/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2020/04/corona-hydroxichloroquine.jpg)
কোভিড ১৯-এর চিকিৎসা বা প্রতিষেধক হিসেবে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনের কার্যকারিতা এখনও অপ্রমাণিত, এবং এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে
বৃহস্পতিবার মুম্বইয়ের মিউনিসিপ্যাল কমিশনার বলেছেন কোভিড ১৯ হটস্পটে প্রতিষেধক হিসেবে ৫০ হাজার মানুষের মধ্যে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন ব্যবহার করা হবে। এর আগে এই লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছিল ১ লক্ষ। একদিকে যেমন এই সংখ্যা হ্রাস করা হয়েছে, অন্যদিকে মহামারীর সময়ে এই ওষুধের ব্যবহারের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট জাতীয় প্রোটোকল ঘোষণার মাধ্যমে বলা হয়েছে একদম নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে, যেসব স্বাস্থ্যকর্মীরা কোভিড ১৯ রোগীর কাছে এক্সপোজড হয়েছেন, তাঁদের ক্ষেত্রেই ব্যবহার করা হবে।
করোনাভাইরাস: জলসংকটের দেশে হাত ধোয়া হবে কী করে?
হটস্পট ছাড়াও মহারাষ্ট্র সরকার এই ওষুধ মুম্বইয়ের পুলিশ কর্মীদের মধ্যে দেওয়া হচ্ছে, রাজস্থানে হটস্পটে কর্মরত পুলিশদের মধ্যে এ ওষুধ দেওয়া হচ্ছে।
হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন কী?
হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন মুখ দিয়ে খাবার একটি ওষুধ, যা কিছু ধরনের ম্যালেরিয়া এবং রিউম্যাটয়েড আর্থ্রারাইটিসের মত স্বপ্রতিরোধজনিত অসুখের ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
১৯৪০ থেকে এর ব্যবহার চলছে এবং গত ৪০ বছরের গবেষণায় দেখা গিয়েছে এর মধ্যে কিছু অ্যান্টি ভাইরাল উপাদান রয়েছে।
ক্লোরোকুইন ও ক্লোরোকুইন জাত হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন কোভিড ১৯-এর সম্ভাব্য চার দফা চিকিৎসা নিয়ে হুয়ের নজরদারিতে ট্রায়াল চলছে।
মুখ ঢাকা বাধ্যতামূলক, থুথু ফেলা নিষিদ্ধ- ভারতের নয়া বিধিসমূহ
এর কার্যকারিতা নিয়ে গবেষণা চলাকালীন ল্যান্সেট রিউম্যাটোলজির পর্যবেক্ষণে ধরা পড়েছে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন কোষের মেমব্রেনে অ্যাসিডিটি কমায়।
২০০৫ সালে সার্সের চিকিৎসায় এই ওষুধ ব্যবহারের চেষ্টা করা হয়েছিল, কিন্তু ইঁদুরের মধ্যে ভাইরাল লোড কমাতে তা সক্ষম হয়নি।
হু বলেছে, হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন এবং ক্লোরোকুইনের মধ্যে একটিরও কার্যকারিতা সম্পর্কে যথেষ্ট পরিমাণ তথ্য নেই, যার ফলে বলা যেতে পারে কোভিড ১৯-এর চিকিৎসা এই ওষুধের মাধ্যমে হতে পারে অথবা করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সাহায্য করতে পারে।
হারানো যক্ষ্মা রোগীদের খুঁজে বের করতে পারে করোনা অতিমারী
কোভিড ১৯ প্রকোপের সময়ে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন ব্যবহারের জাতীয় প্রটোকল কী?
