মহেঞ্জোদারোতে ১৯২৬ সালে আবিষ্কৃত হয়েছিল নৃত্যরতা বালিকার মূর্তিটি। যা নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই। ফের সেই মূর্তি নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক। আন্তর্জাতিক জাদুঘর দিবস উপলক্ষে (১৮ মে), প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দিল্লির প্রগতি ময়দানে আন্তর্জাতিক জাদুঘর মেলার উদ্বোধন করেছেন। অনুষ্ঠান চলাকালীন, প্রধানমন্ত্রী মোদী মেলার মাসকটটিও উন্মোচন করেন। যা, মহেঞ্জোদারোর বিখ্যাত নৃত্যরতা বালিকার 'সমসাময়িক' সংস্করণ।
মূল মূর্তি ও মাসকট
পাঁচ ফুটের বেশি লম্বা সংস্করণটি মূল চিত্রের রূপকে বিকৃত করায় বিভিন্ন মহল থেকে সমালোচিত হয়েছে। কারণ, ৪,৫০০ বছরের পুরনো ব্রোঞ্জ মূর্তি, যা মহেঞ্জদারোয় উদ্ধার হয়েছিল, উচ্চতা মাত্র ১০.৫ সেমি। তার পরনে ছিল একাধিক চুড়ি এবং একটি নেকলেস। মূর্তির রং ছিল কালো এবং সম্পূর্ণ নগ্ন। কিন্তু, মাসকটের মূর্তির ত্বক ফরসা। পরনে গোলাপি ব্লাউজ ও একটি অফ-হোয়াইট কোমর কোট। মন্ত্রক জানিয়েছে যে মাসকটটি মহেঞ্জদারোর নৃত্যরতা বালিকার মূর্তি থেকে অনুপ্রাণিত। কিন্তু, তার হুবহু নকল নয়। বরং, এই মাসকট সমসাময়িক সমাজের রীতিনীতি মেনে তৈরি করা হয়েছে। যাকে আধুনিক যুগের প্রতীক হিসেবে ব্যাখ্যা করা হবে।
মহেঞ্জদারোর নৃত্যরতা বালিকা
মহেঞ্জদারো সিন্ধু সভ্যতার অংশ। সিন্ধু সভ্যতা খ্রিস্টপূর্ব ৩,৩০০-১,৩০০ সালের। এই সভ্যতার খ্যাতি ছড়িয়েছিল খ্রিস্টপূর্ব ২,৬০০ থেকে ১,৯০০ সালের মধ্যে। এই সভ্যতা হরপ্পা-মহেঞ্জোদারো সভ্যতা নামেও পরিচিত। ১৯২৪ সালে এই সভ্যতা আবিষ্কারের ঘোষণা না-হওয়া পর্যন্ত, দীর্ঘকাল তা বিস্মৃত ছিল। ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথম দিক থেকে এই সভ্যতা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। তবে, এই সভ্যতা ঠিক কবেকার এবং প্রাচীন সভ্যতা কি না, তা নিয়ে নানা ধন্ধ ছিল ১৯২০-র দশক পর্যন্ত। তারপর দেখা যায়, সিন্ধু নদের তীরে গড়ে ওঠা ওই সভ্যতা মেসোপটেমিয়া এবং মিশরের মতো একটি পূর্ণাঙ্গ প্রাচীন সভ্যতার অংশ। আর, শেষ পর্যন্ত সেই স্বীকৃতিও পায়।
আরও পড়ুন- ব্রিজভূষণ থেকে প্রতিবাদী কুস্তিগিররা, সবাই ‘নারকো’-য় রাজি, কী এই পরীক্ষা?
নৃত্যরতা বালিকার মূর্তি আবিষ্কার
প্রাচীন সভ্যতা হিসেবে প্রাথমিক স্বীকৃতির পর, হরপ্পা এবং মহেঞ্জোদারো- এই দুটি প্রধান স্থানে খননকার্য চালানো হয়েছিল। ১৯২৬ সালে ব্রিটিশ প্রত্নতাত্ত্বিক আর্নেস্ট ম্যাককে মহেঞ্জোদারোর দুর্গের 'এইচআর এলাকার' 'নবম গলিতে' একটি ধ্বংসপ্রাপ্ত বাড়িতে নৃত্যরতা বালিকার মূর্তিটি খননের সময় আবিষ্কার করেন। আজ, ব্রোঞ্জের মূর্তিটি ভারতের জাতীয় জাদুঘরে প্রত্নসামগ্রী হিসেবে সংরক্ষিত। যা সিন্ধু সভ্যতার ব্যাপারে উৎসাহিত দর্শকদের মুগ্ধ করে।