দক্ষিণ কোরিয়া ছাড়া আমরা সব দেশ সম্পর্কেই শুনছি যথেষ্ট পরিমাণ টেস্ট হচ্ছে না। এর অর্থ কী?
এই পরিপ্রেক্ষিতে টেস্টিংয়ের সাধারণ অর্থ হল জনস্বাস্থ্যের পরিস্থিতি বোঝায়র জন্য প্রয়োজনীয় পরিসংখ্যান সংগ্রহ করা অবং জনগণের মধ্যে তা পরিবেশন যাতে তাঁরা বুঝতে পারেন যে তাঁদের মধ্যে প্রতিরোধক্ষমতা রয়েছে কিনা। আমাদের কমিউনিটির মধ্যে যথেষ্ট টেস্টের প্রয়োজন, সে আমেরিকায় হোক কি ভারতে- একধরনের প্রামাণ্য নিশ্চয়তা সহযোগে- যাতে বোঝা যায় যে কত মানুষ একসঙ্গে মারাত্মকভাবে সংক্রমিত, তাঁদের উপসর্গ আছে নাকি নেই। যেহেতু উপসর্গবিহীনরাও সংক্রমণ ছড়াতে সক্ষম, ফলে এ ব্যাপারে জানা প্রয়োজন।
তার মানে এই নয় যে প্রত্যেককে সর্বক্ষণ টেস্ট করে চলতে হবে, কিন্তু আমাদের কাছে একটা বড়সংখ্যক নমুনা থাকা প্রয়োজন, যে নমুনার একটা নিশ্চয়তাও রয়েছে। কে সংক্রমিত তা বুঝলে সংক্রমণবৃদ্ধির হার বুঝতে সুবিধে হয়, বর্তমান ঝুঁকি বুঝতে সুবিধে হয়, এবং সামাজিক বিধিনিষেধকে সহজতর করার জন্য সংক্রমণের দিকে প্রয়োজনীয় নজর রাখাও সম্ভব হয়।
হোম আইসোলেশনের ব্যাপারে কেন্দ্রীয় সরকারের নতুন গাইডলাইন
তাহলে আমরা বুঝতে পারব কত মানুষের অ্যান্টিবডি রয়েছে, এবং প্রতিরোধক্ষমতাও অনুমান করতে পারব। গোষ্ঠী প্রতিরোধ আদৌ রয়েছে কিনা, বা সে লক্ষ্যে পৌঁছতে কত বাকি। এই সংখ্যাটা সংক্রমণ বৃদ্ধির হার ও সংক্রমণের হারের সঙ্গে জানা জরুরি, কারণ সংক্রমণ বৃদ্ধি হার যদি বেশি হয়, তাহলে বেশি সংখ্যক প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন মানুষের প্রয়োজন।
আমার মনে হয় না গোষ্ঠী প্রতিরোধ আমাদের লক্ষ্য হতে পারে যতদিন না কার্যকরী ভ্যাকসিন ওই সংখ্যক মানুষকে দেওয়া যেতে পারে। আমরা এখন আমেরিকায় জায়গাবিশেষে ১০ থেকে ২০ শতাংশ দেখতে পাচ্ছি। এবার স্থানভিত্তিতে যেহেতু সংখ্যা বদলাচ্ছে, ফলে ভৌগোলিক এলাকাভিত্তিক পরিসংখ্যান জরুরি।
দিনে কত টেস্ট হচ্ছে, তার সঙ্গে কি লকডাউন প্রত্যাহারের দিনের কোনও সম্পর্ক রয়েছে?
সরাসরি সংখ্যার সঙ্গে নেই, কিন্তু সংখ্যার মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারি যে ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি কমে এসেছে। প্রতিদিন কত সংখ্যায় টেস্ট করা হবে তা স্থির হবে ওই এলাকায় সক্রিয় সংক্রমণের সংখ্যার উপর। যেখানে বেশি পরিমাণ সামাজিক জমায়েত হয়, সেখানে সক্রিয় সংক্রমণের সংখ্যা কমিয়ে আনতে হবে, কারণ সেখানে অন্যের কাছাকাছি আসার মাধ্যমে সংক্রমণের সংখ্যা বাড়তে পারে।
তাহলে ভারতের মত ১৩০ কোটির দেশে লকডাউন তোলার সিদ্ধান্ত নেবার জন্য প্রতিদিন কত টেস্ট প্রয়োজনীয়?
আগে যেরকম বললাম, সেই অনুসারে আমি মনে করি সারা ভারতের জন্য সংখ্যা এক হবে না। মুম্বই, দিল্লি, অন্য বড় শহরেরর ক্ষেত্রে আলাদা হবে। ছোট এলাকায় ও কম আশঙ্কাজনক এলাকায় সংখ্যাটা সম্ভবত কম হবে।আমি এবং আমার কিছু সহকর্মী এ বিষয়ে আরও নিখুঁত হবার জন্য কাজ করে চলেছি।
অ্যান্টিবডি টেস্ট কিট নিয়ে সমস্যা কী হল? এ ধরনের টেস্টের অনির্ভরযোগ্যতা নিয়ে তো সবরকম রিপোর্ট আসছে।
এটা একটা ক্রেতার সাবধানতার প্রশ্ন। বাজারে অনেক বিশ্বাসযোগ্য টেস্ট রয়েছে আমার জাঙ্ক টেস্টও রয়েছে। যখন আমরা কোনও টেস্ট বাজারে আনি, তার কঠোর পরীক্ষা হয় আগে। এবার আপৎকালীন পরিস্থিতির জন্য তাতে খামতি থেকে গিয়েছে। এর থেকে বোঝা যাচ্ছে টেস্ট কিট, মেডিক্যাল ডিভাইস ওষুধপত্রের ক্ষেত্রে একটা নজরদারি জরুরি।
ফের র্যাপিড টেস্ট বন্ধ কেন?
সমস্যাটা কি চিন থেকে আনা টেস্ট কিটে?
আবারও, প্রশ্ন এটা নয়, যে ওটা চিনে তৈরি হয়েছিল কিনা, প্রশ্ন হল, গুণমান নিয়ন্ত্রণ, প্রোডাকশন স্ট্যান্ডার্ড ইত্যাদি মানা হয়েছিল কিনা। অনেক টেস্টই চিনে প্রথম তৈরি হয়েছে, তার মধ্যে কিছু ভাল, কিছু খারাপ। ক্রেতাদের নিশ্চিত হতে হবে যে তাঁদের যাঁরা ভেন্ডর, তারা উৎপাদিত পণ্য ঠিকঠাক ভাবে তৈরি হওয়ার ব্যাপারে নিশ্চয়তা দেন।
( লেখক, লস এঞ্জেলেসের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভিড গ্রাফিন স্কুল অফ মেডিসিনের প্যাথলজি অ্যান্ড ল্যবরেটরি মেডিসিনের অধ্যাপক এবং দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ার কোয়েস্ট ডায়াগনোস্টিকসের মেডিক্যাল ডিরেক্টর। তিনি আমেরিকান সোসাইটি অফ প্যাথলজির ভূতপূর্ব প্রেসিডেন্ট এবং মার্কিন সংস্থা সিডিসি-র সঙ্গেও যুক্ত। তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন সুশান্ত সিং।)
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন