Advertisment

গুরুদাস দাশগুপ্ত: সংসদে নিপীড়িত মানুষের জোরালো কণ্ঠস্বর

গুরুদাস দাশগুপ্তের সংসদীয় কেরিয়ারের সবচেয়ে বড় বাঁক ছিল ৯-এর দশকের গোড়ায় সংসদে হর্ষদ মেহতা কেলেংকারি নিয়ে সোচ্চার হওয়ায়।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

সিপিআইয়ের প্রবীণ নেতা গুরুদাস দাশগুপ্ত বৃহস্পতিবার কলকাতায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন। ৮-এর দশকের মাঝামাঝি থেকে সংসদে তিনি ছিলেন বামেদের শক্তিশালী কণ্ঠস্বর, যিনি অক্লান্তভাবে সরকারের বিরুদ্ধে লড়ে গিয়েছেন সে সময়ে। কর্পোরেট দুর্নীতি এবং আর্থিক অপরাধের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তিনি ছিলেন ক্লান্তিহীন, একই সঙ্গে শ্রমিক শ্রেণির আন্দোলনকে তিনি এক ছাতার নিচে আনতে চেয়েছিলেন, চেয়েছিলেন রাজনৈতিক দলমত নির্বিশেষে সমস্ত শ্রমিকরা জোটবদ্ধ হোক।

Advertisment

গুরুদাস দাশগুপ্তের রাজনৈতিক জীবন শুরু হয় ছাত্র রাজনীতির হাত ধরে, ৫-এর দশক থেকে। অবিভক্ত বঙ্গীয় প্রাদেশিক ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হন তিনি। তাঁর হাত ধরে তৈরি হয় পশ্চিমবঙ্গ যুব সংঘ যা পরবর্তীতে সিপিআইয়ের যুব সংগঠন এআইওয়াইএফ-এ রূপান্তরিত হয়।

তাঁর রাজনৈতিক জীবনে মোড় ঘুরে যায় ১৯৮৫ সালে তিনি রাজ্যসভায় নির্বাচিত হওয়ার পর। প্রকৃতিগতভাবে একজন কর্মী হওয়ার সুবাদে অল্পদিনের মধ্যেই সংসদের উচ্চকক্ষে তিনি হয়ে ওঠেন বামেদের কণ্ঠ। গুরুদাস দাশগুপ্তের সতীর্থ সিপিআইয়ের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক এস সুধাকর রেড্ডি তাঁকে মনে রেখেছেন শ্রম মন্ত্রকের একটি কমিটি সদস্য হিসেবে কৃষিশ্রমিকদের অবস্থা নিয়ে তাঁর কাজ নিয়ে।

সুধাকর রেড্ডি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে জানিয়েছেন, "ওরা সারা দেশ ঘুরে প্রয়োজনীয় প্রস্তাব দিয়েছিলেন। এর মধ্যে ছিল কৃষিশ্রমিকদের সামাজিক নিরাপত্তা এবং ন্যূনতম মজুরির মত প্রস্তাব যা এ বিষয়ে পথিকৃৎ বলে গণ্য। গুরুদাস দাশগুপ্ত মানুষ হিসেবে হৃদয়বানও ছিলেন।" সুধাকর একটি ঘটনার কথা মনে করালেন। একটি বড় সংস্থার অপকর্ম ফাঁস করে দেবার জন্য আয়কর দফতর গুরুদাসকে সাড়ে সাত লক্ষ টাকা পুরস্কার দেয়।

"উনি গোটা অঙ্কটাই ন্যাশনাল ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান উইমেনের পাঞ্জাব ইউনিটকে দিয়ে দেন খালিস্তান সন্ত্রাসে বিধ্বস্ত শিশুদের সাহায্যার্থে।" গুরুদাস দাশগুপ্তের সংসদীয় কেরিয়ারের সবচেয়ে বড় বাঁক ছিল ৯-এর দশকের গোড়ায় সংসদে হর্ষদ মেহতা কেলেংকারি নিয়ে সোচ্চার হওয়ায়। বেশ কিছু অনিয়ম ফাঁস করে দেন তিনি।

