Advertisment

মাস্ক ব্যবহার নিয়ে নানা মুনির নানা মত কেন?

৬ এপ্রিলের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইড্যান্সে বলা হয়েছে জনগণের সকলে যদি মাস্ক ব্যবহার করে, তাহলে নিরাপত্তার গলদ ধারণা জন্মাতে পারে, যার জেরে হাত ধোয়া বা অন্যদের থেকে দূরত্ব বজায় রাখার মত জরুরি বিষয়গুলি অবহেলিত থাকবে।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে সকল জনগণ নির্বিশেষে মাস্ক ব্যবহার করলে তা থেকে কোভিড ১৯-এর মত শ্বাসজনিত সংক্রমণ আটকায় বলে কোনও প্রমাণ নেই

কোভিড ১৯ অতিমারী ছড়িয়ে পড়বার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন জায়গায় মাস্ক ব্যবহার নিয়ে একএক রকম নির্দেশ জারি করছে।

Advertisment

চিন, হংকং ও তাইওয়ানের পরামর্শ বাস ও সাবওয়ের মত জনবহুল এলাকায় মাস্ক ব্যবহার করার। পূর্ব ইউরোপের কয়েকটি হাতে গোনা দেশ জনসমক্ষে মাস্ক পরতে হবে জানিয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, এর প্রয়োজন নেই। আমেরিকাও তেমনটাই শুরু করেছিল, কিন্তু এপ্রিলের শুরুতে তারাও জানিয়েছে মেডিক্যাল মাস্ক না পরে মুখে কাপড় ঢেকে রাখাই বাঞ্ছিত। তার কারণ সাধারণ মানুষ মেডিক্যাল মাস্ক কিনতে শুরু করায়, স্বাস্থ্যকর্মীরাই প্রয়োজনীয় মাস্ক পাচ্ছিলেন না।

পৃথক নির্দেশিকা কেন?

পূর্ব উদাহরণ থেকে কিছুটা বোঝা যায়। পূর্ব এশিয়ায় জনগণের মধ্যে মেডিক্যাল মাস্ক পরা দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। ২০০২-০৩ সালে সার্স রোগের প্রকোপের সময়ে এর শুরু।

আরেকটা বিষয় হল জনসমক্ষে মাস্ক পরবার ব্যাপারে কোনও বৈজ্ঞানিক সহমত নেই। কয়েকটি ছোট সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে জনগণ ব্যাপকহারে মুখাবরণ ব্যবহার করায় ইনফ্লুয়েঞ্জা বা সার্সের মত রোগ ছড়াবার সম্ভাবনা কমে। তবে এ ব্যাপারে কোনও নিশ্চিত প্রমাণ মেলেনি।

সাবধানতার জন্যই কেন পরা হবে না?

অনেক বিজ্ঞানীরাই বলছেন পরা উচিত, বিশেষ করে নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমিতদের অনেকেরই যখন উপসর্গ দেখা যাচ্ছে না, তখন সাবধানতা অবলম্বনই ভাল।

অনেকে বলেছেন এই জোগানের সংকটের সময়ে জনতাকে মাস্ক ব্যবহার করতে বলা দায়িত্বজ্ঞানহীন কাজ। নয়া গাইডলাইনে মার্কিন সংস্থা সিডিসি বলেছে, স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য তৈরি মুখাবরণ পরবেন না।

স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে মাস্কের ঘাটতির কারণে সকলের মধ্যে সংক্রমণের আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন আমেরিকার সার্জন জেনারেল জেরোম অ্যাডামস। মেডিক্যাল মাস্ক যাঁদের পরা জরুরি, তাঁরা যদি সকলে তা পরেন তাহলে অন্যদের মধ্যে সংক্রমণ ছড়াবার সম্ভাবনা কম বলে একটা যুক্তিও উঠে আসছে।

 নন-মেডিক্যাল মাস্ক ব্যবহার করা য়ায়?

 মেডিক্যাল মাস্কের জোগান যতদিন না পর্যাপ্ত হয় ততদিন বাড়িতে তৈরি মাস্ক ব্যবহার করা চলে বলে কোনও কোনও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন। সেগুলি কাপড় দিয়ে হাতে সেলাই করা হতে পারে বা বান্ডানা বা স্কার্ফের মত জিনিসও ব্যবহার করা যেতে পারে।

 মাস্ক ব্যবহারের সুবিধা কী?