কোভিড ১৯-এর প্রেক্ষিতে, আইসিএমআর প্রস্তাব দিয়েছে নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন ব্যবহার করতে হবে। বলা হয়েছে কোভিড ১৯ সংক্রমিত বা সন্দেহজনক কোভিড ১৯ রোগীদের পরিচর্যায় যুক্তদের সংস্পর্শে আসবার পর উপসর্গবিহীন স্বাস্থ্যকর্মীদের এবং ল্যাবরেটরিতে নিশ্চিত কোভিড সংক্রমিতদের পরিবারের লোকজনকে এই ওষুধ দিতে হবে।
গত সপ্তাহের খবর অনুসারে আইসিএমআর সম্প্রতি জনসাধারণের মধ্যে এই ওষুধ ব্যবহার নিয়ে আলোচনা করেছে কিন্তু সে পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। একটি সূত্র ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে জানিয়েছে, এই ওষুধের কার্যকারিতা এবং পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নিয়ে তথ্যপ্রমাণ যে নেই এই প্রশ্নটিই উঠে এসেছিল আলোচনায়।
মহারাষ্ট্র ও রাজস্থান, যে দুই রাজ্যে কোভিড ১৯-এর রোগীর সংখ্যা সর্বাধিক, তারা নিজেরাই স্বাস্থ্যকর্মী ছাড়া অন্যদের মধ্যে ওই ওযুধ ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
মহারাষ্ট্র কী সিদ্ধান্ত নিয়েছে?
গত সপ্তাহের ঘোষণা অনুসারে ধারাভি ও ওরলি কোলিওয়াড়া বস্তি থেকে শুরু করে কোভিড হটস্পটের এক লক্ষ জনতার মধ্যে রোগ নিরোধক (prophylaxis)হিসেবে এই ওষুধ ব্যবহার করা হবে
বৃহস্পতিবার বিএমসি সিদ্ধান্ত নিয়েছে এই সংখ্যা কমিয়ে ৫০ হাজার করা হবে। এইমসের চিকিৎসক, নীতি আয়োগের বিশেষজ্ঞ, ও মহারাষ্ট্র ইউনিভার্সিটি অফ হেলথ সায়েন্সেসের বিশেষজ্ঞরা ও পিডব্লুডি বিভাগের আধিকারিকরা ১৩ এপ্রিল ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে এক বৈঠকে মিলিত হন।
দুটি গোষ্ঠী তৈরি করা হয়- এক দলকে ভিটামিন সি ও হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন দেওয়া হবে, অন্যদের হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন দেওয়া হবে জিংক ট্যাবলেটের সঙ্গে, কোনটায় ভাল ফল হবে তা দেখবার জন্য। বিএমসি গত সপ্তাহে জানিয়েছে এই ওযুধ সেবন বাধ্যতামূলক নয়, বস্তিবাসীদের পরামর্শ দেওয়া হবে ওষুধ খাবার জন্য।
খাবার থেকে কি করোনা সংক্রমণ হতে পারে?
১৫ বছরের কম বয়সীদের এই ওষুধ দেওযা হবে না, দেওয়া হবে না গর্ভবতী মহিলা ও হৃদরোগীদের। ৫৫ বছরের বেশি যাঁদের বয়স, তাঁদের উপর এই ওষুধের প্রতিক্রিয়া ভালভাবে নজর করা হবে।
বেশ কিছু কর্মীর মধ্যে উপসর্গ দেখা দেবার পর গত সপ্তাহে হইড্রক্সিক্লোরোকুইন ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে মুম্বই পুলিশ। এঁদের ভিটামিন সি-এর সঙ্গে হাইড্র্কসিক্লোরোকুইন ব্যবহার করতে বলা হয়েছে।
এসবের যুক্তি কী?
