Cyclone rain-triggered landslides: ঘূর্ণিঝড় 'রেমাল' চলে গেলেও, তার প্রভাব এখনও বেজায় অস্বস্তিতে রেখেছে পশ্চিমবঙ্গ-সহ দেশের উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলোকে। এখনও বিভিন্ন রাস্তায় গাছ পড়ে আছে। আড়াআড়ি অবস্থা থেকে সরালেও বিরাট গাছ রাস্তার পাশেই পড়ে আছে এখনও। অনেক জায়গায় জল জম আছে। দু'দিন শেষ হতে চলল, তা-ও নামেনি। পাহাড়ি অঞ্চলের অবস্থা আরও খারাপ। বহু জায়গায় ব্যাপক ধস নেমেছে। গাড়ি চলাচল দূর। রাস্তা সারাই করতেই কালঘাম ছুটছে শ্রমিক, ঠিকাদার, ইঞ্জিনিয়ারদের।
বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা
তার মধ্যেই বিরাট আশঙ্কার কথা শুনিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের সাফ কথা, ঘূর্ণিঝড় আর বৃষ্টি চোখে আঙুল দিয়ে পরিস্থিতিটা দেখিয়ে দিয়ে গেল। আসলে ভারতের প্রায় ১৩% এলাকা, ১৫টি রাজ্য, ৪টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল- সব এমন পরিস্থিতিতে আছে যে, যেকোনও সময় বড়সড় ভূমিধস নামতে পারে। রেমাল শুধু উপকূলে আঘাত হেনেছে। তাতেই পশ্চিমবঙ্গে ছয় জনের মৃত্যু হয়েছে। উপকূলীয় বিভিন্ন জেলায় অন্ততপক্ষে ২৭ হাজার ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিপদ আরও বাড়তে পারত। আবহাওয়া দফতর সঠিক সময়ে আভাস দেওয়ায় অনেককে সময়মতো সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। আর তারই ফলে ঘূর্ণিঝড়ে ব্যাপক প্রাণহানির আশঙ্কা ঠেকানো গেছে।
ঘূর্ণিঝড়ের পর উত্তর-পূর্বে পরিস্থিতি
রেমাল-এর জেরে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বড় আকারের ক্ষতি হয়েছে। ভারী বৃষ্টিপাতে মেঘালয়, মিজোরাম, আসাম এবং নাগাল্যান্ডের বেশ কয়েকটি জায়গায় ব্যাপক ধস নেমেছে। তাতে মৃত্যুর সংখ্যা ইতিমধ্যেই ৩০ ছাড়িয়েছে। শুধুমাত্র মিজোরামের আইজলেই একট পাথর খনিতে ধস নেমে অন্তত ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। সংখ্যাটা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রশাসনের। বিশেষজ্ঞরা বলে দিয়েছেন, সিকিম এবং গোটা উত্তরবঙ্গ ধসপ্রবণ এলাকা। যে কোনও সময় বড় কিছু ঘটতে পারে। সেই আশঙ্কা যে মিথ্যে নয়, তার প্রমাণ ২০০৯ এর মে মাসে ঘূর্ণিঝড় 'আইলা'। সেবারও দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ধস নেমেছিল। আর, নদীগুলো ফুঁসে উঠেছিল। এবারও তাই হয়েছে। ব্যাপক বৃষ্টিতে নদীগুলো বিপদসীমার ওপর দিয়ে বইতে শুরু করেছে।
আরও পড়ুন- বিবাহ বিচ্ছেদের উপর খাঁড়া! ডিভোর্স ঠেকাতে কড়া আইনের শাসনে এই দেশের দম্পতিরা
এমনিতেও পাহাড়ে হিমবাহে ধস বিশেষজ্ঞদের চিন্তায় রেখেছে
এমনিতেও পাহাড়ে হিমবাহের হ্রদ ভেঙে মাঝেমধ্যেই ঘটে যাওয়া ধস বিশেষজ্ঞদের চিন্তায় রেখেছে। সাম্প্রতিক অতীতে বারবার দেখা গেছে, ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে হিমবাহের হ্রদ ভেঙে গেছে। যার ফলে আকস্মিক বন্যা হয়েছে। ধস নেমেছে। আর, তারসঙ্গে পাল্লা দিয়ে ঘটেছে ব্যাপক বিদ্যুৎ বিভ্রাট, পরিবহণ ও যোগাযোগ বিপর্যয়, স্বাস্থ্য পরিষেবায় ব্যাঘাত, ত্রাণ বা উদ্ধারকাজে বিপর্যয়। তার মধ্যে আবার, এই ভূমিধসের আশঙ্কা। যার ফলে, ব্যাপক চিন্তায় প্রশাসন। প্রশাসনের কর্তারা এমন সমস্যা থেকে মুক্তির জন্য উপায় বের করতে চাপ বাড়াচ্ছেন বিশেষজ্ঞদের ওপর। কিন্তু, চাপ বাড়ালে কী হবে? বিশেষজ্ঞদের সাফাই, জনসংখ্যা আর উন্নয়নের কোপে প্রকৃতি ভারসাম্য হারাচ্ছে। নিয়মের তোয়াক্কা না করেই উন্নয়ন চলছে। তাঁরা ভূমিধস ঠেকাতে চেষ্টা করতে পারেন মাত্র। কিন্তু, আদৌ ফলপ্রসূ কিছু করতে পারবেন কি না, তা নিশ্চিত নয়।