এতদিনকার প্রমাণাদি থেকে দেখা যাচ্ছে নভেল করোনাভাইরাস ছড়ায় শ্বাসজনিত ড্রপলেট থেকে, সংক্রমিত কোনও ব্যক্তির হাঁচি, কাশি বা কথা বলা থেকেও। এই ড্রপলেটগুলি সাধারণত তুলনামূলকভাবে ভারী হয়, ফলে মাটি বা মেঝে বা কোনও সারফেসের উপর পড়ে।

সংক্রমণ হতে পারে যদি ওই ড্রপলেট নিকটবর্তী কারও মুখ নাক বা চোখে কোনওভাবে প্রবেশ করে- তা সে সরাসরি হতে পারে বা ওই দূষিত পদার্থ স্পর্শ করবার পর হাত না ধুয়ে যদি কেউ নিজের মুখ চোখ নাকে হাত দেন, তাতেও। যদি কোনও ব্যক্তি মুখাবরণ ব্যবহার করেন, তাহলে ড্রপলেট মাস্কে আটকে যাবে, বাইরে বেরোবে না।

সে দিক দিয়ে দেখতে গেলে মুখাবরণ ব্যবহার করলে তা সাধারণভাবে অসংক্রমিতদেরও সাহায্য করে।

তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে সকল জনগণ নির্বিশেষে মাস্ক ব্যবহার করলে তা থেকে কোভিড ১৯-এর মত শ্বাসজনিত সংক্রমণ আটকায় বলে কোনও প্রমাণ নেই।

স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য কী গাইডেন্স দেওয়া হয়েছে?

প্রোটোকলে বলা হয়েছে, কোভিড ১৯ সংক্রমিতদের আলাদা রেখে তাঁদের মাস্ক দিতে হবে। সেগুলি হবে সার্জনদের পরিহিত মাস্ক- একটু আলগা ফিটিংয়ের, সকলকেই ফিট করে এমন ধরনে, আয়তাকৃতি মাস্ক।

স্বাস্থ্য পরিষেবাদায়করা, যাঁরা এ ধরনের রোগীদের তদারকি করেন, তাঁদের রেসপিরেটর জাতীয় একধরনের মাস্ক পরতে বলা হয়েছে।

রেসপিরেটর জাতীয় মাস্ক কীভাবে আলাদা হয়?

এগুলির আকার এমন হয় যাতে ব্যবহারকারীদের মুখে এঁটে বসে। এর মাধ্যমে মাস্কের পাশ দিয়ে নয়, ফিল্টারের মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা নিশ্বাস-প্রশ্বাস ছাড়তে ও নিতে পারেন।

এগুলি এমনভাবে তৈরি যাতে ছোট আকারের ড্রপলেটগুলি বায়ুবাহিত হয়েও কোনওভাবে না প্রবেশ করতে পারে।

রেসপিরেটর দীর্ঘক্ষণ পরে থাকা কষ্টকর। এগুলি গরম হয়ে যায় ও মুখের উপর চাপ সৃষ্টি করে। কেউ কেউ এতে শ্বাস নিতে কষ্টবোধ করেন, যাঁদের শ্বাসজনিত বা হৃদজনিত সমস্যা রয়েছে তাঁদের পক্ষে এগুলি অসুবিধাদায়ক।

জোগানের সমস্যা নিয়ে পেশাদাররা কী ভাবছেন?

সিডিসি কীভাবে সীমিত সংখ্যক উপকরণ নিয়ে কাজ চালাতে হবে, সে ব্যাপারে গাইড্যান্স দিয়েছে। সাধারণভাবে যা করার কথা নয়, তেমনটাই করতে বলা হয়েছে। মাস্কের মেয়াদ ফুরোনোর পরেও ব্যবহার করতে বলা হয়েছে, এবং একই মাস্ক পরে তা না খুলে একাধিক রোগী দেখতে বলা হয়েছে।

মাস্ক পরার অপকারিতা থাকতে পারে কি?

৬ এপ্রিলের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইড্যান্সে বলা হয়েছে জনগণের সকলে যদি মাস্ক ব্যবহার করে, তাহলে নিরাপত্তার গলদ ধারণা জন্মাতে পারে, যার জেরে হাত ধোয়া বা অন্যদের থেকে দূরত্ব বজায় রাখার মত জরুরি বিষয়গুলি অবহেলিত থাকবে।

এও বলা হয়েছে যে মাস্ক পরে থাকলে মানুষের নিজেদের মুখে হাত দেবার প্রবণতা বাড়বে, যার জেরে সংক্রমণও বাড়তে পারে।

স্বাস্থ্যকর্মীরা বলছেন যদি মাস্ক ব্যবহার করতেই হয় বিধি মেনে করতে হবে- পরিষ্কার হাতে মাস্ত রা, ভিজে গেলেই তা খুলে ফেলা, সামনের অংশ স্পর্শ না করে পিছন থেকে খোলা, খোলার পরেই হাত ধোয়া এবং যথানিয়মে মাস্ক ফেলে দেওয়া। একবার ব্যবহৃত মাস্ক দ্বিতীয়বার না পরবার পরামর্শ দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন

coronavirus
Advertisment