বিশ্লেষণ: সরকারি কর্মীদের অতিরিক্ত মহার্ঘভাতা কি অর্থনীতিকে সাহায্য করবে?
মহার্ঘভাতা বৃদ্ধির ফলে সরকারি কর্মীরা হাতে অতিরিক্ত টাকা পাবেন। যদি এই অতিরিক্ত টাকার পুরোটা খরচ করা হয়, তাহলে তা পণ্যের ক্রমহ্রাসমান চাহিদার যে পরিস্থিতি, যা বর্তমান অর্থনীতির সবচেয়ে বড় সমস্যা- তার হাল ফেরাবে।
বুধবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের মহার্ঘভাতা ৫ শতাংশ বৃদ্ধি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর ফলে ৫০ লক্ষ কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারী এবং ৬৫ লক্ষ পেনশনভোগী বর্তমান ১২ শতাংশের জায়গায় মূল বেতনের ১৭ শতাংশ মহার্ঘভাতা হিসেবে পাবেন।
Advertisment
মহার্ঘভাতা কী এবং তা কী করে হিসেব করা হয়?
ক্রমবর্ধমান জীবযাপনের খরচের সঙ্গে যাতে কর্মচারীরা সঙ্গতি রেখে চলতে পারেন, সে উদ্দেশ্যে সরকার মহার্ঘভাতা দেয়। টাকার ক্রয়ক্ষমতা মুদ্রাস্ফীতির ফলে কমে আসে বলেই মহার্ঘভাতা দেওয়া হয়।
যেমন বার্ষিক মুদ্রাস্ফীতির হার যদি ৫ শতাংশ হয়, তাহলে প্রথম বছরে যে পণ্য ১০০ টাকায় পাওয়া যেত, দ্বিতীয় বছরে তার দাম হবে ১০৫ টাকা। কোনও কর্মচারীর বেতন যদি তাঁকে ১০০ টাকার পণ্য কেনার সঙ্গতি দিয়ে থাকে তাহলে তিনি প্রথম বছরে সে পণ্য কিনতে পারবেন।
কিন্তু দ্বিতীয় বছরে, মুদ্রাস্ফীতির কারণে সে পণ্যের দাম ১০৫ টাকা হয়ে যাওয়ায় ওই কর্মচারী আর সে পণ্য ১০০ টাকা দিয়ে কিনতে পারবেন না। এই ফারাক ঘোচানোর উদ্দেশ্যেই সরকার কর্মীদের মহার্ঘভাতা দিয়ে থাকে।
মহার্ঘ ভাতার হিসেব করার জন্য সরকার সাধারণ ভাবে সারা ভারত ভোগ্যপণ্যের দামের সূচকের ভিত্তিতে তৈরি মুদ্রাস্ফীতির হারের উপর নির্ভর করে থাকে। বছরে দুবার মহার্ঘভাতা পর্যালোচনা করা হয়।
বর্ধিত মহার্ঘভাতা এখন অর্থনীতির উপর কীভাবে প্রভাব ফেলবে?
মহার্ঘভাতা বৃদ্ধির ফলে সরকারি কর্মীরা হাতে অতিরিক্ত টাকা পাবেন। যদি এই অতিরিক্ত টাকার পুরোটা খরচ করা হয়, তাহলে তা পণ্যের ক্রমহ্রাসমান চাহিদার যে পরিস্থিতি, যা বর্তমান অর্থনীতির সবচেয়ে বড় সমস্যা- তার হাল ফেরাবে।
তবে গোটা বিষয়টি নির্ভর করবে, কর্মীরা এই অর্থ আদৌ খরচ করবেন কিনা বা করলেও কতটা খরচ করবেন, তার উপরে। বর্তমানে অনিরাপত্তার যে বাতাবরণ মানসিকভাবে তৈরি হয়ে রয়েছে, তার ভিত্তিতে সরকারি কর্মীরা এই টাকা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টেই রেখে দিতে পারেন। কিন্তু স্বল্প মেয়াদি জমায় সুদের হার কমানোর যে সিদ্ধান্ত বুধবারই স্টেট ব্যাঙ্ক ঘোষণা করে দিয়েছে, তার ভিত্তিতে মনে করা যায় যে এ টাকা জমানোর বদলে খরচই করার দিকে মন দেবেন তাঁরা।
কিন্তু যদি এই অর্থের সবটাই ব্যাঙ্কেও যায়, তাহলেও তা ব্যাঙ্কিং পদ্ধতিতে ফান্ডের পরিমাণ বাড়িয়ে অর্থনীতিকে সাহায্যই করবে।
এর কি খারাপ দিকও রয়েছে?
হ্যাঁ, তাও রয়েছে বৈকি। এই অর্থ যাবে সরকারের ভাণ্ডার থেকে। ধরা যাক, বর্তমান পরিস্থিতিতে, যখন সরকার রাজস্ব তুলতেই সমস্যা হচ্ছে, সে সময়ে মহার্ঘ ভাতার অতিরিক্ত খরচ তোলার জন্য হয় বাজারের কাছেই যেতে হবে, যার ফলে বেসরকারি ব্যবসায়ীদের ঋণ দেবার জন্য অর্থ কম পড়বে। অথবা সরকারকে অন্য খরচ, যেমন আরও রাস্তা বা আরও স্কুল না বানিয়ে সে টাকা মহার্ঘভাতার খাতে খরচ করতে হবে।