২০১৮-১৯ সালের তথ্য অনুসারে মুম্বইয়ের জনঘনত্ব প্রতি বর্গ কিলোমটারে ২৬,৫৪৩। বস্তি এলাকায় সংখ্যাটা দ্বিগুণ। ধারাভিতে ১০×১০ স্কোয়ার ফিটের একটি ঘরে ৫ থেকে ৮ জন বাস করেন, যেখানে সংক্রমিতের সংখ্যা ৫০ ছাড়িয়েছে। মহারাষ্ট্র সরকারকে এই নীতি নির্ধারণে সহায়তা করেছেন ডক্টর সুভাষ সলুঙ্খে। তিনি বলেন, “এ ধরনের এলকায় সামাজিক দূরত্ব অসম্ভব। এই হটস্পটগুলিতে আমরা প্রতিষেধক হিসেবে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন ব্যবহার করতে বলেছি।” এটা ঘটেছিল সংখ্যা কমবার আগে। ধারাভি ও ওরলিকে অতি ঝুঁকিপ্রবণ বলেই দেখছে সরকার। বৃহস্পতিবার লক্ষ্যমাত্রা ৫০ হাজারে কমাবার পর মিউনিসিপ্যাল কমিশনার প্রবীণ পরদেশি বলেন, "আমরা এটা এক্সপেরিমেন্ট হিসেবে দেখছি। এটা একটা কন্ট্রোল গ্রুপ, আমরা ব্যাপক সংখ্যক মানুষের মধ্যে এ কাজ করতে চাইছি না।" অতিরিক্ত মিউনিসিপ্যাল কমিশনার সুরেশ কাকানি বলেন যেহেতু এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে সে কারণে গত কয়েকদিন ধরে কত সংখ্যায় ও কাদের মধ্যে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন দেওয়া হবে, তা নিয়ে আলোচনা চলছে।
উদ্বেগের বিষয়গুলি কী?
কোভিড ১৯-এর চিকিৎসা বা প্রতিষেধক হিসেবে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনের কার্যকারিতা এখনও অপ্রমাণিত, এবং এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এইমসের ডিরেক্টর ডক্টর রণদীপ গুলেরিয়া জোর দিয়ে বলেছেন “হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন সকলের চিকিৎসার জন্য নয়। এই ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। তার মধ্যে একটা হল এর ফলে হৃদস্পন্দন অস্বাভাবিক হয়।”
গত সপ্তাহে ফ্রান্সের ন্যাশনাল ড্রাগ সেফটি এজেন্সি বিশেষ করে কোভিড ১৯ রোগীদের মধ্যে এ ধরনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার ব্যপারে, উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
ওই সংস্থা ৪৩ জন রোগীর তথ্য প্রকাশ করে বলেছে যাঁদের ওই ওষুধ প্রয়োগ করবার পর হৃদযন্ত্রের সমস্যা দেখা দিয়েছে। সংস্থা বলেছে, এই ওষুধ কেবলমাত্র হাসপাতালে কড়া নজরদারির মধ্যে ব্যবহার করা উচিত। প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে কোভিড ১৯ রোগীদের মধ্যে এই ধরনের ওষুধ প্রয়োগ হৃদযন্ত্রের সমস্যা বাড়তে পারে।
২৫ মার্চ মেয়ো ক্লিনিকের হৃদরোগবিশেষজ্ঞরা এই ওষুধের সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে সতর্কতা জারি করেছেন। ডক্টর মাইকেল জে অ্যাকারম্যান জরুরি নির্দেশিকা জারি করে বলেছেন কম সংক্রমিত কোভিড ১৯ রোগীদের এই ওষুধ দেবার ফলে মৃত্যু হতে পারে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন ও অ্যাজিথ্রোমাইসিনের কম্বিনেশন নির্ভর চিকিৎসার ব্যাপারে জোরদার সওয়াল করেছেন। নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাঙ্গোন মেডিক্যাল সেন্টার এরকম ৮৪ জন কোভিড ১৯ রোগীর উপর আরেকটি গবেষণা (এখনও পিয়ার রিভিউড নয়) করেছে।
সেখানে ৩০ শতাংশ রোগীর মধ্যে অস্বাভাবিকতা পরিলক্ষিত হয়েছে, এবং ১১ শতাংশের ঝুঁকি বেশি বলে দেখা যাচ্ছে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন