নভেল করোনাভাইরাসের বৃদ্ধির হার এখনও উর্ধ্বমুখী। লকডাউন, মাস্কের ব্যবহার, সামাজিক দূরতে বিধি মেনে চলা কোনও কিছুই বিশেষভাবে কাজে আসছে না। ভ্যাকসিন ছাড়া যে রোগ নিরাময়ে উপায় নেই তা কম বেশি সকলেরই জানা।ইতিমধ্যেই আইসিএমআর এবং ভাইরোলজি ইনস্টিটিউটের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে ভারতের জন্য 'কোভ্যাক্সিন' আনতে চলেছে ভারত বায়োটেক সংস্থা। তবে ভারতের কোভিড বাজারকে ধরতে পুনে ভিত্তিক সংস্থা সেরাম ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়া এবার অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে তাঁদের আবিষ্কৃত ভ্যাকসিনকে ভারতের বাজারে নিয়ে আসতে চলেছে।
কীভাবে কাজ হবে?
ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর)-এর ডিরেক্টর জেনারেল ডা: বলরাম ভার্গব জানিয়েছেন যে বিশ্বব্যাপী সমস্ত ধরনের ভ্যাকসিন সরবরাহের প্রায় ৬০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করে ভারত। ভ্যাকসিন তৈরি কিংবা সরবরাহের ক্ষেত্রে এশিয়ার মূল জায়গা ভারতই। দেশীয়ভাবে তৈরি হওয়া কোভ্যাক্সিনের পাশাপাশি তাই অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিন এনে কোভিডমুক্ত করতে উদ্যোগী হয়েছে সেরাম ইনস্টিটিউট। এই মুহুর্তে বিশ্বে অক্সফোর্ড ভ্যাকসিনই একমাত্র যারা মানবদেহে ভ্যাকসিনের ক্লিনিকাল ট্রায়াল শুরু করে দিয়েছে। তৃতীয় ধাপেও পৌঁছে গিয়েছে এই ভ্যাকসিন।
আরও পড়ুন, করোনায় অক্সফোর্ড ভ্যাকসিনের কামাল! জানুন ঠিক কী করবে এই ভ্যাকসিন
অক্সফোর্ড ভ্যাকসিন কোন পর্যায়ে আছে?
অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার যৌথ উদ্যোগে তৈরি এই ভ্যাকসিনের প্রাথমিক ক্লিনিকাল ট্রায়াল কতটা সফল তা ২০ জুলাই প্রকাশিত হয়েছে ল্যানসেট জার্নালে। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, “এই ভ্যাকসিনটি (ChAdOx1 nCoV-19) সুরক্ষার ক্ষেত্রে উপযোগী। যেমন প্রয়োজন সেই মতো দেহে অ্যান্টিবডিও তৈরি করতে সক্ষম হচ্ছে। এর অর্থ হল মানবদেহে এই ভ্যাকসিন রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাকে পুনরুদ্ধার করতে পারছে এবং এটি মানব শরীরের জন্য সম্পূর্ণ সুরক্ষিত।”
যদিও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে এখনও পর্যন্ত ভ্যাকসিন প্রস্তুত এবং কার্যকারিতায় এগিয়ে রয়েছে অক্সফোর্ড ভ্যাকসিন এবং মডার্না। হু-এর প্রধান বিজ্ঞানী সৌম্যা স্বামীনাথন বলেন, “ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারীরা যে যেই অবস্থানে রয়েছে সেই সবদিক বিবেচনা করেই বলতে পারি যে এই দুই ভ্যাকসিন এখনও পর্যন্ত কার্যকারীতায় উন্নতমানের।” সৌম্যা স্বামীনাথন এও বলেন, “আমরা সকলেই জানি মডার্নার ভ্যাকসিনটি সম্ভবত জুলাইয়ের মাঝামাঝি তিন ধাপের একটি ক্লিনিকাল ট্রায়ালে যেতে চলেছে। সেদিক থেকে দেখলে অক্সফোর্ডের থেকে তারা খুব একটা পিছিয়ে নেই।”
আরও পড়ুন, ভাইরাসে 'করোনা' নেই! বিশ্বকে অবাক করে নয়া রূপ নিল কোভিড
মডার্ণা ভ্যাকসিন কি আরও উন্নত?
অন্যদিকে মডার্না তাদের mRNA-1273 ভ্যাকসিনের তৃতীয় পর্যায়ের ক্লিনিকাল ট্রায়াল শুরু করে দিয়েছে। এই ধাপে স্বেচ্ছাসেবকদের ভ্যাকসিন দেওয়া হবে এবং স্বাভাবিক জীবন যাপন করতেই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কয়েক সপ্তাহ বাদে দেখা হবে যে তাঁরা করোনা আক্রান্ত হয়েছে কি না। তবে আশার কথা এটাই যে এখনও পর্যন্ত প্রথম এবং দ্বিতীয় ধাপের ভ্যাকসিন প্রয়োগে কমেছে সংক্রমণের হার। এর আগে সংস্থার সিইও সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গকে জানিয়েছে যে ভ্যাকসিন তৈরির কাজ ঠিকমতো চললে চলতি বছরের নভেম্বর (থ্যাংক্সগিভিং) মাসে এই ভ্যাকসিন সকলের জন্য উপলব্ধ করতে পারবেন।
আরও পড়ুন, মাস্কেই আটকাচ্ছে করোনা সংক্রমণ, মিলল হাতেনাতে প্রমাণ
এদিকে, দেশীয় পদ্ধতিতে তৈরি ভারত বায়োটেকের কোভ্যাক্সিনের প্রথম পর্যায়ের হিউম্যান ট্রায়ালে সাফল্যর দেখা পাওয়া গেল। এই ভ্যাকসিনের ট্রায়ালের জন্য সারা দেশে মোট ১২টি ইনস্টিটিউটকে বেছে নিয়েছিল আইসিএমআর। তাঁদের মধ্য থেকে রোহতকের পোস্ট গ্র্যাডুয়েট ইনস্টিটিউট অফ মেডিকেল সায়েন্স (পিজিআই)-এর তরফে বলা হয়েছে মানবদেহে প্রথম পর্যায়ে কোভ্যাক্সিন টেস্টের ফলাফল ‘আশা দেখাচ্ছে’। পিছিয়ে নেই জেনোভা, জাইডাস স্যাডিলার মতো ভারতের ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলি। ভারত বায়োটেক বাদে এই দুই সংস্থাই এমআরএন-এ ভ্যাকসিনের উপর কাজ করছে। এক্ষেত্রে এই মেসেঞ্জার আরএনএ শরীরে ঢুকেব ভাইরাসের আরএনএ কে চিহ্নিত করে তাঁর বিরোধী প্রতিরোধ গড়ে তুলবে মানবদেহে।
Read the full story in English
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন