Advertisment

দিল্লি বিধানসভা ভোট: কে কোথায় দাঁড়িয়ে

আগের বারের মত আপ কি ফের মসনদ দখল করবে নিরঙ্কুশ? বিজেপি কি সিএএ নিয়ে তাদের দাঁত ফোটাতে পারবে দেশের রাজধানীর বিধানসভায়? কংগ্রেসেরই বা কী হাল?

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Delhi Election

ছবি- প্রবীণ খান্না (ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস)

দিল্লির ভোটের দিনক্ষণ ঘোষিত হয়ে গেছে। আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি নয়া বিধানসভার জন্য ভোটগ্রহণ হবে দেশের রাজধানীতে। গণনা ১১ ফেব্রুয়ারি। ভোটারদের জন্য বেশ কিছু প্রত্যক্ষ সুযোগসুবিধে দিয়ে আম আদমি পার্টি আরও একবার ক্ষমতায় আসার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। বিজেপি জানিয়ে দিয়েছে, তারা ভোট লড়বে নরেন্দ্র মোদীর নামে, তাদের ইস্যু হবে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন। কংগ্রেস সবচেয়ে অপ্রস্তুত, তাদের প্রচারের লাইন কী হবে, সে ব্যাপারে এখনও কোনও দিকনির্দেশ তাদের তরফ থেকে এসে পৌঁছয়নি।

Advertisment

এক মাসের সামান্য কিছু বেশি বাকি ভোটের। এ পরিস্থিতিতে তিন দল কে কোথায় দাঁড়িয়ে একবার দেখে নেওয়া যাক।

দিল্লি বিধানসভা ভোট ২০২০: আপ

২০১৫ সালের ভোটে অরবিন্দ কেজরিওয়াল ক্ষমতায় ফিরেছিলেন ব্যাপকভাবে। ৭০টির মধ্যে ৬৭ট আসনে জিতেছিল আপ। ভোট পেয়েছিল ৫৪.৩ শতাংশ।

২০১৩ সালে ত্রিশঙ্কু বিধানসভা গঠিত হয়েছিল, আপ জিতেছিল ২৮টি আসনে। কংগ্রেসের ৮ জন বিধায়কের সমর্থন নিয়ে সরকার গড়েছিলেন কেজরিওয়াল। তার আগে অবশ্য তাদের জোটসঙ্গী শিরোমণি অকালি দল সহ ৩২টি আসন পাওয়া বিজেপি সরকার গঠনের আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করেছিল। কেজরিওয়াল ৪৯ দিন পর পদত্যাগ করেন। দিল্লিতে রাষ্ট্রপতি শাসন ঘোষিত হয়।

দ্বিতীয় আপ সরকার প্রবল জনসমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করলেও, নিজেদের লড়াকু ইমেজ ধরে রাখার ব্যাপারেই মন দিয়েছে তারা। বিজেপি তো বটেই, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধেও বিভিন্ন ইস্যুতে আপ সে ইমেজ বজায় রেখেছে।

আপ যে অনুরণন জাগাবে বলে প্রত্যাশা করা হয়েছিল তা পূর্ণ হয়নি। এবং সম্ভবত তা কিছু ক্ষেত্রে তাদের বিরুদ্ধেও গিয়েছে।



কেজরিওয়াল সম্ভবত একটা জিনিস শিখেছেন- মোদীর বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত আক্রমণ বন্ধ করেছেন তিনি। গত ৬ জানুয়ারি, সোমবার নির্বাচন কমিশন ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণার কয়েক মিনিটের মধ্যেই তিনি টুইটারে পোস্ট করে বলেন, "এ নির্বাচন হবে কাজের নিরিখে।"

সেন্টার ফর দ্য স্টাডি অফ ডেভেলপিং সোসাইটিজ (সিএসডিএস)-এর লোকনীতি প্রোগ্রাম গত ২২ নভেম্বর থেকে ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত একটি সার্ভে করে দিল্লির ২২৯৮ জন ভোটারের মধ্যে। তাতে দেখা যাচ্ছে আপের প্রতি সমর্থন বেশ ভারী মাত্রাতেই রয়েছে।

সার্ভেতে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে চার পঞ্চমাংশ জানিয়েছেন আপ সরকারের কাজকর্মে হয় তাঁরা "পুরোপুরি সন্তুষ্ট" (৫৩ শতাংশ), অথবা "কিছুটা হলেও সন্তুষ্ট" (৩৩ শতাংশ)।

১০ জনের মধ্যে ৯ জন ভোটার বলেছেন, তাঁরা কেজরিওয়ালকে পছন্দ করেন। ৬৬ শতাংশ জানিয়েছেন তাঁরা কেজরিওয়ালকে "অত্যন্ত" পছন্দ করেন। সার্ভেতে দেখা যাচ্ছে কেজরিওয়াল সামান্য হলেও মোদীর থেকে বেশি পছন্দের হয়ে উঠতে পেরেছেন। ৭৯ শতাংশ জানিয়েছেন, তাঁরা মোদীকে পছন্দ করেন, ৪৯ শতাংশ জানিয়েছেন তাঁরা মোদীকে "অত্যন্ত" পছন্দ করেন।

তবে এই ভোটারদের মধ্যে যখন মোদী ও কেজরিওয়ালকে লড়িয়ে দেওয়া হয়, তখন তাঁরা বেশি করে কেজরির পক্ষে দাঁড়িয়েছেন।

প্রশ্ন ছিল, "কাকে বেশি পছন্দ করেন, মোদী না কেজরিওয়াল?" ৩২ শতাংশ মোদীর পক্ষে থেকেছেন। ৪২ শতাংশ বলেছেন কেজরিওয়াল তাঁদের বেশি পছন্দের।

দিল্লি বিধানসভা ভোট ২০২০: বিজেপি

দিল্লিতে জয়ের জন্য বিজেপি যে মরিয়া, তা শুধু এ কারণে নয় যে এটা জাতীয় রাজধানী।

২০১৯ সালে লোকসভা ভোটে ব্যাপক সাফল্যের পর তারা হরিয়ানা ও মহারাষ্ট্রে বিপদ সংকেত টের পেয়েছে, গত মাসেই ঝাড়খণ্ডে ব্যাপক ধাক্কা খেয়েছে তারা। এমন সময়ে দিল্লি জয় তাদের নৈতিক ভাবে উদ্বুদ্ধ করবে।

মোদীর সুনাম মূলত অক্ষুণ্ণই রয়েছে- কিন্তু বিজেপির কাছে চ্যালেঞ্জ হল সে সুনামকে ভোটে পরিণত করা। দিল্লি অন্য রাজ্যের মত নয়। বিজেপিকে এ ক্ষেত্রে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের ব্যক্তিত্বের সঙ্গে লড়ে যেতে হবে - রাহুল গান্ধী ও কংগ্রেসের উপর ধরাবাঁধা আক্রমণ এখানে খুব প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠবে না।

২০১৪ ও ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে দিল্লি থেকে ব্যাপক সমর্থন পেয়েছিলেন মোদী। দুবারই দিল্লির সাতটি আসনই দখলে রেখেছিল কেন্দ্র। দলের ভোট শেয়ার ২০১৫ সালের বিধানসভা ভোটে ছিল ৩২.১৯ শতাংশ। মে মাসের লোকসভা ভোটে তা গিয়ে দাঁড়ায় ৫৬.৮৬ শতাংশে।

নয়া নাগরিকত্ব আইন বিরোধী বিক্ষোভের কেন্দ্র হয়ে থেকেছে দিল্লি শহর। বিজেপি আশা করছে এই উত্তুঙ্গ পরিস্থিতির ফায়দা তারা লুটতে পারবে, সম্ভাব্য এক মেরুকরণ পরিস্থিতি তৈরি করতে পারবে, এমনটাও তাদের আশা।

কিন্তু বিজেপি এখন আভ্যন্তরীণ সমস্যায় ভুগছে।

গতবার বিজেপির একটি মুখ্যমন্ত্রীর মুখ ছিল। ২০১৫ সালে কিরণ বেদীকে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে প্রজেক্ট করেছিল তারা। সে ঘটনা তাদের পক্ষে মারাত্মক ভুল বলে প্রমাণিত হয়েছে।

কার্যত নেতৃত্ব দেবার মত বহু মুখ এখন বিজেপিতে। বিজয় গোয়েল, মনোজ তেওয়ারি, মীনাক্ষি লেখি, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হরদীপ সিং পুরী ও হর্ষ বর্ধনরা সুযোগের আশায় রয়েছেন। এ তালিকায় নবতম সংযোজন পশ্চিম দিল্লির সাংসদ পরবেশ ভার্মা।

দিল্লি বিধানসভা ভোট ২০২০: কংগ্রেস

টানা ১৫ বছর দিল্লিতে রাজত্ব চালাবার পর কংগ্রেস ক্ষমতাচ্যুত হয়। এখনও তারা যুঝছে।

২০১৫ সালে তাদের ভোট শেয়ার ছিল ৯.৬৫ শতাংশ। লোকসভা ভোটের সময়ে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২২.৬৩ শতাংশে, যা আপের ১৮.২ শতাংশের চেয়ে বেশি। কিন্তু সে ছিল জাতীয় পরিপ্রেক্ষিত। এ পরিস্থিতি ভিন্ন।

দিল্লিতে শতাব্দীপ্রাচীন এ দলের কোনও জনপ্রিয় মুখ নেই। ২০১৩ সালে পরাজয়ের পর থেকে ক্যারিশম্যাটিক ও জনপ্রিয় শীলা দীক্ষিতও মোড় ঘোরাতে পারেননি। আর এখন তো তিনি প্রয়াত।

কংগ্রেসের এক মাত্র আশা সংখ্যালঘুদের মধ্যেকার অসন্তোষকে কাজে লাগিয়ে মুসলিম অধ্যুষিত আসনগুলিতে সুবিধা পাওয়া। কীর্তি আজাদকে এনে তারা পূর্বাঞ্চলী জনগণের হৃদয় জয়ের আশা করছে।

অন্যদিকে বিজেপি অবশ্যই চাইবে কংগ্রেস একটু ভাল ফল করুক। যদি তেমন হয়, তাহলে তার মূল্য চোকাতে হবে আপকে। আর আপের ফল খারাপ হলে বিজেপির ফল এমনিতেই ভাল হয়ে যাবে।

AAP CONGRESS bjp
Advertisment