ভ্যাকসিন আবিষ্কার পর্ব চলছেই। মডার্ণা থেকে ভারত বায়োটেক করোনার দাপট রুখতে ভ্যাকসিন তৈরির লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন গবেষকরা। একের পর এক ট্রায়ালও চলছে। সেই আবহে এবার 'টি সেল'-এ ভরসা রাখতে চলেছে সিঙ্গাপুরের একদল বিজ্ঞানী। কোভিড-১৯ এবং সারস ভাইরাসে যে সব রোগী আক্রান্ত তাঁদের দেহে প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলে করোনা বিদায়ে তাই এই টি সেল ইমিউনিটিতেই (T cell immunity) আস্থা রাখতে চলেছে গবেষকেরা।
কী এই টি সেল ইমিউনিটি?
মানুষের শরীরেই থাকে এই টি সেল। আমাদের দেহে দু’ধরনের প্রতিরোধী কোষ রয়েছে। একটি- ‘বি-সেল’। অন্যটি, টি-সেল। আমাদের দেহের বিশেষ এক ধরনের প্রতিরোধী কোষ নিয়ে তৈরি। দেহের রোগ প্রতিরোধী ব্যবস্থা (ইমিউন সিস্টেম) গড়ে ওঠে যে কোষগুলি দিয়ে এটি সেই কোষ বা সেল। এই কোষগুলি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণের হাত থেকে বাঁচার জন্য দেহে নিজস্ব প্রতিরোধী ব্যবস্থাকে গড়ে তোলে। দেহে নানা ধরনের টি-সেল থাকে। তাদের গায়ে থাকে নানা রকমের ‘রিসেপ্টর’। ভাইরাসের চরিত্র বুঝে এরা কাজ করতে শুরু করে।
করোনা রুখতে কীভাবে কাজ করতে পারে এই টি-সেল?
টি সেল আসলে অনেকটা পদাতিক বাহিনীর মতো। যারা নিজেরা প্রোটিন কাঁধে করে নিয়ে ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে এগিয়ে যায়। করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রে যেসব কোষগুলিতে ভাইরাস ঢুকে বসে থাকে সেখানে সরাসরি ঢুকে যায় টি সেল বাহিনী। রীতিমতো যুদ্ধ করেই ভাইরাস ঘায়েল করতে সক্ষম হয় সে, পরীক্ষায় এমন প্রমাণই পাওয়া গিয়েছে। ১৭ বছর আগে সারস ভাইরাস থেকে সুস্থ হয়ে ওঠা রোগীর দেহে এমন কিছু বিশেষ ধরনের টি সেল পাওয়া গিয়েছে যারা এই করোনা লড়াইয়ের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিচ্ছে।
আরও পড়ুন, করোনার গোষ্ঠী সংক্রমণ কী? কতটা গুরুত্বপূর্ণ?
অন্য আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল সারস অতিমারীর সময় যারা ভাইরাস আক্রান্ত হয়েছিল তাঁদের ৫০ শতাংশের দেহে করোনা সংক্রমণ হয়েছে। বাকিরা সুস্থ। এই পর্যবেক্ষণ থেকে বিজ্ঞানীরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পেরেছেন যে টি সেল এক্ষেত্রে জরুরি ভূমিকা পালন করেছে।
গবেষকরা মনে করছেন এই ধরণের টি সেল-এর মধ্যে একদা অতিমারীর যে 'স্মৃতি' তা রয়ে গিয়েছে। ফলে বর্তমানে সারস ভাইরাসেরই আরেক প্রজাতি করোনার বিরুদ্ধেও লড়াই করতে সফল হবে এই সেল।
এখন প্রশ্ন উঠতে পারে করোনার চরিত্র আলাদা অনেক রোগীর ক্ষেত্রে। সেই পরিস্থিতিতে কতটা উপযোগী টি-সেল? গবেষকরা জানাচ্ছেন, যে সব রোগীর দেহে কাশি, জ্বর এই উপসর্গ থাকছে তাঁদের দেহে কার্যকর হবে টি-সেল। বাকিদের ক্ষেত্রে কী ভূমিকা রয়েছে তা এখনও পরীক্ষাধীন।
Read the story in English
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন