১৬ ডিসেম্বরের গণধর্ষণ ও হত্যা মামলা নয়া মোড় নিল, যখন বিনয় শর্মা আদালতে নিজেকে মানসিক রোগী বলে দাবি করে এবং নিজের মাকেও চিনতে পারে না। বিনয়ের আইনজীবী বলেছেন দেওয়ালে মাথা ঠুকে সে নিজেকে আহত করেছে।
বিনয়ের আইনজীবী এপি সিং আদালতে বলেন, তিনি জেলে বিনয় শর্মাকে দেখতে গিয়েছিলেন তার পরিবারের সদস্যদের অনুরোধে। সেখানে গিয়ে তিনি দেখেন বিনয়ের মাথায় গুরুতর ক্ষত রয়েছে, ডান হাত ভাঙা ও প্লাস্টার করা, এবং সে "উন্মাদনা", "মানসিক অসুস্থতা" ও "স্কিজোফ্রেনিয়া"য় ভুগছে। তিনি আরও বলেন বিনয় তার নিজের মাকে চিনতে পারেনি।
পবন গুপ্তা (২৫), মুকেশ সিং (৩২), বিনয় শর্মা (২৬) ও অক্ষয় কুমার সিং (৩১), এই চার অপরাধীর ৩ মার্চ সকাল ৬টায় ফাঁসি হবার কথা।
বিনয়ের ঘটনার পর প্রশ্ন উঠেছে, মৃত্যুদণ্ডাজ্ঞাপ্রাপ্ত আসামীর দণ্ড এরকম কারণে মুলতুবি হতে পারে কিনা। উত্তর হল- হ্যাঁ, পারে।
মৃত্যুদণ্ড মুলতুবি রাখার ব্যাপারে দিল্লি কারা আইন কী?
২০১৮ সালের দিল্লি কারা আইন স্বাস্থ্যের কারণে মৃত্যুদণ্ড মুলতুবির দুটি সংস্থান রয়েছে।
প্রথম নিয়মে বলা হয়েছে, অপরাধীর সাজা নির্দিষ্ট দিনে হবে না, "যদি উক্ত ব্যক্তি সাজা পাবার দিনে শারীরিক ভাবে সাজাগ্রহণে সক্ষম না থাকে", কিন্তু সেক্ষেত্রে সাজা মুলতুবির জন্য প্রয়োজনীয় শারীরিক অক্ষমতার বিষয়টি নির্দিষ্ট করে বলা হয়েছে, "অসুস্থতা অত্যন্ত গুরুতর ও সংকটজনক (পুরনো রোগ হলে চলবে না) হতে হবে।" এরকম ক্ষেত্রে, আইনে বলা রয়েছে, সুপারিনটেন্ড্যান্ট ওই মুহূর্তেই আইজির কাছে এধরনের ঘটনার বিস্তারিত রিপোর্ট পেশ করবেন, যার সঙ্গে থাকতে হবে বন্দির শারীরিক অক্ষমতার মাত্রা সম্পর্কে বিশেষজ্ঞের মত এবং বন্দি কবে সাজা গ্রহণে সক্ষম হতে পারবে তার সম্ভাব্য তারিখ দেওয়া গেলেও ভাল হয়।
দ্বিতীয়ত, উন্মাদনার ক্ষেত্রেও মৃত্যুদণ্ড মুলতুবি হতে পারে।
আইনে বলা রয়েছে, "যদি মৃত্যুদণ্ডের জন্য অপেক্ষারত কোনও বন্দির মধ্যে মানসিক অসুস্থতার চিহ্ন দেখা যায়, যা ছলনা নয়, বা তা ছলনা কিনা বোঝার জন্য পর্যবেক্ষণ প্রয়োজন, তাহলে তা তৎক্ষণাৎ আইজি কারার মাধ্যমে সরকারকে জানাতে হবে।"
আইনে আরও বলা হয়েছে, সরকার এ ধরনের মামলায় বিশেষ মেডিক্যাল বোর্ড নিয়োগ করবে, যার উদ্দেশ্য হবে মৃত্যুদণ্ডাজ্ঞাপ্রাপ্তের মানসিক পরিস্থিতি পরীক্ষা করা। "তাকে জেল হাসপাতাল বা নিকটতম মানসিক হাসপাতাল বা সমতুল কোনও প্রতিষ্ঠানে মনোশ্চিকিৎসকের পর্যবেক্ষণে বা সিভিল সার্জনের কাছে অন্তত ১০ দিন পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে।"
নিয়মে আরও বলা হয়েছে, সুপারিনটেনড্যান্ট ও মেডিক্যাল অফিসারকে বন্দির শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণের জন্য সেরোলজিক্যাল পরীক্ষা সহ সমস্ত সুযোগসুবিধা দিতে হবে এবং এই পর্যবেক্ষণ ঘটবে "মৃত্যুদণ্ডাজ্ঞাপ্রাপ্ত ব্যক্তির অজ্ঞাতসারে"।
এই আইনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, মৃত্যুদণ্ডাজ্ঞাপ্রাপ্তের মানসিক অবস্থার বাস্তব খতিয়ান নিতে হবে হয় রেকর্ড থেকে নয়ত গ্রেফতারকারী অফিসারের মত কোনও প্রত্যক্ষদর্শীর কাছ থেকে। আইনে বলা হয়েছে, মৃত্যুদণ্ডাজ্ঞাপ্রাপ্ত বন্দির অপরাধের সময়ের এবং তার ঠিক পরবর্তী সময়ের মানসিক পরিস্থিতি সম্পর্কিত রিপোর্ট পরিজনসহ প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করতে হবে।
অন্তিম পর্যায়ে, বিশেষজ্ঞ বা সিভিল সার্জন সমস্ত নথি মেডিক্যাল বোর্ডের সামনে পেশ করবেন এবং বোর্ডের সভাপতি মেডিক্যাল বোর্ডের কার্যবিবরণী ও মতামত স্বরাষ্ট্র দফতরের সচিবের কাছে পাঠাবেন।