কোভিড ১৯ ভ্যাকসিন- করোনাভাইরাস থেকে মুক্তির সন্ধানপ্রক্রিয়া

করোনাজনিত অতিমারী থেকে মুক্তির রাস্তা খুঁজছে সকলে। প্রতিষেধক আবিষ্কারের ব্যাপক চেষ্টা চলছে পৃথিবী জুড়ে। ভারতও শামিল সেই যজ্ঞে।

করোনাজনিত অতিমারী থেকে মুক্তির রাস্তা খুঁজছে সকলে। প্রতিষেধক আবিষ্কারের ব্যাপক চেষ্টা চলছে পৃথিবী জুড়ে। ভারতও শামিল সেই যজ্ঞে।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Corona Vaccine

সারা পৃথিবীতে প্রায় ১০০ গবেষণা চলছে ভ্যাকসিন তৈরির ব্যাপারে

কোভিড-১৯ বিষয়ে আমাদের সামনে এখন তিনটে সম্ভাবনা- প্রথমত, এই রোগের বিরুদ্ধে গোষ্ঠী প্রতিরোধ তৈরি হবে, দ্বিতীয়ত এই রোগের কোনও ওষুধ পাওয়া যাবে, এবং তৃতীয়- ভ্যাকসিন মিলবে। খুব দ্রুত হলেও ভ্যাকসিন তৈরিতে ১২ থেকে ১৮ মাস সময় লাগবে, কিন্তু বিশ্ব জুড়ে যে ধরনের প্রচেষ্টা চলছে তাতে অন্যরকমও হতে পারে।

Advertisment

সারা পৃথিবীতে প্রায় ১০০ গবেষণা চলছে ভ্যাকসিন তৈরির ব্যাপারে। এগুলি বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে, কেউ গবেষণা করছেম, কেউ ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের পর্যায়ে রয়েছেন।

ভ্যাকসিন কী?

ভ্যাকসিন একটি জৈববৈজ্ঞানিক উপাদান যা শরীরে কোনও প্যাথোজেন যে টক্সিন ছড়ায় তার বিরুদ্ধে কাজ করে। এ উপাদান প্রতিরোধ ক্ষমতাকে রোগের জন্য দায়ী প্যাথোজেনকে চিহ্নিত করতে শেখায় এবং তার স্মৃতিতে সবচেয়ে কার্যকরী উপায়ে লড়াই করার স্মৃতিতে রেখে দেয়। কিছু ভ্যাকসিন নিজেই জীবন্ত প্যাথোজেন যা কোনও ক্ষতি করে না তবে শরীর তাকে চিহ্নিত করে এবং ক্রিয়াশীল হয়।

Advertisment

আরও পড়ুন, সার্স মহামারীর থেকে শিখেছিল পূর্ব এশিয়া; করোনার থেকে কী শিখবে ভারত?

যেমন পীতজ্বরের ভ্যাকসিন জীবন্ত তারা পীতজ্বরের ভাইরাসকে দুর্বল করে দেয়।

ভ্যাকসিনেশন জরুরি কেন?

যাঁরা ঝুঁকিপ্রবণ তাঁদের শরীরে ভ্যাকসিন কোনও একটি নির্দিষ্ট অসুখের ব্যাপারে প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করে। ভ্যাকসিন দেওয়া হলে রোগ প্রতিরোধের জন্য আর কিছু প্রয়োজন হয় না। এর ফলে অসুস্থ ব্যক্তিদের চিকিৎসার জন্য স্বাস্থ্যব্যবস্থার উপরেও চাপ কমে।

 কীভাবে ভ্যাকসিন তৈরি হয়?

