বিশ্বব্যাপী অতিমারী সৃষ্টিকারী নভেল করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক খুঁজতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয়েছে বিজ্ঞানী-গবেষকদের। অবশেষে যখন ভ্যাকসিন আবিষ্কার করে মানবদেহে প্রথম এবং দ্বিতীয় ধাপের পরীক্ষামূলক পর্যায় শেষ করে তৃতীয় ধাপে প্রবেশ করেছে ভ্যাকসিন পরীক্ষা। বিপদ ঘটল সেখানেই। বেশ কয়েকজনের শরীরে গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছে এই ভ্যাকসিন প্রয়োগের পর। যার জেরে বন্ধ হয়ে যায় অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার মতো প্রথম সারির ভ্যাকসিনের ট্রায়াল। কিন্তু ভ্যাকসিন ছাড়া যে করোনা প্রতিরোধ অসম্ভব, তা সকলেরই জানা। কিন্তু পরীক্ষামূলক পর্যায়ে শেষ ধাপে এমন ফলাফলে নিরুৎসাহিত হয়ে পড়েছে সব মহল।
যদিও এই ঘটনাকে পরীক্ষামূলক পর্যায়ের একটি অংশ হিসেবেই দেখছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)। তাঁদের মতে এটা হতেই পারে। সেই কারণেই ভ্যাকসিন উৎপাদনের আগে ট্রায়াল জরুরি। ভুলভ্রান্তি ঠিক করার সুযোগ পাওয়া যায়। তবে আশা হারানোর কিছু নেই এমনই আশ্বাস দিয়েছে তারা।
বিশ্বের সব জায়গায় যেখানে এই ভ্যাকসিনের ট্রায়াল চলছিল তা বন্ধ হয়েছে আপাতত। পরীক্ষামূলক প্রয়োগ বন্ধ হয়েছে ভারতেও। পুনের সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে ভারতে অগাস্টের শেষ সপ্তাহ থেকে ভ্যাকসিনের ট্রায়াল শুরু করে অক্সফোর্ড। ভারতের ড্রাগ কন্ট্রোলার জেনারেল অফ ইন্ডিয়ার তরফে শো-কজ নোটিস পাঠান হয়েছে সংস্থাটিকে। এখনও পর্যন্ত ভারতে ১০০ জনের দেহে এই ভ্যাকসিনের ট্রায়াল হয়েছে।
আরও পড়ুন, করোনা সংক্রমণের নয়া পর্যায় শুরু ভারতে
হু-এর প্রধান বিজ্ঞানী সৌম্যা স্বামীনাথন বলেন, "আমার মনে হয় এটা একদিক থেকে ভালই হয়েছে। এটা আসলে ওয়েক-আপ কলের মত। পাশাপাশি সকলের জন্য এটা শিক্ষাও। যেকোনও রিসার্চেই ওঠা-নামা থাকবেই। সেটার জন্য প্রস্তুতও থাকতে হয়। কিন্তু আশাহত হওয়ার কিছু নেই। এটা হয়েই থাকে। আশা করছি আরও ভালো কিছুই হতে চলেছে।"
বিশেষজ্ঞদের একটি দল গোটা প্রক্রিয়ায় ঠিক কী ঘটেছে তা খুঁজে বের করার কাজটি শুরু করেছে। সেখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে দিকটি দেখা হচ্ছে তা হল অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে গুরুতর অসুস্থতা ভ্যাকসিনের কারণে শুরু হয়েছে না অন্য কোনও বিষয়ে তা দেখা হচ্ছে। যদিও সংস্থার তরফে জানান হয়েছে একটি নিউরোলজিকাল সমস্যা দেখা যাচ্ছে যার জেরে মেরুদন্ডও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অ্যাস্ট্রাজেনেকার মুখপাত্র জানিয়েছেন, “এই মুহূর্তে বিশ্বজুড়ে অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিনের ট্রায়াল চলছে। কিন্তু সুরক্ষা নিয়ে কিছু প্রশ্ন ওঠায় আমরা নিজেদের ট্রায়াল আপাতত বন্ধ রাখছি। এই ভ্যাকসিন কতটা সুরক্ষিত, তা পরীক্ষা করে দেখবে। তারপরেই এর ট্রায়াল ফের শুরু হবে। কোনও ভ্যাকসিনের ট্রায়াল করার সময় কোনও ভলান্টিয়ারের শরীরে তার বিরূপ প্রভাব দেখা যায় তাহলে এই পদ্ধতিই মেনে চলতে হয়।”
বিশ্বের ৬০টি স্থানে এই অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিনের ট্রায়াল চলছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিল এবং দক্ষিণ আফ্রিকার পাশাপাশি ভারতে এই ভ্যাকসিনের ট্রায়াল করার অনুমতি পেয়েছিল অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা।
Read the full story in English
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন