গত ১৮-১৯ মে ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত হল ওয়ার্লড হেলথ অ্যাসেম্বলির ৭৩ তম অধিবেশন। এই অধিবেশনে ভারত, জাপান, ইন্দোনেশিয়া, নিউজিল্যান্ড, ব্রিটেন ও কানাডাসহ বেশ কিছু দেশ একটি প্রস্তাব গ্রহণ করেছে, যে প্রস্তাবে অতিমারী মোকাবিলা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ভূমিকা ও করোনাভাইরাসের পশু থেকে সংক্রমণের উৎস হিসেবে চিহ্নিতকরণ নিয়ে নিরপেক্ষ, স্বাধীন ও সম্পূর্ণ মূল্যায়ন হবে।
বর্তমানে মনে করা হচ্ছে চিনের উহান থেকে এই ভাইরাস ছড়িয়েছে। সংবাদসংস্থা রয়টার্সের রিপোর্ট অনুসারে, ১৯৪টি সদস্য দেশের মধ্যে ১১৬টি দেশ এই প্রস্তাবের পক্ষে রয়েছে।
ওয়ার্ল্ড হেলথ অ্যাসেম্বলি (WHA) কী?
এটি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সিদ্ধান্তগ্রহণকারী একটি অঙ্গ, যা প্রতিবছর সুইজারল্যান্ডের জেনিভায় অনুষ্ঠিত হয়। এই অধিবেশনের সময়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ১৯৪টি সদস্য দেশ WHA-র একজিকিউটিভ বোর্ডের তৈরি করে দেওয়া স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিষয়ে আলোচনা করে, নতুন লক্ষ্য স্থির করে এবং সে লক্ষ্য পূরণের জন্য কর্মসূচি ধার্য করে।
কোভিড-১৯-এর জন্য এ বছরের অধিবেশন ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং তিন সপ্তাহের জায়গায় মাত্র দুদিনে সম্পন্ন হয়েছে।
অস্ট্রেলিয়ার বিদেশমন্ত্রী কোভিড-১৯ মোকাবিলায় সারা বিশ্ব যেভাবে অনুসন্ধানে এগিয়ে এসেছে তাকে ধনন্যবাদ জানান।
জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মার্কেল বলেন কোনও দেশ একাকী এ সমস্যা সমাধান করতে পারবে না, এবং এর মোকাবিলায় বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার প্রচেষ্টাকে সাধুবাদ জানান। মার্কেল আরও বলেন, সমস্ত দেশের উচিত পদ্ধতির উন্নতি ঘটানো এবং বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার অর্থের জোগান সুনিশ্চিত করা।
এ ছাড়া এই অধিবেশনে সারা বিশ্বের ভ্যাকসিন অ্যাকশন প্ল্যান নিয়ে আলোচনা হয়। ইমিউনাইজেশন অ্যাজেন্ডা ২০৩০-এ সমস্ত বয়সীদের মধ্যে রোগ প্রতিরোধ সুনিশ্চিত করা এবং ভ্যাকসিনের সরবরাহ অক্ষণ্ণ রাখার কথা বলা হয়।
অধিবেশনের খশড়া প্রস্তাবে কী বলা রয়েছে?