পিভি নরসীমা রাও সরকার এর জেরে এই কেলেংকারির তদন্তে যৌথ সংসদীয় কমিটি তৈরি করেন। এই কেলেংকারি নাড়িয়ে দিয়েছিল শেয়ার বাজারকে।

কংগ্রেসের রাম নিবাস মিরধার নেতৃত্বদায়ী এই কমিটির সদস্য ছিলেন তিনি। তাঁর দলের সতীর্থরা এখনও মনে করতে পারেন সিপিএমের প্রাক্তন নেতা সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে একযোগে আমলাদের জেরা করার কথায়। যৌথ সংসদীয় কমিটির চূড়ান্ত রিপোর্টে অখুশি গুরুদাস দাশগুপ্ত নিজে আরেকটি রিপোর্ট লেখেন, যাতে তিনি এমন একাধিক ব্যক্তির নাম উল্লেখ করেন, যাঁদের নাম সরকারি রিপোর্টে ছিল না। তাঁর সেই রিপোর্ট পরে একটি বই আকারে প্রকাশিত হয়।

সুবক্তা হিসেবে পরিচিত গুরুদাস দাশগুপ্ত সাংসদ হিসেবে কাজ করেছেন ২৫ বছর ধরে - রাজ্যসভা সদস্য হিসেবে তিন দফায়, ১৯৮৫, ১৯৮৮ ও ১৯৯৪ সালে এবং তারপর ফের এমপি হিসেবে ২০০৪ ও ২০০৯ সালে।

রাজ্যসভায় তিনি ছিলেন ২০০০ সাল পর্যন্ত। ফের লোকসবায় নির্বাচিত হন ২০০৪ সালে। ২০০৯ সালে পুনর্নির্বাচিত হওয়ার পর লোকসভায় সিপিআইয়ের দলনেতা হন তিনি। ২জি স্পেকট্রাম কেলেংকারির তদনত্ে থাকা যৌথ সংসদীয় কমিটির সদস্য ছিলেন তিনি।

সক্রিয় রাজনীতির সঙ্গে সঙ্গে, শ্রমিক আন্দোলনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন তিনি। তিনি ছিলেন সিপিআইয়ের ট্রেড ইউনিয়ন সংগঠন এআইটিইউসি-র সাধারণ সম্পাদক এবং ২০০১ সাল পর্যন্ত সাধারণ সম্পাদকের কর্মভারও পালন করেন তিনি।

ইউপিএ সরকারের আমলে সরকারি ক্ষেত্র বাঁচাতে যে দেশ জোড়া শ্রমিক ধর্মঘটে ২০ কোটিরও বেশি শ্রমিক যোগ দিয়েছিলেন, তাতে বিএমএস এবং আইএনটিইউসি সহ সমস্ত ট্রেড ইউনিয়নগুলিকে একত্রিত করার পিছনে তিনিই ছিলেন আসল লোক। এআইটিইউসি-র সাধারণ সম্পাদক থাকাকালীন সংগঠনের জন্য দিল্লিতে একটি দফতরও বানিয়েছিলেন তিনি।

সুধাকর রেড্ডি বলেন, সাংসদ হিসেবে তাঁর দীর্ঘ মেয়াদে সরকারের বহু কেলেংকারি সামনে নিয়ে এসেছেন তিনি। তিনি ছিলেন নিপীড়িত মানুষদের এক শক্তিশালী কণ্ঠস্বর।

২০১৫ সালে গুরুদাস দাশগুপ্ত সিপিআইয়ের পণ্ডিচেরী কংগ্রেসে সহকারী সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিক হন। তবে অসুস্থ স্ত্রীর জন্য নিজের সক্রিয় রাজনৈতিক জীবন থেকে অবসর গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেন তিনি। সিপিআইয়ের প্রোগ্রাম কমিশনের চেয়ারম্যান ছিলেন গুরুদাস দাশগুপ্ত। সিপিআইয়ের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বভার গ্রহণের জন্য একাধিকবার তাঁর কাছে প্রস্তাব দেওয়া হলেও, সে প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছেন তিনি।

CPI Left
Advertisment