কোভিড-১৯-এর স্মৃতি এখনও মানুষের মধ্যে সতেজ। সবে মাত্র তিন বছর আগেই কোভিড মহামারির তাণ্ডবে বিশ্বজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। মৃত্যুমিছিল, লকডাউনের জেরে জনজীবন একেবারে থমকে গিয়েছিল।
২০২১ সালের মে মাসে ১.২ লক্ষেরও বেশি মৃত্যু নাড়িয়ে দিয়েছে সকলকে। সেই আতঙ্ক থেকে বেরিয়ে মানুষ আবার স্বাভাবিক জীবনকে বেছে নিয়েছে। মে মাসের প্রথম তিন সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে ৩ লাখের বেশি মানুষ কোভিডে আক্রান্ত হয়েছিলেন। ঠিক তিন বছর আগে আজকের দিনে ৬ মে, ২০২১-এ ৪.১৪ লাখের বেশি পজিটিভ আক্রান্তের হদিশ মেলে। ২০২২-এর জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের কারণে সংক্রমণের হু-হু করে বাড়তে থাকে। তবে সেই ভ্যারিয়েন্টে খুব বেশি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি।
তাহলে, মহামারী কি শেষের পথে?
৫ মে, ২০২৩ -এ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) ঘোষণা করেছে যে কোভিড -১৯ আর একটি বিশ্বব্যাপী জরুরী অবস্থার জন্য দায়ি নয়। ভারত ৩১ শে মার্চ, ২০২২-এর পরে সমস্ত কোভিড ১৯-সম্পর্কিত বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করে নেয়।যাইহোক, SARS-CoV-2, যে ভাইরাসটি কোভিড -১৯ রোগের কারণ, এর সংক্রমণের জেরে কিছু মৃত্যুও অব্যাহত রয়েছে। এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ ঘটাচ্ছে JN.1 ভ্যারিয়েন্ট। কিন্তু এই ভ্যারিয়েন্ট গুরুতর রোগ সৃষ্টি করে না।
ডব্লিউএইচওর তথ্য দেখায় যে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত চার সপ্তাহে, সারা বিশ্বে ২.৪২ লাখেরও বেশি ইতিবাচক কেস রিপোর্ট করা হয়েছে। যার দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি রাশিয়া এবং নিউজিল্যান্ডে রিপোর্ট করা হয়েছে । পাশাপাশি ভারতে প্রায় ৩ হাজার কেস রিপোর্ট করা হয়েছে। এই একই সময়ে, প্রায় ৩৪০০ মৃত্যুর জন্য কোভিড -১৯ দায়ি করা হয়েছে। প্রায় ২৪০০ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এবং ৫৩ টি ভারতে রিপোর্টে করা হয়েছে।
খুব কম পরীক্ষা সত্ত্বেও, ভারত এখনও কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা ৫০ ছুঁইছুঁই। এমনকি কোভিডের জেরে কেরলে একটি মৃত্যুর ঘটনাও রিপোর্ট করা হয়েছে। পুনেতে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ভাইরোলজি, হায়দরাবাদের সেন্টার ফর সেলুলার অ্যান্ড মলিকুলার বায়োলজি এবং ফরিদাবাদের ট্রান্সলেশনাল হেলথ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ইনস্টিটিউট সহ কয়েকটি ল্যাব, মূলত বর্জ্য জলের নজরদারি এবং হাসপাতাল থেকে নমুনার মাধ্যমে ভাইরাসটিকে ট্র্যাক করার কাজ করছে। বর্জ্য জলের নজরদারি ভারতেও JN.1 ভ্যারিয়েন্টের উপস্থিতি ধরা পড়েছে।
কেন বেশি মানুষ সংক্রমিত হচ্ছে না?
বর্তমানে খুব কম সংখ্যক মানুষ বর্তমানে কোভিডে আক্রান্ত হচ্ছেন। গত কয়েক বছরে কোভিড-১৯ যেভাবে একটি বড় ঝুঁকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। সে তুলনায় বর্তমানে আক্রান্তের সংখ্যা অনেকটাই কম। ২০২১ সালের শেষ নাগাদ, অর্ধেকেরও বেশি বিশ্ব জনসংখ্যা ভ্যাকসিনেশনের মাধ্যমে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে সাহায্য করেছে। অশোকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ত্রিবেদী স্কুল অফ বায়োসায়েন্সেস ও স্বাস্থ্য গবেষণার ডিন অনুরাগ আগরওয়াল বলেছেন, “মানুষ সংক্রামিত হচ্ছে, সম্ভবত বড় সংখ্যায়। আমরা জানি না কারণ অনেকের পরীক্ষা করা হচ্ছে না। কিন্তু এই প্রক্রিয়ার মধ্যে, তাদের প্রাকৃতিক ভাবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ছে"।
তিনি আরও বলেছেন, ইতিমধ্যে, ভাইরাসটি আরও বিপজ্জনক রূপান্তরে রূপান্তরিত হয়নি, এটাইআশার বিষয়। এ অবস্থা কতদিন চলবে তা কারোরই জানা নেই। যাইহোক, ভাইরাসটি বিজ্ঞানী এবং জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের কাছে আর নতুন নয়, তাঁরা এখন এটি সম্পর্কে আরও ভালভাবে বুঝতে পেরেছেন এবং জানেন কী করতে হবে এবং কীভাবে এর বিস্তার মোকাবেলা করতে হবে।