গত ৩১ আগস্ট ইয়েল মেডিসিনের রিভিউয়ে প্রকাশিত এক নিবন্ধেই একাধিক দেশে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির কথা ছিল। সেখানেই বলা হয়েছিল বিএ.২.৮৬ নামে একটি নতুন করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ছড়াচ্ছে। যাকে 'পিরোলা' বলা হচ্ছে। তখনও বিস্তারিত জানা যায়নি। প্রতিবেদনে সেকথা জানিয়ে শুধু বলা হয়েছিল, চিন্তার কারণ থাকতে পারে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, 'এক্সবিবি.১.৫-এর তুলনায় এটির স্পাইক প্রোটিনে (যে রূপে করোনা ভাইরাস মানবদেহে প্রবেশ করে) ৩০টিরও বেশি মিউটেশন আছে। এই নতুন স্ট্রেন ওমিক্রনেরই একটি রূপ। এই রূপই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রভাবশালী স্ট্রেন হয়ে ধরা পড়েছিল।'
পিরোলা
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনার প্রভাব বিস্তারের পিছনে এই স্ট্রেন। ইয়েল মেডিসিনের সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ স্কট রবার্টসের মতে, এই স্ট্রেন দ্রুত সংক্রমণ দ্রুত ছড়ায়। তিনি রিপোর্টে জানিয়েছেন, এটি ডেল্টা এবং করোনা ভাইরাসের প্রাথমিক স্ট্রেনগুলির একটি। ওমিক্রন ২০২১ সালের শীতকালে প্রভাবশালী ছিল। এর সঙ্গে পিরোলার পার্থক্য আছে। প্রতিটি শ্বাসযন্ত্রের ভাইরাসের মত এই স্ট্রেন এক থেকে অন্য ব্যক্তির মধ্যে ছড়ায়। সময়ের সঙ্গে বিবর্তিত হয়। বিশ্বের ছ'টি দেশে এই স্ট্রেন পাওয়া গিয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা, এই সংক্রমণের ঘটনার একটির সঙ্গে অপরটির কোনও সম্পর্ক পর্যন্ত নেই।
কীভাবে ভাইরাস রূপ বদলায়?
সময়ের সঙ্গে সমস্ত ভাইরাসের রূপান্তর স্বাভাবিক ঘটনা। ভাইরাসগুলির জিনগত উপাদান আরএনএ মানবদেহে কোষে প্রবেশ করে নিজের প্রতিলিপি তৈরি করতে শুরু করে। যা অন্যান্য কোষকে সংক্রামিত করে। এই প্রতিলিপি তৈরির প্রক্রিয়া চলাকালীন যখনই ত্রুটি ঘটে, তখনই তা রূপ বদলায়। যা এই ভাইরাসকে আরও সহজে প্রতিলিপি তৈরি করতে এবং মানব কোষে আরও সহজে প্রবেশ করতে সহায়তা করে। এভাবেই রূপান্তরিত হয় ভাইরাসের স্ট্রেন। আর, তা বেশিসংখ্যক মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে।
চরম ক্ষতিকারক নয়
ইয়েল স্কুল অফ মেডিসিনের সাথে কথা বলতে গিয়ে, ইয়েল সার্স-কভ-২ জিনোমিক সার্ভিলেন্স ইনিশিয়েটিভের নেতৃত্বদানকারী পোস্ট-ডক্টরাল সহযোগী অ্যান হ্যান বলেছেন যে এক্সবিবি.১.৯ নামে পরিচিত ওমিক্রন সাবভেরিয়েন্টের তুলনায় এটি একটি 'অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ সাবভেরিয়েন্ট'। এই ভেরিয়েন্ট প্রাথমিকভাবে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু, ব্যাপকহারে জনগণের চরম ক্ষতি করেনি। রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে যে এটি ইজরায়েল এবং ডেনমার্কের নজরদারি ল্যাবরেটরি এবং পরে ইংল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ল্যাবগুলোতেও আক্রান্ত হিসেবে সন্দেহভাজনদের নমুনা পরীক্ষা করার সময় শনাক্ত হয়েছে। একই সুরে কথা বলেছেন সুইডেনের ক্যারোলিনস্কা ইনস্টিটিউটের গবেষক বেন মুরেল ও স্ক্রিপস রিসার্চের আণবিক ওষুধের অধ্যাপক তথা স্ক্রিপস রিসার্চ ট্রান্সলেশনাল ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক ড. এরিক টোপোল।
আরও পড়ুন- ভারতীয় বিমান ব্যবসার ‘ভাইজান’! আড়াল থেকে কতটা কলকাঠি নাড়াতেন নরেশ গোয়েল?
সতর্কতা জরুরি
ইয়েল মেডিসিনের সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ স্কট রবার্টস বলেছেন, ইউএস সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি) প্রাথমিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে পিরোলা সম্পর্কে এখনও জানা বাকি। কতটা ক্ষতিকারক তা এখনও বোঝা যায়নি। রবার্টস বলেন, 'আমরা এখনও জানি না এটি কতটা সংক্রমণযোগ্য। শুধু এটি মনে রাখা দরকার যে, এই সংক্রমণের মূলে একই ভাইরাস। প্রতিরোধ পদ্ধতিও তাই একই- মাস্কিং, টিকা, হাত ধোয়া।'