসের বিজ্ঞানী সিতাভ্র সিনহা।

Advertisment

ল্যান্সেটের এক গবেষণায় দেখানো হয়েছে আন্তর্জাতিক স্তরে কোভিড ১৯ একজন সংক্রমিত ব্যক্তির কাছ থেকে ২ থেকে ৩ জনের মধ্যে সংক্রমিত হবার কথা।

২৬ মার্চ তিনি বলেন, তাঁর ধারণা “মার্চের শেষে সংক্রমণের সংখ্যা ১৫০০ জন সংক্রমিত হবেন। ৫ এপ্রিল সংখ্যাটা ৩০০০ -এ দাঁড়াবে, খুব খারাপ হলে তা ৫০০০ ছাড়িয়ে যাবে। ১৬ মার্চে সংখ্যাটা বেড়েছে। তবে লকডাউনের জেরে এই বৃদ্ধির হার কিছুটা কমবার কথা, তবে সেটা কতটা তা আমরা এ সপ্তাহের শেষে জানতে পারব।”

৩০ দিন, ছয় দেশ

Advertisment

বৃদ্ধির এই হ্রাসমান হারের মধ্যে দাঁড়িয়ে ভারতে কোভিড ১৯ কেসের সংখ্যা এক থেকে তিন হাজারে পৌঁছতে সময় লেগেছে এক মাস। দক্ষিণ আফ্রিকার এক মাসের বৃদ্ধি হারের সংখ্যার সঙ্গে তুলনা করলে তা কম। একই কথা প্রযোজ্য মৃত্যুহারের সঙ্গেও। ৬টি দেশের সঙ্গে তুলনায় দেখা যাচ্ছে ভারতের বৃদ্ধিহার দক্ষিণ কোরিয়া, স্পেন, ইরান, এবং ইতালির চেয়ে কম, কিন্তু সিঙ্গাপুরের থেকে কম নয়।

তবে এখই সঙ্গে মনে রাখতে হবে টেস্টিংয়ের ক্ষেত্রে অসামঞ্জস্য রয়েছে। এবং এই সংখ্যা আরও বেশ কিছু বিষয়ের উপর নির্ভরশীল, যেমন ভারতের ক্ষেত্রে তা ২১ দিনের কোয়ারান্টিন।

publive-image ভারতে ২৯ দিনের সংক্রমণ হার ও ১৮ দিনের মৃত্যু হার। হু -এর ৩০ মার্চের রিপোর্ট (২৯ মার্চের হিসেব অনুসারে)

সাপ্তাহিক হিসেব

সাপ্তাহিক হিসেবে দেখা যাচ্ছে ২৯তম দিনে ভারতের বৃদ্ধি ৩ থেকে ৪৩ থেকে ১১৪ থেকে ৪১৫ থেকে ১০৭১।

দক্ষিণ কোরিয়ার ক্ষেত্রে ২৯তম দিনের সাপ্তাহিক হিসেব ৪ থেকে ২৩ থেকে ২৮ থেকে ১০৪ থেকে ১৭৬৬ (১৭৬৬ ৩০ তম দিনে)।

রিপোর্ট থেকে  দেখা যাচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়ায় একটি ব্যতিক্রম রয়েছে। পেশেন্ট ৩১ একজন সুপার সংক্রামক, করোনা টেস্ট পজিটিভ গবার আগে তিনি বিশাল সংখ্যক মানুষের মধ্যে সংক্রমণ ঘটিয়েছেন।

সিঙ্গাপুরের ২৯ তম দিনের সাপ্তাহিক হিসেব হল ৪ থেকে ১৮ থেকে ৪৩ থেকে ৭৫ থেকে ৯০ এবং ৩০ ম দিনে ৯১। স্পেনের ক্ষেত্রে এই হিসেব হল ২ থেকে ১৫১ থেকে ১৬৩৯ থেকে ১১১৭৮ থেকে ৩৯৬৭৩। একদিন পর সংখ্যাটা ৪৭ হাজার। ইতালির ক্ষেত্রে ৩ থেকে ৬৫০ থেকে ৩৮৫৮ থেকে ১৫১১৩ থেকে ৪১,০৩৫ (২৯ তম দিনে) এবং ৩০ তম দিনে ৪৭, ০২১।

৬টি দেশের মৃত্যুর হিসেব থেকে দেখা যাচ্ছে ভারতে মৃত্যুহার এখনও তুলনামূলক ভাবে কম। দু সপ্তাহ প্রতিটি দেশের প্রথম করোনার কারণে মৃত্যুর দু সপ্তাহ পর হিসেব করে দেখা যাচ্ছে ভারতের সংখ্যা বেড়েছে ১ থেকে ৪ থেকে ১৭। দক্ষিণ কোরিয়ায় ১ থেকে ১৩ থেকে ৩৫। ইরানে ২ থেকে ২২ থেকে ৯২। ইতালিতে সংখ্যাটা উদ্বেগজনকভাবে ২ থেকে ২৯ থেকে ২৩৪।

সংক্রমণের হার

 স্ংক্রমণের হার ভারতে ১.৮১, যা ইতালির (২.৭৬ থেকে ৩.২৫) থেকে কম।

এই সংখ্যাকে বলা হয় রিপ্রোডাকশন নাম্বার বা R0। একটি রোগের সংক্রমণক্ষমতা বোঝাতে এই সংখ্যা ব্যবহার করা হয়ে থাকে। R0 যখন একের কম হয়, অর্থাৎ প্রতি সংক্রমিত ব্যক্তি আরেকজনের মধ্যে সংক্রমণ ছড়াচ্ছেন না, তখন তা আর মহামারী থাকে না। একের বেশি হলে এবং রোগে বৃদ্ধির হার এক্সপোনেনশিয়াল হলে বিশেষজ্ঞরা সামাজিক দূরত্বের পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

অর্থাৎ তাঁরা মানুষকে সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে বলেন। সংক্রমিত মানুষরা যত কম ভাইরাস ছড়াতে পারবেন তত এই রোগ ছড়াবে কম এবং স্বাস্থ্যব্যবস্থার উপর চাপ কম পড়বে।

coronavirus