ভ্যাকসিন তৈরিতে সাধারণত বেশ কয়েকবছর লাগে। গবেষণার পর তা পশুর শরীরে প্রয়োগ করা হয় এবং তারপর হিউম্যান ট্রায়াল পদ্ধতির মধ্যে দিয়ে যাওয়া হয়, যে পদ্ধতিতে সারা বিশ্বের মানুষের শরীরে ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হয়। এই পদ্ধতি নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।

সমস্ত ভ্যাকসিনই নিরাপত্তা ও কার্যকারিতার জন্য তিনটি পর্যায়ে পরীক্ষা করা হয়। প্রথম পর্যায়ে অল্প কিছু মানুষের মধ্যে ট্রায়াল ভ্যাকসিন দেওয়া হয়, দ্বিতীয় পর্যায়ে যাঁদের জন্য ভ্যাকসিন তৈরি হয়েছে, তেমন বৈশিষ্ট্যসম্পন্নদের মধ্যে ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হয় এবং তৃতীয় পর্যায়ে হাজার হাজার মানুষের শরীরে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়।

আরও পড়ুন, নর্দমার জল থেকে করোনা সংক্রমণের আশঙ্কার কথা বলছেন গবেষকরা

এর পর গবেষকরা এ সম্পর্কিত পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করেন। ভ্যাকসিনের ব্যবসায়িক দিকটিও ভুললে চলবে না। সার্স এবং জিকা মহামারী ভ্যাকসিন তৈরির আগেই শেষ হয়ে গিয়েছিল, এর ফলে উৎপাদকরা ক্ষতির মুখে পড়েছিলেন, এবং ফান্ডিং এজেন্সিগুলিও এই প্রকল্প থেকে নিজেদের সরিয়ে নিয়েছিল। এর ফলে অন্য ভ্যাকসিন সংক্রান্ত কর্মসূচিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন কারা তৈরি করছে?

আমেরিকা, চিন, জার্মানি, ব্রিটেন এবং ভারতও ভ্যাকসিন তৈরির প্রক্রিয়ায় রয়েছে।

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা করা হচ্ছে আরেক ধরনের করোনাভাইরাস জনিত রোগ মার্সের ওষুধের মাধ্যমে এই অতিমারীর মোকাবিলা করা যায় কিনা। যেহেতু তা মার্সের জন্য তৈরি হয়েছিল ফলে তা প্রাথমিক স্তর পেরিয়ে গিয়েছে এবং এখন ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল পর্যায়ে রয়েছে।

জার্মানিতে BNT162 নামের একটি ভ্যাকসিন ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল পর্যায়ে রয়েছে। আমেরিকার Pfizer এবং জার্মান সংস্থা BioNtech এই ভ্যাকসিন তৈরি করছে।

আমেরিকায় বায়োটেক সংস্থা মডার্নার সঙ্গে একযোগে mRNA-1273 ভ্যাকসিন তৈরি করছে সে দেশের ন্যাশনাল ইন্সটিট্যুট অফ অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজ।

আরও পড়ুন, কেন সবচেয়ে বেশি ধাক্কা খেল অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ?

চিন শরীরে করোনাভাইরাস প্রবেশ করানোর একটা প্রক্রিয়ার চেষ্টা করছে যাতে স্বাভাবিক প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়। অ্যাকাডেমি অফ মিলিটারি মেডিক্যাল সায়েন্সেসের গবেষকরা হংকংয়ের তালিকাভুক্ত সংস্থা CanSino Biologics-এর সঙ্গে মিলে এই প্রকল্পে কাজ করছেন।

এ ছাড়া যক্ষ্মা রোগের ভ্যাকসিন করোনাভাইরাস প্রতিরোধে কাজ করে কিনা তারও পরীক্ষা চলছে।

 ভারতে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন

শনিবার ৯ মে ২০২০-তে আইসিএমআর বলেছে তারা ভারত বায়োটেক ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে দেশীয় স্তরে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন তৈরির কাজে হাত দিয়েছে। পুনের ন্যাশনাস ইনস্টিট্যুট অফ ভাইরোলজিতে যে ভাইরাস স্ট্রেন পৃথক করা হয়েছে তার সাহায্যেই এই উদ্যোগ নেওয়া হবে।

ভ্যাকসিন তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। আইসিএমআর এবং এবং বিবিআইএল দ্রুত অনুমতি পাওয়ার চেষ্টা করবে বলে আইসিএমআর এক প্রেস বিবৃতিতে জানিয়েছে।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন

coronavirus COVID-19