মণিপুরের কুকি-জোমি উপজাতি এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ মেইতেই সম্প্রদায়ের মধ্যে সংঘর্ষে ৭০ জনেরও বেশি নিহত হওয়ার কয়েক দিন পরে, রাজ্যের ১০ জন কুকি-জোমি বিধায়ক 'ভারতীয় সংবিধানের অধীনে একটি পৃথক প্রশাসন' দাবি করে বলেছেন, 'আমাদের লোকেরা মণিপুরের অধীনে আর থাকতে পারে না… এবং মেইতেইসদের মধ্যে বেঁচে থাকা পুনরায় মৃত্যুর মতই ভালো…।'
শাহর সঙ্গে মণিপুরের রাজার বৈঠক
এন বীরেন সিং সরকারের দুই মন্ত্রী-সহ আদিবাসী আইনপ্রণেতারা সোমবারই দিল্লিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তার একদিন আগে শাহ মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী, চার প্রতিমন্ত্রী (সকলেই মেইতেই) এবং মণিপুরের মহারাজা তথা রাজ্যসভার সদস্য লেশেম্বা সানাজাওবার সঙ্গেও বৈঠক করেছেন। বৈঠকে বীরেন সিং, 'মণিপুরের আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষার' ওপর জোর দিয়েছেন। কিন্তু, জাতিগত সংঘর্ষ এক পৃথক মণিপুর প্রশাসনের দাবি পুনরায় তুলে ধরেছে। এই দাবি কুকি-জোমি বিদ্রোহী গোষ্ঠী এবং মণিপুর সরকারের মধ্যে শান্তি আলোচনার পর স্থবির হয়ে পড়েছিল।
কুকিদের ভূমি
একটি পৃথক 'কুকিল্যান্ড'-এর দাবি প্রথম উঠেছিল ১৯৮০-এর দশকের শেষের দিকে। সেই সময় কুকি-জোমি বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে প্রথম এবং বৃহত্তম সংগঠন, কুকি ন্যাশনাল অর্গানাইজেশন (কেএনও) তৈরি হয়েছিল। তারপর থেকে এই দাবি ক্রমশ সামনে এসেছে। ২০১২ সালে যখন বোঝা যায় যে পৃথক তেলেঙ্গানা রাজ্যের দাবি মেনে নেওয়া হবে, তখনই কুকিল্যান্ডের দাবি ক্রমশ বাড়তে থাকে। সেই সময় কুকি স্টেট ডিমান্ড কমিটি (কেএসডিসি) নামে এক সংগঠন কুকিল্যান্ডের জন্য আন্দোলনের ঘোষণা করেছিল। কেএসডিসি এর আগেও মাঝেমধ্যে ধর্মঘট এবং অর্থনৈতিক বন্ধের ডাক দিয়েছিল। মহাসড়ক অবরোধ করেছিল এবং পণ্যগুলো মণিপুরে প্রবেশ করতে দেয়নি। কিন্তু, তেলেঙ্গানার দাবি ওঠার পর তাদের আন্দোলন আরও জোরদার হয়।
আরও পড়ুন- জ্বলছে মণিপুর! চরম আশঙ্কায় বাসিন্দারা-প্রশাসন, কেন?
কুকিদের দাবি
কেএসডিসি দাবি করেছে যে ১২,৯৫৮ বর্গ কিলোমিটার, যার মধ্যে রয়েছে মণিপুরের ২২,০০০ বর্গ কিমি এলাকার ৬০%-এরও বেশি অঞ্চল, সেসব অঞ্চল 'কুকিদের দিতে হবে এবং কুকিল্যান্ড' তৈরি করে দিতে হবে। 'কুকিল্যান্ড' অঞ্চলের মধ্যে রয়েছে সদর পাহাড় (যা তিন দিক দিয়ে ইম্ফল উপত্যকাকে ঘিরে আছে), এছাড়াও রয়েছে কুকি-অধ্যুষিত চুরাচাঁদপুর জেলা, চান্দেল। যেখানে কুকি এবং নাগারা মিলিতভাবে রয়েছে। এমনকী নাগা-অধ্যুষিত তামেংলং এবং উখরুলের কিছু অংশও দাবি করেছে কেএসডিসি।