দেশে বছরে দুই থেকে তিনবার ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে। ভারতে বর্তমানে ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলা ব্যবস্থা অনেক উন্নত হয়েছে। যাকে বলা হয় স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং পদ্ধতি। তার ফলে, ১৯৯০ বা ২০০০-এর দশকের প্রথম দিকে ঘূর্ণিঝড় এদেশে যতটা ভয়াবহ প্রভাব ফেলত, এখন আর ততটা ফেলতে পারে না। ১৯৯৮ সালে সুপার সাইক্লোনে ওড়িশায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছিল।
বেসরকারি মতে মৃতের সংখ্যা ছিল ১০,০০০ থেকে ৩০,০০০। যা ওড়িশা সরকারকে ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলার নতুন পরিকল্পনা তৈরি করতে বাধ্য করেছিল। তারপর থেকে গত এক দশকে ঘূর্ণিঝড়ে মানুষের জীবনের ক্ষয়ক্ষতি উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। সবচেয়ে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়েও মৃতের সংখ্যা দুই অঙ্কে নেমে এসেছে।
কয়েক বছর ধরে, ভারত ঘূর্ণিঝড়ের জন্য একটি ত্রিস্তরীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে প্রথম স্তরটি হল— প্রাথমিক সতর্কতা ব্যবস্থা, স্থানীয় জনগণের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করা, সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা এবং মহড়া, প্রশিক্ষণ এবং তথ্যের প্রচার। দ্বিতীয় স্তরটিতে থাকছে- মানুষ এবং গবাদি পশুদের সরিয়ে নেওয়ার জন্য আশ্রয়কেন্দ্র তৈরি করা, ভালো পূর্বাভাসের জন্য আবহাওয়ার যন্ত্র এবং সতর্কতাকেন্দ্র স্থাপন করা, বাঁধ নির্মাণ, সংযোগকারী রাস্তা এবং সেতু নির্মাণ। শেষ স্তর হল- ঘূর্ণিঝড়ের জন্য উপকূলীয় কাঠামো উন্নত করা। জল সরবরাহ লাইন, রেলের নেটওয়ার্ক তৈরি, বিমানবন্দরগুলো যাতে প্লাবিত না-হয়, তার ব্যবস্থা করা। স্বাস্থ্য ব্যবস্থা যাতে ব্যাহত না-হয়, তা নিশ্চিত করা।
আরও পড়ুন- ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের ঋণ মকুবের সিদ্ধান্ত, আরবিআইয়ের সিদ্ধান্তে কতটা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যাংকিং ব্যবস্থা?
এই রেসপন্স সিস্টেম বা প্রতিরোধ ব্যবস্থার প্রথম দুটি স্তরে কাজ উল্লেখযোগ্যভাবে সম্পন্ন হয়েছে। যার ফলে ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস কয়েকদিন আগে থেকেই সঠিকভাবে পাওয়া সম্ভব হচ্ছে। এতে প্রাণহানিও অনেকখানি কমে গেছে। আর, তৃতীয় বা শেষ স্তর- যেখানে উপকূলীয় কাঠামো উন্নত করা, জল সরবরাহ ব্যবস্থা, রেল নেটওয়ার্ক তৈরি, বিমানবন্দরে প্লাবন ঠেকানোর ব্যবস্থা, সুনিশ্চিত স্বাস্থ্য ব্যবস্থা তৈরির কাজ এখনও চলছে। সেসব সম্পূর্ণ হলেই ভারতের ঘূর্ণিঝড় প্রতিরোধ ব্যবস্থা আরও বেশি অত্যাধুনিক হয়ে উঠবে।