মঙ্গলবার, এই প্রস্তাব আনে ইউরোপিয় ইউনিয়ন এবং তাকে সমর্থন জানায় ভারত অস্ট্রেলিয়া, জাপান সহ ১০০-র বেশি দেশের পক্ষে অস্ট্রেলিয়া। অধিবেশনে তা গৃহীত হয়।
চিনের নাম উল্লেখ না করা হলেও খশড়া বলা হয়েছে হুয়ের মহাসচিবের কর্তব্য,
ওয়ার্লড অর্গানাইজেশন ফর অ্যানিম্যাল হেলথ, ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচার অরগানাইজেশন ও দেশগুলির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ভাবে কাজ করে একমুখী দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে ভাইরাসের পশু উৎস খুঁজে বের করাএবং তা কীভাবে মানবশরীরে সংক্রমিত হল তা দেখা, যার মধ্যে থাকবে প্রাথমিক বহনকারীর সম্ভাব্য ভূমিকা, এবং এ ধরনের রোগের ঝুঁকি কমানোর ব্যাপারে সহায়তা করা এবং পশুবাহিত রোগের সংক্রমণ ও বৃদ্ধি আটকানো।
এ ছাড়াও প্রস্তাবে বলা হয়েছে, যত দ্রুত সম্ভব যথাযথ সময়ে সদস্য দেশগুলির সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে বর্তমান ব্যবস্থাকে কাজে লাগিয়ে ধাপে ধাপে নিরপেক্ষ, স্বাধীন ও পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করা, এবং কোভিড ১০ মোকাবিলায় হুয়ের সমন্বয়ে যে আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য মোকাবিলার ব্যবস্থা করা হয়েছে তার শিক্ষা ও অভিজ্ঞতা বিনিময় করা।
এ প্রস্তাব কেন গুরুত্বপূর্ণ?
অতিমারীর শুরু থেকেই চিনের উপর ক্রমবর্ধমান চাপ তৈরি হয়েছে, যাতে ভাইরাসের উৎস হিসেবে চিনকে চিহ্নিত করার বিষয়টি তারা অস্বীকার করে এসেছে। ইতিমধ্যে আমেরিকা হু-কে দায়ী করেছে যে তারা সময়মত তথ্য দেয়নি এবং তথ্য স্বচ্ছভাবেও দেয়নি। আমেরিকার অভিযোগ, এই অতিমারী আয়ত্তের বাইরে চলে যাওয়ার একটা বড় কারণ হল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্তার ব্যর্থতা।
মঙ্গলবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফান্ডিং সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। গত মাসে ট্রাম্প সংস্থার ফান্ডিং আটকে দিয়েছিলেন। ট্রাম্প বলেছিলে হুয়ের ভূমিকা ছিল চিন কেন্দ্রিক এবং বেজিং যে ভাবে এই অতিমারীর ভয়াবহতা কম করে দেখাতে চেয়েছিল, হু-ও তার সঙ্গে হাত মিলিয়েছে।
সোমবার রাতে ট্রাম্প হুয়ের মহাসচিবকে লেখা একটি চিঠি টুইট করেন, যাতে তিনি চিনের প্রশংসা করায় এবং স্বচ্ছতার অভাব নিয়ে হু-কে আক্রমণ করেন।
This is the letter sent to Dr. Tedros of the World Health Organization. It is self-explanatory! pic.twitter.com/pF2kzPUpDv
— Donald J. Trump (@realDonaldTrump) May 19, 2020
এর ফল চিনের উপর কীভাবে পড়বে?
যেহেতু WHA-তে প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে এখন দেখতে হবে কীভাবে এবং কতটা স্বাধীনভাবে তদন্ত হয়। তদন্তের সময়রেখা কিন্তু প্রস্কাবে নেই। এখনও পর্যন্ত, ভাইরাস নিয়ে আন্তর্জাতিক তদন্তের বিরোধিতা করে এসেছে চিন।
সোমবার চিনের প্রধান শি জিনপিং রাষ্ট্র সংঘকে ২ বিলিয়ন ডলার অনুদানের কথা ঘোষণা করেছেন, যা আমেরিকার বন্ধ হওয়া ফান্ডের দ্বিগুণ। একই সঙ্গে চিন আফ্রিকায় হাসপাতাল ও পরিকাঠামো তৈরির কথা বলেছে।
ট্রাম্প প্রশাসন চিনের এই ঘোষণাকে তাদের বিরুদ্ধে ওঠা ভূমিকার তদন্ত প্রক্রিয়া পিছোনোর প্রচেষ্টা হিসেবেই দেখছে।